নাজমুল হুদা বীরবিক্রমকে হত্যার ৪৮ বছর পর মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা

১৯৭৫ সালের সাত নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যার দিন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা বীর বিক্রমকে হত্যার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় বুধবার (১০ মে) মামলাটি দায়ের করেছেন তার কন্যা নাহিদ ইজাহার খান এমপি।

মামলায় নাম উল্লেখ করা একমাত্র জীবিত আসামি অবসরপ্রাপ্ত মেজর মো. আব্দুল জলিলকে। এছাড়া অজ্ঞাত আরও বিশ পঁচিশজনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, ১৯৭৫ সালের সাত নভেম্বর ভোর চারটা থেক সকাল আটটার মধ্যবর্তী কোন এক সময় মেজর জলিলের নেতৃত্বে তার সহযোগীরা কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদাকে হত্যা করে।

মামলায় নাহিদ ইজাহার খান অভিযোগ করেছেন, তখনকার সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং জাসদের নেতা অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আবু তাহেরের নির্দেশে ১০ ইস্ট বেঙ্গলের কর্মকর্তা মেজর মো. আসাদউজ্জামান ও মেজর মো. আব্দুল জলিলসহ অন্যান্য কর্মকর্তা, জেসিও এবং অন্যান্য সৈনিকরা মিলে সংসদ ভবনের সামনে আমার বাবাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে গুলি করার পর বেয়নেট চার্জ করা হয়।

মামলার বিষয়ে নাহিদ ইজাহার খান বলেন, ‘আমাদের কাছে মনে হয়েছে, বাবা হত্যার বিচারের উপযুক্ত সময় এখনই। তাই মামলা করেছি। এখন সাতই নভেম্বরের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের সম্পর্কে সবাই জানতে পারবে। আমরা সুবিচার পাবো বলে আশা করছি।

তিনি বলেন, জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। এখন মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাদের হত্যাকারীদেরও বিচার হবে বলে আমরা আশাবাদী।

এদের মধ্যে মেজর মো. আসাদউজ্জামান মারা গেছেন এবং অবসরপ্রাপ্ত মেজর মো. আব্দুল জলিল জীবিত আছেন বলে জানা গেছে।

নাহিদ ইজাহার খান বলেন, আসামিদের মধ্যে কে কোথায় আছে তা এখন খুঁজে বের করবেন তদন্ত কর্মকর্তা।

মুক্তিযুদ্ধে আট নম্বর সেক্টরের অধীনে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন শহীদ কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা।১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যার দিন; মেজর জেনারেল খালেদ মোশারফ, কর্নেল এটিএম হায়দার ও কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা খেতাবপ্রাপ্ত তিনজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে চাকরির সময় ১৯৬৮ সালের ৩ জানুয়ারি তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা অভিযুক্ত হিসেবে আরও অনেকের সঙ্গে আটক হন খন্দকার নাজমুল হুদা। ১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে বেকসুর খালাস পান তিনি। কিন্তু সেনাবাহিনী থেকে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য বাংলাদেশ সরকার খন্দকার নাজমুল হুদাকে বীর বিক্রম খেতাব দেয়। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ২০২২ সালে মরনোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন।

এর আগে বাবা হত্যার বিচার চেয়ে সংসদে আবেগময় বক্তব্য দেন খন্দকার নাজমুল হুদার মেয়ে নাহিদ ইজাহার খান।

বক্তব্যে তিনি তার বাবাকে হত্যার সঠিক তদন্তের পাশাপাশি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, তিন নভেম্বর ও সাত নভেম্বরসহ এর পরবর্তী সব রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের তদন্ত দাবি করেন।

সিএনএস ডটকম//এসএল//