বাসায় আরবি পড়াতে গিয়ে মৌখিক বিয়ে, হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা

গাজীপুরে আরবি গৃহশিক্ষকের কাছে নৃশংসভাবে কুপিয়ে কলেজ ছাত্রীকে হত্যা এবং নিহতের মা ও ২ বোনকে মারাত্মকভাবে জখম করার ঘটনায় প্রধান ও একমাত্র আসামি মো. সাইদুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। বুধবার রাতে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

র‍্যাব জানায়, গ্রেফতারকৃত সাইদুল চট্টগ্রামের একটি মাদ্রাসা থেকে দাওরা পাশ করে। সে গাজীপুরের একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করার পাশাপাশি স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামতি করত। এলাকার বিভিন্ন বাসায় গিয়ে প্রাইভেট পড়াত। সাইদুল ভিকটিমের ছোট বোনদেরও আরবি পড়াতেন।

বৃহস্পতিবার (১১ মে) দুপুরে কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটি আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, গত ০৮ মে রাতে গাজীপুরের সালনা এলাকায় গৃহশিক্ষক কর্তৃক কলেজ ছাত্রীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা ও নিহতের মা ও ২ বোনকে কুপিয়ে আহত কারার ঘটনায় মামলা করলে হয়। উক্ত ঘটনায় ভিকটিমের পিতা বাদী হয়ে গাজীপুর সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-১৪।

এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর এলাকা থেকে চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের ঘটনায় সাইদুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত বর্ণিত হত্যাকান্ডের বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।

গ্রেফতার সাইদুলের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে আল মঈন বলেন, গত ২০২০ সালে করোনাকালীন সময়ে ভিকটিমের পরিবারের সবাইকে আরবি পড়ানোর জন্য গৃহশিক্ষক হিসেবে ভিকটিমের বাবা তাকে নিয়োগ করে। আরবি পড়ানোর সুবাদে সে প্রতিনিয়ত ভিকটিমের বাসায় যাওয়া-আসা করত। একপর্যায়ে ভিকটিমের পরিবারের সাথে তার সু-সম্পর্ক তৈরি হয়। বিভিন্ন সময় গ্রেফতারকৃত ভিকটিমের প্রতি কু-নজর দেয় এবং একপর্যায়ে ভিকটিমকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। ৫-৬ মাস আরবি শিখানোর পর পড়ানো বন্ধ করে দেয়।পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত সাইদুল প্রতারণামূলকভাবে গত ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে ভিকটিমকে মৌখিকভাবে বিবাহ করে। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত সাইদুল বিবাহের বিষয়টিকে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ভিকটিম ও তার পরিবারকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। ভিকটিমের পরিবার গ্রেফতারকৃতের অসৎ উদ্দেশ্যের বিষয়টি জানতে পেরে সাইদুল এর সাথে ভিকটিমের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে ভিকটিম গাজীপুর সদর থানায় বিভিন্ন সময়ে তাকে উত্যক্ত করার বিষয়ে একটি অভিযোগ দাখিল করেন। যার প্রেক্ষিতে গ্রেফতারকৃত সাইদুল কিছুদিন ভিকটিমকে উত্যক্ত করা হতে বিরত থাকে। কিন্তু গত ২ মাস যাবৎ ভিকটিমের কলেজে এবং বাসার বাহিরে যাওয়া-আসার পথে পুনরায় তাকে উত্যক্ত করতে থাকে এবং প্রস্তাবে রাজি না হলে ভিকটিমকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। একপর্যায়ে গ্রেফতারকৃত জানতে পারে যে ভিকটিমের পরিবার ভিকটিমকে উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশের বাহিরে প্রেরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিষয়টি গ্রেফতারকৃত সাইদুল কোনভাবেই মেনে নিতে না পেরে ভিকটিম ও তার পরিবারের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে ভিকটিমকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

তিনি আরও জানায়, ভিকটিমকে হত্যার পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে গত ৭ মে স্থানীয় বাজারে কামারের দোকানে ৬৫০ টাকা দিয়ে গরু জবাই করার একটি ছুরি তৈরি করতে দেয়। পর দিন ৮ মে সন্ধ্যায় ছুরি সংগ্রহ করে ভিকটিমের বাসায় গিয়ে তার রুমে ঢুকে ধারালো ছুরি দিয়ে মাথায়, গলায়, হাতে এবং পায়ে উপর্যুপুরি ছুরিকাঘাত করে। এ সময় ভিকটিমের চিৎকারে তার মা ও দুই বোন দৌঁড়ে তার ঘরে গিয়ে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে গ্রেফতারকৃত ছুরি দিয়ে তাদেরকেও এলোপাথাড়িভাবে কুপিয় জখম করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। তাদের চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এসে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ভিকটিমকে মৃত ঘোষণা করেন এবং ভিকটিমের মা ও ছোট ২ বোনের অবস্থা আশংকাজনক হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য কর্তব্যরত ডাক্তার তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। পরবর্তীতে হাসপাতালে নেয়ার পথিমধ্যে তাদের শারিরিক অবস্থার আরো অবনতি হলে তাদেরকে উত্তরার একটি হাপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে ভিকটিমের মা আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন বলে জানা যায়।

ভিকটিমের পরিবারের সূত্রে জানা যায়, সে ২০২০ সালে জয়দেবপুরের একটি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ হতে এইচএসসি পাস করে। পরবর্তীতে গাজীপুরের চৌরাস্তার একটি কলেজে স্মাতক দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যায়নরত ছিল। পড়ালেখার পাশাপাশি স্থানীয় একটি বিউটি প্রোডাক্টস অনলাইন শপে চাকুরী করত। এছাড়াও ভিকটিম উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে দেশের বাহিরে যাওয়ার জন্য কিছুদিন পূর্বে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করছিল এবং ভিসাসহ আনুসাঙ্গিক নথিপত্র প্রস্তুত করছিল।

গ্রেফতারকৃতের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

সিএনএস ডটকম//এসএল//