আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
রাশিয়ার সঙ্গে তেল বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ায় ভারতকে বিশাল এক অর্থনৈতিক ধাক্কা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প; রাতারাতি ভারতীয় পণ্যের উপর শুল্ক দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছেন তিনি। ট্রাম্পের এই এক ধাক্কাতেই ধস নেমে গেছে ভারতের শেয়ারবাজারে।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সকালেই দেশটির সেনসেক্স সূচক ৩৩৫.৭১ পয়েন্ট পড়ে ৮০ হাজার ২০৮.২৮-এ দাঁড়িয়েছে। এছাড়া নিফটি সূচক ১১৪.১৫ পয়েন্ট কমে নেমে গেছে ২৪ হাজার ৪৬০.০৫-তে। খবর দ্য হিন্দুস্তান টাইমসের।
ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তে এখন সবচেয়ে বেশি শুল্ক আরোপিত মার্কিন বাণিজ্য অংশীদারদের তালিকায় উঠে এসেছে ভারত। হঠাৎ করে এই শুল্ক বৃদ্ধিকে ঘিরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে দেশটির বিনিয়োগকারীদের মধ্যে, বিশেষ করে যেসব খাত রপ্তানি নির্ভর।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই শুল্ক পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ৩০ থেকে ৪০ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত ধাক্কা আসতে পারে। এইচডিএফসি সিকিউরিটিজ-এর প্রধান নির্বাহী ধীরাজ রেল্লির মতে, ‘দীর্ঘমেয়াদে এ ধরনের শুল্ক ভারতের অর্থনীতির গতি কমিয়ে দিতে পারে।’ তবে রিজার্ভ ব্যাংক এখনও পর্যন্ত তাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৬.৫ শতাংশেই অপরিবর্তিত রেখেছে।
কোটাক মাহিন্দ্রা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির সিইও নিলেশ শাহ বলেন, ‘শুল্ক দ্বিগুণ হওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি একসঙ্গে বিনিয়োগ পরিবেশকে নাড়িয়ে দিতে পারে।’
ভারতীয় রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনের সভাপতি এস.সি. রালহান বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন আরোপিত শুল্কের ভয়াবহ প্রভাব পড়বে। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ ভারতীয় রপ্তানির জন্য বড় ধাক্কা। মার্কিন বাজারে আমাদের রপ্তানির প্রায় ৫৫ শতাংশ সরাসরি প্রভাবিত হবে। ৫০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আমাদের রপ্তানিকারকদের ওপর অতিরিক্ত ব্যয় চাপিয়ে দিচ্ছে। ফলে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে অন্য দেশগুলোর তুলনায় ৩০–৩৫ শতাংশ পিছিয়ে পড়ছে ভারত।
বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি ও সর্বাধিক জনসংখ্যার দেশ ভারত। যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শুল্কের প্রভাব মোকাবিলায় বর্তমানে প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভারতের সর্ববৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৮৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে ভারত।
ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের শীলান শাহ এক নোটে বলেছেন, ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আরোপিত অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক যদি বহাল থাকে, তাহলে ভারতকে একটি উদীয়মান উৎপাদন হাব হিসেবে দেখাটা ভয়াবহভাবে বাধাগ্রস্ত হবে।
তিনি বলেন, ভারতের জিডিপির প্রায় ২ দশমিক ৫ শতাংশ আসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে। ভারতীয় পণ্যের রপ্তানিতে প্রভাব ফেলার জন্য ৫০ শতাংশ শুল্ক অনেক বড় আঘাত। এর ফলে রপ্তানি হ্রাস পেলে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ থেকে নেমে চলতি বছর ও পরের বছরে ৬ শতাংশে দাঁড়াতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতের শীর্ষ রপ্তানি পণ্যের তালিকায় রয়েছে, স্মার্টফোন, ওষুধ, রত্নপাথর, টেক্সটাইল ও বিভিন্ন ধরনের শিল্পখাতের যন্ত্রপাতি। এর মধ্যে সবচেয়ে শ্রমনির্ভর গয়না ও সামুদ্রিক খাদ্য খাত সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়েছে।
বুধবার ভারতের সামুদ্রিক খাদ্য রপ্তানিকারক সংস্থা বলেছে, মার্কিন ৫০ শতাংশ শুল্ক তাদের ৩ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসাকে বিপন্ন করে তুলেছে। ভারতের গয়না খাত থেকেই গত বছর কেবল ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি করা হয়েছিল। আগের কম শুল্ক সুবিধা থাকার পরও দেশটিতে এই খাতের হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হারানোর আশঙ্কা রয়েছে বলে জানানো হয়েছিল। বর্তমানে এই খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ হারের শুল্ককে ‘ধ্বংসাত্মক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্কের ভয়াবহ প্রভাব পড়তে পারে ভারতের কৃষিখাতে। দেশটির কোটি কোটি মানুষ সরাসরি এই খাতের ওপর নির্ভরশীল। কৃষি খাতকে পুরোপুরি মার্কিন আমদানির জন্য উন্মুক্ত করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ভারত।
বৃহস্পতিবার এক ভাষণে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ভারত কখনই তার কৃষকদের স্বার্থ নিয়ে আপস করবে না। তিনি বলেন, আমাকে হয়তো ব্যক্তিগতভাবে বড় মূল্য দিতে হবে। কিন্তু আমি তার জন্য প্রস্তুত। তবে, এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু জানাননি তিনি।
Discussion about this post