নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশজুড়ে টানা ভারী বৃষ্টিপাতে জনজীবনে নেমে এসেছে চরম বিপর্যয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নদ-নদীর পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে, ভেঙেছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটেছে, তলিয়ে গেছে রাস্তা-ঘাট, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও মৎস্য ঘের। পাহাড়ি এলাকায় দেখা দিয়েছে ধসের শঙ্কাও।
ফেনী: ফেনীতে ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর ১৪টি স্থানে বাঁধ ভেঙে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার অন্তত ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পরশুরামে মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ১২.৫৫ মিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। মঙ্গলবার রাত ১০টা পর্যন্ত ১৫ ঘণ্টায় মুহুরী নদীর পানি বেড়েছে ৬.৯২ মিটার বা ২২ ফুট ১০ ইঞ্চি।
পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে পরশুরাম ও ফুলগাজীর অনেক এলাকায় সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে।
ফুলগাজীর ইউএনও ফাহরিয়া ইসলাম জানান, নদীর বাঁধে একাধিক ভাঙনের খবর পাওয়া গেছে, শতাধিক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে।
খাগড়াছড়ি: পানিতে ডুবে গেছে শহরের একাধিক এলাকা, দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে চেঙ্গি ও মাইনি নদীর পানি বেড়ে শহরের মুসলিমপাড়া, গঞ্জপাড়া ও গরুর বাজারসহ একাধিক এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
কক্সবাজার: টানা বৃষ্টিতে সেন্ট মার্টিন, টেকনাফ ও কক্সবাজার শহরের বহু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। কক্সবাজারে গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৭৮৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়, যা এই বর্ষা মৌসুমে সর্বোচ্চ। সাগর উত্তাল থাকায় পাহাড়ধসের আশঙ্কায় রয়েছে হাজারো মানুষ।
টাঙ্গাইল: যমুনা, ধলেশ্বরীসহ নদ-নদীর পানি বাড়ছে, যমুনাসহ চারটি নদীর পানি সাড়ে ৩ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বেড়েছে। বেশ কিছু নিচু এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে।
সাতক্ষীরা: পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডসহ বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত, সাতক্ষীরায় এক সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে ফসলি জমি, বীজতলা, মৎস্য ঘের, টিউবওয়েল ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত এক সপ্তাহে ২৭২ মি.মি. এবং গত ২৪ ঘণ্টায় ১০২ মি.মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
খুলনা: ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, ভেসে গেছে ফসল ও ঘের, খুলনা নগরী ও আশপাশের গ্রামীণ এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। রাস্তা-ঘাটে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে, মৎস্য ঘের ও ধানের খেত পানিতে তলিয়ে গেছে।
বান্দরবান: পাহাড়ি এলাকায় বিচ্ছিন্ন জনজীবন। টানা বৃষ্টিতে বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকায় বসবাসকারীরা কার্যত ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন। সাঙ্গু ও মাতামুহুরী অববাহিকায় ভারী বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
রাজশাহী: পদ্মা নদীর পানি বাড়ছে, ফারাক্কার গেট খোলার প্রভাবে পদ্মা নদীর পানি প্রতিদিনই বাড়ছে। জেলার পবা, বাঘা ও গোদাগাড়ী এলাকায় নদীভাঙন দেখা দিয়েছে।
ঝিনাইদহ: শহর ও গ্রামে জলাবদ্ধতা, বিপাকে নিম্নআয়ের মানুষ, শহরের প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে গ্রামীণ জনপদে বৃষ্টির পানিতে রিকশা ও ইজিবাইক চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। কৃষকরা আশঙ্কায় রয়েছেন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি নিয়ে।
মোংলা: ঘরে ঢুকেছে পানি, রান্না বন্ধ, মানুষ খাটে আশ্রয় নিয়েছে মোংলা পৌরসভার অধিকাংশ এলাকা ডুবে গেছে। পানিতে তলিয়ে গেছে চুলাও। পোর্ট পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পানি নামাতে পৌর কর্মচারীদের মোতায়েন করা হয়েছে।
নোয়াখালী: ২২৩ মি.মি. বৃষ্টিপাতে জেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত সদর, কোম্পানীগঞ্জ, বেগমগঞ্জ, কবিরহাট, সুবর্ণচরসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
কুমিল্লা: সড়কে হাঁটুপানি, শহরজুড়ে স্থবিরতা, নগরীর বেশিরভাগ নিচু এলাকায় ডুবে গেছে অলিগলি, বাসিন্দারা জলাবদ্ধতায় ঘরবন্দি। ব্যবসা-বাণিজ্যে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা।
বরিশাল: পরিকল্পনাহীন উন্নয়নে ভোগান্তি চরমে, ড্রেন নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ চলায় বর্ষায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হাঁটুপানিতে ডুবে গেছে।
লক্ষ্মীপুর: বেহাল ড্রেনেজ, কর্মহীন খেটে খাওয়া মানুষ, লক্ষ্মীপুরে ১২৫ মি.মি. বৃষ্টিপাতে শহরের অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
Discussion about this post