নিজস্ব প্রতিবেদক:
এলজিইডি ঢাকা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. বাচ্চু মিয়ার বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, ঘুষ, দুর্নীতি এবং কর ফাঁকি দিয়ে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং প্রাপ্ত অভিযোগ থেকে জানা গেছে, বাচ্চু মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন, যা তার বৈধ আয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
দুর্নীতির অভিযোগের বিস্তারিত অভিযোগ অনুযায়ী, মো. বাচ্চু মিয়া এলজিইডিতে কর্মরত থাকাকালীন অবৈধ টেন্ডার বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য ও তদবিরের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ৩০শে জুলাই, ২০২৫ তারিখে ‘দৈনিক শেয়ার বিজ’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এনবিআর-এর তদন্তের জালে ৩০০ প্রকৌশলীর তালিকায় বাচ্চু মিয়ার নাম উঠে আসে। এইদিকে চলতি বছরের ৬ আগস্ট মোহাম্মদ খাজা মহিউদ্দিন নামের এক ব্যক্তি দুর্নীতি দমন কমিশন চেয়ারম্যানের বরাবর লিখিতভাবে একটি অভিযোগ দাখিল করেন। সেই অভিযোগ থেকে মো. বাচ্চু মিয়ার যাবতীয় দুর্নীতি ও অনিয়মের তথ্যগুলো পাওয়া যায়।
এর আগে ২০২৪ সালের ১৭ই অক্টোবর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে বাচ্চু মিয়ার বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মোঃ শিকদার হোসেন নামের এক ব্যক্তি। সেই অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বাচ্চু মিয়া নিজেকে ‘বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক’ পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সরকারি কাজে প্রভাব বিস্তার করতেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ঢাকা মহানগরীর ১৬৫টি দৃষ্টিনন্দন স্কুল, কেরানীগঞ্জে ৬টি ফোর লেন সড়ক ও ১০টি বড় ব্রিজ নির্মাণসহ অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে কাজ না করেই ঠিকাদারদের সাথে আঁতাত করে সরকারি অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।
২০২৫ সালের ৯ই এপ্রিল ‘দৈনিক সংবাদ সারাবেলা’ পত্রিকায় প্রকাশিত আরেক প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। এতে বলা হয়, তিনি নেত্রকোনায় কর্মরত থাকাকালীন একজন মন্ত্রীর কণ্ঠ নকল করে বিভিন্ন দপ্তরে তদবির বাণিজ্য করতেন, যার ফলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে তিনি রাজনৈতিক পরিচয় বদল করে নিজেকে নব্য বিএনপি কর্মী হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
অবৈধ সম্পদের বিবরণীতে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বাচ্চু মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে নিম্নোক্ত অবৈধ সম্পদগুলো রয়েছে:
১. উত্তরা, ঢাকা: উত্তরার সেক্টর-১১, রোড-০১, বাসা-০৭-এ তার স্ত্রী আসমা পারভীনের নামে একটি ফ্লাট রয়েছে, যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় কোটি টাকা।
২. গাজীপুর: গাজীপুর সদর, নিশাদনগরে অবস্থিত ‘ভিলেজ একাডেমি শাখা’-তে আসমা পারভীনের নামে একটি বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে।
৩. গাজীপুর: গাজীপুরের জয়দেবপুরে তার একটি বাড়ি হয়েছে ।
৪. পূর্বাচল, ঢাকা: পূর্বাচল আবাসিক এলাকায় একটি প্লট রয়েছে।
এছাড়াও, বাচ্চু মিয়ার স্ত্রী আসমা পারভীন ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সালে টিআইএন খোলেন এবং মাত্র ৬ দিন পর ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ তারিখে ১৬ লক্ষ টাকা মূল্যের একটি গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-গ-৩৫-২৯৫২) ক্রয় করেন। যদিও অভিযোগ রয়েছে গাড়িটির প্রকৃত মূল্য ৪৬ লক্ষ টাকা। তাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নামেও একাধিক বেনামি গাড়ি রয়েছে বলে জানা যায়।
ব্যবসা ও অন্যান্য বিনিয়োগ অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বাচ্চু মিয়া তার অবৈধ ও ঘুষের টাকা সাদা করার জন্য বিভিন্ন ব্যাংকে তার নামে কোটি কোটি টাকা জমা রয়েছে।
অভিযোগকারী আরও জানান, বাচ্চু মিয়া এখনও নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ মন্ত্রীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন এবং আর্থিক সহায়তা দিচ্ছেন। এছাড়া, গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকেও তিনি আর্থিকভাবে সহযোগিতা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এই গুরুতর অভিযোগগুলো বিবেচনায় নিয়ে একটি নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে অভিযোগকারী আশা করেন।
সিএনএস//এল//
Discussion about this post