লাইফস্টাইল ডেস্ক
ঈদ আনন্দের উৎসব এবং খাবারের তৃপ্তি না থাকলে এই আনন্দ যেন পরিপূর্ণতা পায় না , ঈদ ও ঈদ পরবর্তী সময়ে ভালো থাকতে হলে সুস্থ থাকতে হলে খাবারের ব্যাপারে সংযম থাকতে হবে এভাবেই উৎসব চলতে থাকবে স্বাস্থ্যটা যেন ভাল থাকে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে, কুরবানির ঈদের আনন্দকে উপভোগ করার জন্য প্রায় প্রতিটি ঘরেই মজাদার ও মুখরোচক বিভিন্ন খাবার এর পদ তৈরি করা হয়। তবে সুস্থ থেকে ঈদ পালনে খাবারের ভালো মন্দের দিকেও নজর রাখা প্রয়োজন, কেননা প্রতিটি পরিবারেই বিভিন্ন বয়সী মানুষ যেমন থাকে, তেমনি বিভিন্ন রোগীও কিন্তু থাকে । তাই কুরবানির ঈদের খাবারের মেনুটি স্বাস্থ্যকর হতে হবে। এর পাশাপাশি গরু খাসির মাংসের নানা পদ তৈরিতে নিরাপদ স্বাস্থ্যকর রান্নার পদ্ধতি অবশ্যই মেনে চলতে হবে ।
যারা বাড়ন্ত বয়সী এবং ওজন স্বাভাবিক এবং যাদের কোন শারীরিক জটিলতা বা অসুস্থতা নেই তারা পছন্দমতো বাড়িতে তৈরি সব খাবারই খেতে পারেন, শুধু মাত্রাতিরিক্ত নয় ।
গরু খাসির মাংসে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিনস, মিনারেলস বা খনিজ উপাদান যেমন, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, হিম আয়রন। আবার ভিটামিনের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন বি২ বি৩, বি৬, এবং বি১২। এছাড়াও আছে ক্ষতিকারক স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা সম্পৃক্ত চর্বি ও কোলেস্টেরল। লাল মাংস আপনার জন্য ক্ষতিকর হবে না উপকারী সেটা নির্ভর করবে আপনি সেটা কতোটা নিয়ম মেনে, কি পরিমাণে খাচ্ছেন।
ঈদের দিনের মুল খাবারের মেনুতে পোলাউ বিরিয়ানি খিচুরি তেহারি এর সাথে লাল মাংসের নানা আইটেম থাকে, তবে যারা বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা বা অসুস্থতায় ভুগছেন তারা সাদা ভাত সাথে যেকোনো ১ প্রকারের মাংসের ১ টি আইটেম পরিমিত পরিমানে খেতে পারেন ।
ঈদের সকালে বা বিকালে দুধ সেমাই পায়েস পুডিং ফালুদা কাস্টারড জাতীয় বাড়িতে তৈরি স্বাস্থ্যকর নাশতা পরিমিত খেতে পারেন। তবে মিষ্টান্ন তৈরিতে কন্ডেন্সড মিল্ক বাটার অয়েল মেয়নেজ মারজারিন সাদা চিনি ইত্যাদি ক্ষতিকর দ্রব্য ব্যাবহার করা থেকে বিরত থাকুন, ডায়াবেটিস রোগিরা ডেসার্ট তৈরিতে বিকল্প মিষ্টি-কারক স্টেভিয়া দিতে পারেন, এড়িয়ে চলবেন চিনি গুড় মধু মিসরি । খুব ভালো হয় ডেসার্ট এর পরিবর্তে নাশতায় মৌসুমি রঙ্গিন মিষ্টি ফল খাওয়া ।
যাদের হৃদরোগ, লিভার, কিডনির রোগ. উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি দীর্ঘ মেয়াদী কোন রোগ আছে তারা খুব বেশি সতর্ক থাকবেন গরু খাসির মাংস খাওয়ার বিষয়ে, স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে একদিনে ৬০-৯০ গ্রাম এর বেশি খাবেন না এবং সেদিন অন্য কোন প্রোটিন জাতীয় খাবার খাবেন না ।
মাত্র অতিরিক্ত পরিমাণে মাংস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বেড়ে যায় যাদের পাইলস ও এনাল ফিসার জাতীয় রোগ আছে তাদের পায়ুপথে জ্বালাপোড়া ব্যথা বেড়ে যায়, এমনকি পায়ুপথে রক্তক্ষরণ হতে পারে তাই কোরবানির ঈদে যেহেতু আমাদের প্রধান খাবারই মাংস তাই এই সময়ে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে সেই সাথে ইসুবগুলের ভুষি অথবা তোকমা অথবা চিয়া সিড অথবা চিনি ছাড়া লেবুর শরবত বা অন্যান্য ফলের রসের শরবত এই জাতীয় তরল খাবার বেশি করে পান করবেন।
• ডায়াবেটিস ও ওজনাধিক্যের রোগীরা মিষ্টান্ন কম খাবেন পরিবর্তে ফল খাবেন। অতিরিক্ত খাবার না খেয়ে ৪-৫ বারে অল্প করে খাবেন ও ধীরে ধীরে চিবিয়ে খাবেন। প্রথমেই পোলাও বা ভাত নয়, আগে সালাদ/সবজি ও মাছ/মাংসের পদ গ্রহণ করা ভালো।
• সাধারন কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে ও সার্বিক সুস্থতায় প্রতি ৫০ গ্রাম মাংসের সাথে ১০০ গ্রাম সবজি বা সালাদ খেতে পারেন এবং সারাদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
আমাদের জানা প্রয়োজন, গরু খাসির বিভিন্ন অংশের মাংসে ফ্যাট প্রোটিন ও কোলেস্টেরল এর পরিমানের তারতম্য আছে, যেমন – গরু খাশির পেছনের রানে, পিঠ দাবনার মাংসে তুলনামুলক কম ফ্যাট ও বেশি প্রোটিন যুক্ত লিন মিট আছে, চেষ্টা করুন যতটা সম্ভব লিন মিট খেতে । এড়িয়ে চলুন মগজ ভুরি চর্বির টুকরা ।
স্বাস্থ্যকর রান্নার পদ্ধতি:
• স্বাস্থ্যকর উপায়ে মাংস রান্নার পদ্ধতি হিসেবে, লিন মিট গুলোকে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে লেবুর রস সিরকা টক দই আদা রসুন ইত্যাদি যেকোনো মসলা দিয়ে ৩০ মিনিট মাখিয়ে রেখে কম তেলে সবজি দিয়ে রান্না করুন । এছাড়া সিদ্ধ বা খুবই সামান্য তেলে রান্না করা গোশত দেহের জন্য কম ক্ষতি বয়ে আনে।
• মাংস ভাজা বা ভুনা না করে ঝোল কমিয়ে রান্না করুন। ঘি ও মাখন যথাসম্ভব কম ব্যবহার করুন।
• ভাজা খাবারের পরিবর্তে বেক, গ্রিল বা স্টিম করা স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নিন যেমন বিফ বা মাটন টিক্কা, সবজি সহ বেকড বিফ বা মাটন, বিফ কাটা মসল্লা, রেজালা, বিফ স্টেক, সুপ-স্ট্যু, হালিম
হজম ও সুস্থতা বজায় রাখতে:
• কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে,সার্বিক সুস্থতার জন্য ঈদের দিনেও দুপুর ও রাতের খাবারের সাথে ১০০ গ্রাম সবজি বা সালাদ খেতে পারেন।
• সারাদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
• ঈদের আগের রাতে বা সকালে ইসবগুলের ভুষি পানির সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
• ভারী খাবারের পর হজমে সহায়ক বোরহানি, টক দইয়ের ঘোল বা মাঠা, লেবু বা জিরা পানি, আদা পানি, ডাবের পানি, ফ্রেশ জুস গ্রহণ করুন।
• কোল্ড ড্রিঙ্কস, কোলা ও কৃত্রিম রঙ-ফ্লেভারযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলুন।
• ফাস্ট ফুড, বেকারি ও রেস্তোরাঁর খাবার এড়িয়ে চলুন।
• রাতের খাবারের পরপরই ঘুমাবেন না, অন্তত ২ ঘণ্টা আগে খাবার শেষ করুন।
• ঈদের দিনে বা রাতে ১ ঘণ্টা হাঁটাহাঁটি করুন এবং খাবারের ক্যালরি বার্ন করুন।
সঠিক উপায়ে খাবার গ্রহণ করে সুস্থ থেকে ঈদ উদযাপন করুন। যাদের বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতা রয়েছে, তারা প্রয়োজনে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।
Discussion about this post