শাহজালালে ২৯ কোটি টাকার সোনা উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা

রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পৃথক দুটি অভিযানে ২৮ কেজির বেশি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়েছে। তার মধ্যে একটিতে বিমানের সিটের নিচ থেকে দাবিদার বিহীন অবস্থায় প্রায় ২৫ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়েছে।

অপর অভিযানে ৩.৩৩ (তিন দশমিক তিন তিন) কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তিন জনকে আটক করা হয়েছে।

উদ্ধারকৃত স্বর্ণের আনুমানিক বাজারমূল্য ২৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

সোমবার (১৭ জুলাই) দুপুরে শাহজালাল বিমানবন্দরের কাস্টমস মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) হতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকা কাস্টম হাউস এবং এনএসআই কর্মকর্তাদের একটি দল ফ্লাইট নম্বর ইকে-৫৮৪ এ অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানের এক পর্যায়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও ভদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও অভিযানে অংশগ্রহণ করেন।

অভিযান পরিচালনাকালে প্রথমে ওই এয়ারক্রাফটের ইকনোমি ক্লাস এবং বিজনেস ক্লাসের যাত্রীদের সিট তল্লাশি করা হয়। তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনাকালে ইকোনোমি ক্লাসের সিট নম্বর ৩৮২-৮ এবং ৩৮-এফ-৯ সিটের নিচে ১৬টি নীল স্কচটেপে মোড়ানো ডিম্বাকৃতির বস্তু দেখতে পান অভিযানিক দলের সদস্যরা। ধারণা করা হয় যে, বস্তুগুলোতে স্বর্ণ রয়েছে এবং এয়ারক্রাফটে এ ধরনের আরও বস্তু থাকতে পারে।

এমন সন্দেহে ফ্লাইটটির সকল সিটের নিচে তল্লাশি চালানো হয়। আরও বেশ কিছু সিটের নিচে সমরূপ বস্তু পাওয়া যায়। পরবর্তীতে ক্রাফটির বাথরুম ও অন্যান্য স্থানেও তল্লাশি চালানো হয়। পরে, এর সিট নম্বর- ৩৮-ই হতে ৮টি, ৩৮-এফ হতে ৯টি, ৪০-ই হতে ১২টি, ৪২-ডি হতে ৬টি, ৪২- ই হতে ২টি, ৪২-এফ হতে ৮টি, ৪২-জি হতে ৮টি, ২৮-বি হতে ২টিসহ সর্বমোট ৫৫টি এবং সমান্তরালে ২৭ ডি- হতে ১১টি, ২৭-ই হতে ১২টি, ২৭-এফ হতে ১০টি ও ২৭ জি- হতে ১০টি সহ সর্বমোট ৪৩ (তেতাল্লিশ) পিস স্বর্ণ অর্থাৎ সর্বমোট ৯৮ টি নীল স্কচটেপে মোড়ানো ডিম্বাকৃতি বস্তু পাওয়া যায়।

কর্মকর্তারা ধারণা করেন, এতে কাচা স্বর্ণের ভেজা পেস্ট রয়েছে। যার ওজন পাতলা পলিথিন মোড়ানো অবস্থায় ২৭ কেজি ৬০০ গ্রাম হয়। পরে, জব্দকৃত কাচা স্বর্ণের ভেজা পেস্ট কষ্টিপাথর ও অ্যাসিড দ্বারা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় আটক বস্তু স্বর্ণ বলে নিশ্চিত হন তারা।

তবে, স্বর্ণ পরীক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান নন্দী জুয়েলার্সর বিশেষজ্ঞ মতামত অনুযায়ী, কাচা স্বর্ণের ভেজা পেস্টের ক্ষেত্রে প্রতি ১০০ গ্রামে ৯ দশমিক ৫০ গ্রাম হতে ১০ গ্রাম গ্রাম তরল বাষ্পীভূত হওয়ায় জব্দকৃত স্বর্ণের ওজন হ্রাস পেতে পারে। বিশেষজ্ঞ মতামত অনুযায়ী এক্ষেত্রে তরল বাষ্পীভূত হওয়ার পর জব্দকৃত স্বর্ণের ওজন দাঁড়াবে আনুমানিক ২৫ পঁচিশ কেজি যার আনুমানিক মূল্য ২৫ কোটি টাকা।

তবে, তল্লাশি অভিযান পরিচালনাকালে জব্দকৃত স্বর্ণ পরিবহণের সঙ্গে আপাতত কোনো যাত্রীর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে, একই দিনে (১৬ জুলাই) ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনারের নিকট হতে প্রাপ্ত গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আনুমানিক সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে দুবাই হতে আগত ফ্লাইট নং ইকে-৫৮৬-এ কাস্টম হাউসের প্রিভেন্টিভ টিমের কর্মকর্তারা বোর্ডিং ব্রিজে অবস্থান নেন। এ সময় ওই ফ্লাইটের তিন জন যাত্রী যথাক্রমে ১. মশিউর রহমান রুবেল ২. জাহাঙ্গীর আলম, ৩. আকবর হোসেনকে এসকট করে বোর্ডিং ব্রিজ হতে গ্রিন চ্যানেলে নিয়ে এসে আর্চওয়ে করা হলে তাদের শরীরে ধাতব পদার্থের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।

অধিকতর নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাদেরকে এক্সরে করানো হলে তাদের রেকটামে ডিম্বাকৃতির ধাতব পদার্থ আছে বলে নিশ্চিত হওয়া যায়। বিমানবন্দরে সংস্থার উপস্থিতিতে যাত্রীদের নিকট হতে ৩ দশমিক ৩৩ কেজি স্বর্ণের পেস্ট, ৩৪৮ গ্রাম ওজনের ৩টি স্বর্ণের বার এবং ৩০০ গ্রাম স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয় যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

তাদেরবিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করে বিমানবন্দর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।

//এস//