নিউজ ডেস্ক
রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
বুধবার (১২ নভেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিজিবির সদর দপ্তরের গণসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম।
তিনি বলেন, সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীতে মোতায়েন করা হয়েছে ১২ প্লাটুন বিজিবি। সকাল থেকে তারা মাঠে তৎপর রয়েছে। যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে কাজ করছে বিজিবি সদস্যরা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ ঘোষিত ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি ঘিরে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে সরকার। অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা হলে ন্যূনতম ছাড় না দেওয়ার মনোভাব নিয়ে সাজানো হচ্ছে নিরাপত্তা বলয়। এর অংশ হিসেবে রাজধানী ঢাকার ভেতর ও প্রবেশপথগুলোতে আজ বুধবার থেকেই কড়া নজরদারি শুরু হচ্ছে।
সূত্রমতে, বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) প্রবেশপথগুলোতে যে কোনো ধরনের জমায়েত ঠেকাতে কাউকে দাঁড়াতেই দেওয়া হবে না।
এদিকে, গত কয়েকদিন ধরেই রাজধানী ঢাকা ও আশেপাশের এলাকায় ঝটিকা মিছিল, হাতবোমা বা ককটেলের বিস্ফোরণ এবং যানবাহনে আগুন দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে। তবে, পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ১৩ নভেম্বরের ‘কথিত’ ওই কর্মসূচি ঘিরে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, ভয়েরও কারণ নেই। যে কোনো ধরনের অরাজকতা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শক্ত অবস্থানে রয়েছে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে। ‘সন্ত্রাসী’দের কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। এই কর্মসূচি ঘিরে অরাজকতা ঠেকাতে সন্দেহভাজন ব্যক্তি দেখলেই আইনের আওতায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষেরও সহায়তা চেয়েছে সরকার।
এছাড়া, সারা দেশে সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের মতো নাশকতার ঘটনাকে বিবেচনায় নিয়ে দেশের সব বিমানবন্দরকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকেই সারা দেশে পুলিশকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর ও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সভায়ও ১৩ নভেম্বরের নিরাপত্তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। ওই সভায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীসহ আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সদস্যরা ছাড়াও আইজিপি বাহারুল আলম, ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী, র্যাবের ডিজি এ কে এম শহিদুর রহমানসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘোষণার পর গত ৩ দিনে ঢাকায় অন্তত ১৮টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবন ছাড়াও অন্তত দুটি জায়গায় পুলিশকে লক্ষ্য করে এ হামলা হয়। গত শনিবার থেকে গত সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীতে ১০টি যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়। এসব ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত অন্তত ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়াও গতকাল ভোরে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাসে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে ভেতরে ঘুমন্ত অবস্থায় পুড়ে মারা গেছেন বাসটির চালক।
ডিএমপির এক কর্মকর্তা বলেছেন, ককটেল নিক্ষেপ ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগে জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের বড় একটা অংশ ঢাকার বাইরে থেকে এসেছিল। অনেকে নাশকতা ঘটিয়ে দ্রুতই ঢাকার বাইরে চলে যাচ্ছে। বেশকিছু পথশিশুকেও ককটেল বিস্ফোরণে ব্যবহার করা হয়েছে। তবে, মোটরসাইকেলে চড়ে যাতে ককটেল ছুড়ে বা গাড়িতে আগুন দিয়ে পালাতে না পারে, সেজন্য টহলের পাশাপাশি চেকপোস্টও বাড়ানো হয়েছে। নানা বেশে দায়িত্ব পালন করছেন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। পুরনো নানা ভিডিও পোস্ট করে ১৩ নভেম্বর ঘিরে আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। তবে এসব বন্ধে পুলিশের সাইবার ইউনিটগুলো কাজ করছে।










Discussion about this post