নিজস্ব প্রতিবেদক:
মিরপুর বিআরটিএ’র দালাল হিসেবে কাজ করত হারুন অর রশিদ রুবেল । বিআরটিএ’র কর্মকর্তাসহ সকলেই চিনে দালাল রুবেল হিসেবে। কিন্তু বিআরটিএ’র কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতা পেয়ে সরকারি অফিসের টেবিল, চেয়ার ব্যবহার করত রুবেল ! সেবা গ্রহীতারা জানতেন রুবেল একজন বড় অফিসার । পরোক্ষভাবে সেবা গ্রহীতারা জানতে পারেন রুবেল একজন দালাল।
একাধিক অভিযোগে জানা গেছে, রুবেল ট্যাক্স টোকেন জালিয়াতি ও বিকাশ হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্বের আয়ের উৎস আত্মসাৎ করেছে। এভাবেই দিনের পর দিন মাসের পর মাস বছরে পর বছর ধরে বিআরটিএতে দালালি করে রুবেল কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। এখন সে বিআরটিএর পাশেই শাহরাস্তি বিজনেস সেন্টার নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়ে গেছেন।
রুবেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, বিআরটিএ’র কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় অবৈধভাবে এসব অর্থ- সম্পদের মালিক হয়েছেন। রুবেল সরকারি চেয়ার- টেবিল ব্যবহার করে এবং এই সুযোগে তার দালালি কাজ পুরোদমে চালিয়ে যায়। সে দালালের কাজ করত বিআরটিএ’র গাড়ির মালিকানা বদল, ফিটনেস, ট্যাক্স টোকেন ও রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত লেনদেন মাধ্যমে সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিতো। রুবেল এখন শূন্য থেকে কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছেন। তার নিয়ন্ত্রণে ঢাকায় ফ্ল্যাট, গাড়ি; এছাড়াও রয়েছে নামে-বেনামে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ।
দিনমজুর মো. অহিদুর রহমান তালুকদারের বড় ছেলে মো. হারুন অর রশিদ রুবেল (৩৫) । অহিদুর রহমানের দুই ছেলে, দুই মেয়ের মধ্যে রুবেল বড়। দারিদ্রতার বোঝা মাথায় নিয়ে ২০১১ সালে মামার হাত ধরে পা রাখেন ঢাকায়। মিরপুর বিআরটিএ মেট্রো–১ সার্কেলের, সহকারী পরিচালক (রেজিস্ট্রেশন) জামাল উদ্দিনের বহিরাগত অফিসে পিয়ন হিসেবে কাজ নেয়। তাকে দিয়ে চা, ফাইলপত্র আনা নেওয়ার কাজ করতো। ১ বছর কাজ করার পর র্যাংকস মোটরসের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে রুবেলের। সেখান থেকে যুক্ত হন কোম্পানিটির ট্রান্সপোর্ট বিভাগে, সেখানে প্রায় ২ বছরের মতো কাজ করেছেন। কাজে থাকা অবস্থায় রেজিস্ট্রেশনের বডি ভ্যাটের কয়েক লাখ টাকা আত্মসাত করেছে রুবেল। বিষয়টি র্যাংকস কর্তৃপক্ষ জানার পর তাকে চাকরি থেকে বাদ দেয়া হয়। পরে দুই বছরের বেকার জীবন পার করে বিআরটিএ’র পাশে অনলাইন ব্যাংকিং জমার জন্য শাহারাস্তি বিজনেস সেন্টার নামে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে সেখান থেকেই আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
রুবেল গড়ে তোলেন একটি চক্র, সে চক্রের মাধ্যমে করোনা কালীন সময়ে (বিআরটিএ’র কার্যক্রম বন্ধ থাকায়) গ্রাহকের গাড়িগুলো মেয়াদ উত্তীর্ণ হতে থাকে, সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ট্যাক্স টোকেনের বিআরটিএ’র কোষাগারে মাত্র ৫২ টাকা জমা দিয়ে কয়েকশ গ্রাহকের গাড়ির ইনকাম ট্যাক্সের কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। পরবর্তীতে বিকাশ পেমেন্ট গেটওয়ে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এই চক্রটি।
এর মধ্যে গত ১৫ মে ২০২৩ সালে র্যাবের অভিযানে কয়েক জনকে আটকের পরও মূল আসামিরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। চক্রটি এখনও বিআরটিএ’তে সেবা নিতে আসা গ্রাহকদের জিম্মি করে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে , এই চক্রটি সঙ্গে বিআরটিএ’র কিছু অসাধু কর্মকর্তারাও জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওইসব কর্মকর্তাদের যোগসাজশে একজনের টিন সার্টিফিকেট আরেক জনের নামে দেখিয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
অবৈধভাবে উপার্জন করে রুবেল হয়েছেন কয়েক কোটি টাকার মালিক , করেছেন ফ্ল্যাট, গাড়ি, অঢেল সম্পদ। আবার তার স্ত্রীর নামে দিয়েছেন ৮টি সিএনজি গাড়ি। রুবেলের নামে রয়েছে ৭টি সিএনজি ও ১ মাইক্রোবাস। এছাড়াও নামে-বেনামে বনে গেছেন কয়েক কোটি টাকার সম্পদ।
বিআরটিএ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েক দিন পরপর লোক দেখানো অভিযানের মধ্যে দিয়ে আড়ালে থেকে যায় এ ধরনের রুবেলসহ তার চক্রটি। তাদের কাছেই বন্দি থাকে লাখো সেবা গ্রহীতা।
নাম না প্রকাশের শর্তে একাধিক ভুক্তভোগীরা বলছেন, সংশ্লিষ্ট বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান দ্রুত এসব প্রতারকদের আইনের আওতায় এনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এবং প্রতারক ও দালাল মুক্ত নিশ্চিত করা হোক। সেবা গ্রহীতাদের ভোগান্তি দূর করে ভালো সেবায় তাদের প্রত্যাশা। আগামী পর্বে আরো বিস্তারিত জানা জন্য আমাদের সাথেই থাকুন।
Discussion about this post