রংপুরে গর্ভের সন্তানের পিতৃপরিচয় দাবি করায় নৃশংসভাবে খুন

নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা

রংপুরের পীরগঞ্জে একজন গর্ভধারিনী মা তার গর্ভের সন্তানের পিতৃপরিচায় দাবি করায় পরিকল্পিতভাবে ওই গর্ভধারিনী মাকে ও ভূমিষ্ঠ হওয়ার নবজাতক কন্যাকে খুন করা হয়। ওই ঘটনায় মূলহোতা মাসুদ মিয়াকে (৩৫) সোমবার দিবাগত রাতে গাজীপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়।

র‍্যাব জানায়, আশুলিয়ার একটি গার্মেন্টসে পরিচয় হয় ভুক্তভোগী নারী ও মাসুদ মিয়ার সঙ্গে। বিয়ের আশ্বাসে তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলে। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী গর্ভধারিনী মা তার গর্ভে থাকা সন্তানের পিতৃপরিচয়ের দাবিতে রংপুরের পীরগঞ্জে মাসুদ মিয়ার বাসায় গেলে পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করে।

মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) সকালে রাজধানী কারওয়ানবাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, গত ১৫ জুলাই রংপুরের পীরগঞ্জ থানাধীন খালাশপীর এলাকায় আখ ক্ষেতের ভিতর থেকে অজ্ঞাতনামা (৩০) মহিলা ও সদ্য প্রসূত কন্যা শিশুর লাশ উদ্ধার করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ওই ঘটনায় পীরগঞ্জ থানার পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা ও লাশ গুমের মামলা করেন। যার নম্বর নং-২৬। নৃশংস ওই হত্যাকান্ডটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। হত্যাকান্ডের প্রকৃত ঘটনার রহস্য উন্মোচন ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য র‌্যাব গোয়েন্দা নজদারী বৃদ্ধি করে।

আল মঈন বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় গত সোমবার রাতে গাজীপুরের গাছা থানাধীন তারগাছ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ওই হত্যাকান্ডের মূলহোতা ও প্রধান আসামি মাসুদ মিয়াকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত মাসুদ হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার ও সংশ্লিষ্টার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গত ১০ বছর ধরে আশুলিয়ার একটি গার্মেন্টসের ফ্যাক্টরিতে অপারেটর হিসেবে চাকুরি করতেন মাসুদ। ২০২২ সালের ফ্রেরুয়ারি মাসে উক্ত গার্মেন্টসে ভিকটিম শান্তনা চাকরিতে যোগদান করে। একই কোম্পানীতে চাকুরীর সুবাদে ভিকটিমের সাথে তার পরিচয় হয়। পরিচয়ের এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে ওঠে। গ্রেফতারকৃত মাসুদের তথ্য মতে ভিকটিম শান্তনা বিবাহিতা এবং স্বামী কর্তৃক তালাক প্রাপ্তা। গ্রেফতারকৃত মাসুদ ও ভিকটিমের প্রেমের সর্ম্পক গভীর হওয়ায় স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে আশুলিয়া এলাকায় ১টি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করে। এক পর্যায়ে ভিকটিম অন্তঃস্বত্তা হয়। ভিকটিম শান্তনা মাসুদকে প্রতিনিয়ত বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করলে তাদের মাঝে ঝগড়া বিবাদের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত মাসুদ তার বাড়িতে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে বলে ভিকটিম শান্তনা’কে ঢাকায় রেখে কিছু দিনের জন্য তার গ্রামের বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জে চলে যায়। তবে গ্রেফতারকৃত মাসুদের পূর্বের বিবাহের বিষয়টি সম্পর্কে ভিকটিম শান্তনা জানতেন না।

কমান্ডার মঈন বলেন, গত ১২ জুলাই ভিকটিম শান্তনা গ্রেফতারকৃত মাসুদের সন্ধানের উদ্দেশ্যে তার গ্রামের বাড়ি রংপুরে যায়। সেখানে গিয়ে ভিকটিম শান্তনা জানতে পারে মাসুদ বিবাহিত ও তার পুত্র সন্তান আছে। সেখানে ভিকটিম শান্তনা তার গর্ভজাত সন্তানের স্বীকৃতি এবং তাকে বিবাহ করার জন্য মাসুদকে চাপ প্রয়োগ করে। তখন মাসুদের প্রথম স্ত্রী ফরিদা তা মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। এক পর্যায়ে গ্রেফতারকৃত মাসুদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য ভিকটিম শান্তনাকে বিবাহ ও কাবিনের প্রতিশ্রæতি দেয়। পরে ঢাকায় গিয়ে ঘর ভাড়া নিয়ে পূর্বের ন্যায় বসবাস শুরু করবে বলে আশ^স্ত করে। পরিবর্তীতে গত ১৩ জুলাই গ্রেফতারকৃত মাসুদের খালা ভিকটিম শান্তনা’কে রংপুরের পীরগঞ্জ হতে ঢাকার উদ্দেশ্যে গাড়ীতে উঠিয়ে দেয়। এক পর্যায়ে গ্রেফতারকৃত মাসুদ ভিকটিম শান্তনার সাথে মোবাইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করে গাড়ি থেকে নেমে তার বাড়িতে ফেরত আসার জন্য বলে।

মঈন বলেন, ভিকটিম শান্তনা গাড়ি থেকে নেমে বাস স্ট্যান্ড থেকে গ্রেফতারকৃত মাসুদের বাড়িতে যাওয়ার পথিমধ্যে খালাশপীর নামক স্থানে একটি বড় আখ ক্ষেতের নিকট আসলে গ্রেফতারকৃত মাসুদ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য আখ ক্ষেতে যায় ও কৌশলে ভিকটিম শান্তনাকেও আখ খেতে নিয়ে যায়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ভিকটিম শান্তনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার পেছন থেকে ওড়না দিয়ে গলায় পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে করে এবং গলায় ও পেটে পা দিয়ে আঘাত করে। ফলে ভিকটিম শান্তনার গর্ভজাত সন্তান ভুমিষ্ঠ হয় এবং উভয়ে ঘটনা স্থলেই মৃত্যু বরণ করে।গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

//এস//