নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) আইন সংশোধনের প্রস্তাবিত নতুন খসড়া অধ্যাদেশ-২০২৫ বাতিলের দাবি জানিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা।
রোববার সকাল ৯টা থেকে তারা এ বিক্ষোভ সমাবেশ করছেন। তারা বলছেন, এই আইন বাস্তবায়নের ঘোষণাতেই ট্রাভেল এজেন্সি, হজ এজেন্সি এবং রিক্রুটিং এজেন্সি খাতের প্রায় লাখ লাখ দক্ষ জনবল একদিনে বেকার হয়ে গেছেন।
এর আগে ১৫ নভেম্বর রাজধানীর পল্টনের একটি হোটেলে ট্রাভেল এজেন্সি, হজ এজেন্সি ও রিক্রুটিং এজেন্সির পক্ষে এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) সাবেক সভাপতি এসএন মঞ্জুর মোর্শেদ মাহবুবও একই দাবি করে ছিলেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেওয়া গ্যালাকটিক ট্যুর অ্যান্ড ট্র্যাভেলসের মালিক মো. ইফতেখার আহমেদ সোহেল বলেন, এ অধ্যাদেশটি কার্যকর হলে দেশের প্রায় ৬ হাজার ট্রাভেল এজেন্সি, ১৪০০ হজ এজেন্সি এবং ২৭০০ রিক্রুটিং এজেন্সি সরাসরি ঝুঁকিতে পড়বে। কারণ নতুন অধ্যাদেশে ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা পরিচালনার এজেন্সিকে আয়াটার টিকেট সেলিং প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হতে হবে।
অথচ দেশে বর্তমানে প্রায় ৬ হাজার লাইসেন্সধারী ট্রাভেল এজেন্সি থাকলেও এর মধ্যে মাত্র ১ হাজারের মতো এজেন্সির আয়াটায় যুক্ত। ফলে নতুন অধ্যাদেশ বাস্তবায়ন হওয়ার দিনই বাকি ট্রাভেল এজেন্সিগুলো কার্যত ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হবে। তাদের উপর নির্ভরশীল এজেন্সিগুলোও বন্ধ হয়ে যাবে। এতে ট্রাভেল এজেন্সি, হজ এজেন্সি ও রিক্রুটিং এজেন্সির লাখ লাখ দক্ষ জনবল বেকার হবে।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থেকে বিক্ষোভ সমাবেশে আসা তাশফি ট্যুর এন্ড ট্যাভেলসের স্বত্বাধিকারী মো. আক্তার মামুন শিপার বলেন, নতুন অধ্যাদেশে এমন সব ধারা সংযোজন করা হয়েছে যা ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য অযৌক্তিক চাপ সৃষ্টি করবে। এর মধ্যে রয়েছে পরিবারের সদস্যদের তথ্যাদি দাখিল বাধ্যতামূলক করা, ঋণ সংক্রান্ত সিআইবি অনুমোদন, অফলাইনে ১০ লাখ এবং অনলাইনে ১ কোটি টাকা ব্যাংক জামানত রাখা, বার্ষিক আর্থিক বিবরণী প্রদানের শর্তে লাইসেন্স নবায়ন এবং বিভিন্ন প্রযুক্তিগত ব্যবস্থাপনার ওপর কঠোর শর্ত আরোপ।
রাজধানীর ডিওএইচএস এলাকা থেকে আসা ট্যাভেল ব্যবসায়ী (কেএলবি) মো. মামুন আব্দুল কাইয়ুম বলেন, এসব বিধান বাস্তবায়িত হলে দেশের পর্যটন শিল্পে বড় ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হবে বলে আমরা আশঙ্কায় আছি। তাই দ্রুত এ অধ্যাদেশ বাতিলের জানাচ্ছি আমরা। অন্যথায় আমরা পথে নামতে বাধ্য হবো।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা জানান, বিশ্বের সব দেশে ট্রাভেল এজেন্সির এজেন্ট টু এজেন্ট (বিটুবি) ব্যবসার প্রচলন রয়েছে। তবে সরকারের নতুন এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে বিটুবি ব্যবসা বাংলাদেশে বন্ধ করা হচ্ছে। অর্থাৎ এক ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে অন্য ট্রাভেল এজেন্সির টিকিট ক্রয়-বিক্রি করতে পারবে না।
বিটুবি বন্ধের ফলে সব ট্রাভেল এজেন্সিকে আয়াটা নিয়ে হবে যার খরচ প্রায় ৩০ লাখ টাকা। এর সঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এর টিকেটের জন্য আরও অতিরিক্ত ২২ লাখ টাকা জমা দিতে হবে। ৯০ শতাংশ ট্রাভেল এজেন্সির এতো টাকা নাই। এর ফলে সব এজেন্সিগুলো বন্ধ হয়ে যাবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কয়েকটি অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করে মালিকরা বিদেশে পাড়ি জমালেও মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
তারা বলেন, আমরা চাই আলোচনা ও সংলাপের মাধ্যমে সবার স্বার্থ রক্ষায় সমাধান বের হোক। সরকার যেন হাজারো ট্রাভেল উদ্যোক্তা ও কর্মীর ভবিষ্যৎকে অন্ধকারে না ঠেলে দেয়।
বিক্ষোভ সমাবেশের মাধ্যমে তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, নতুন আইন যেন আমাদের ব্যবসা বন্ধ করে দেয়ার হাতিয়ার না হয়ে যায়, বরং একটি সুষ্ঠু, টেকসই ও ন্যায্য ট্রাভেল শিল্প গড়ে তুলতে সহায়ক হয়।









Discussion about this post