নিজস্ব প্রতিবেদক
ভোটের প্রচারে ড্রোন, পোস্টার ব্যবহার এবং বিদেশে প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ‘রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০২৫’ জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে আরও বলা হয়েছে, ২০টির বেশি বিলবোর্ড ব্যবহার করা যাবে না, একমঞ্চে ইশতেহার ঘোষণা ও আচরণবিধি মানতে প্রার্থী ও দলের অঙ্গীকারনামা দিতে হবে।
গতকাল সোমবার ত্রয়োদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভোটের প্রচারে কড়াকড়ি আরোপ, অসৎ উদ্দেশ্যে এআই ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা, পোস্টার ও ড্রোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞাসহ কী করা যাবে, কী করা যাবে না তা তুলে ধরা হয়েছে এ বিধিমালায়।আচরণবিধি লঙ্ঘনে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড ও দেড় লাখ টাকা জরিমানা এবং দলের জন্য দেড় লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে তদন্ত সাপেক্ষে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতাও রয়েছে ইসির। প্রথমবারের মতো পোস্টার ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া হলো ভোটের প্রচারে। এছাড়া একমঞ্চে প্রার্থীদের ইশতেহার ঘোষণা এবং আচরণবিধি মানায় দল ও প্রার্থীকে অঙ্গীকারনামা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও ২০০৮ সালের আচরণবিধির সঙ্গে সমন্বয় রেখে বেশ কিছু নতুন বিষয় যুক্ত করে এবার নতুন আচরণবিধি প্রণয়ন করা হলো। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন অধ্যাদেশ জারির পর সোমবার আচরণবিধি গেজেট আকারে জারি করে ইসি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্বাচনি প্রচারণার বিষয়ে বলা হয়েছে, কোনো প্রার্থী, তার নির্বাচনি এজেন্ট বা প্রার্থীর পক্ষে অন্য কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে নির্বাচনি প্রচার করতে পারবেন। তবে প্রার্থী বা তার নির্বাচনি এজেন্টকে সংশ্লিষ্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নাম, একাউন্ট আইডি, ই-মেইল আইডিসহ অন্যান্য তথ্য প্রচার শুরু আগে রিটার্নিং অফিসারের কাছে দাখিল করতে হবে।
প্রচার-প্রচারণায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না; ঘৃণাত্মক বক্তব্য, ভুল তথ্য, কারো চেহারা বিকৃতি ও নির্বাচন সংক্রান্ত বানোয়াট কনটেন্ট তৈরি বা প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রতিপক্ষ, নারী, সংখ্যালঘু বা অন্য কোনো জনগোষ্ঠীর প্রতি উসকানিমূলক ভাষা বা ব্যক্তিগত আক্রমণও নিষিদ্ধ। নির্বাচনি স্বার্থে ধর্মীয় বা জাতিগত অনুভূতির অপব্যবহার করা যাবে না।
আচরণবিধিতে আরও বলা হয়েছে, বিদেশে কোনো দল বা প্রার্থী জনসভা, সভা-সমাবেশ বা প্রচারণা করতে পারবে না। একজন প্রার্থী তার আসনে সর্বোচ্চ ২০টি বিলবোর্ড ব্যবহার করতে পারবে, যার দৈর্ঘ্য ১৬ ফুট ও প্রস্থ ৯ ফুটের বেশি নয়। নির্বাচনের দিন বা প্রচারের সময় কোনো ড্রোন বা কোয়াডকপ্টার ব্যবহার করা যাবে না।
বিলবোর্ডে শুধুমাত্র ডিজিটাল আলোর ব্যবহার করা যাবে; তবে আলোকসজ্জা ও পলিথিন, পিভিসি, রেক্সিনজাত ব্যানার ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শব্দের মাত্রা সর্বোচ্চ ৬০ ডেসিবেল নির্ধারণ করা হয়েছে। আচরণবিধি মেনে চলায় দল ও প্রার্থীদের কাছ থেকে লিখিত অঙ্গীকারনামা নিতে হবে।
গণমাধ্যমের সংলাপ ও সব প্রার্থীর এক মঞ্চে ইশতেহার ঘোষণার সুযোগ রাখা হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট আসনে সব প্রার্থীকে নিয়ে একদিনে তাদের ইশতেহার পাঠের ব্যবস্থা করবেন।
প্রথমবারের মতো আইটি-সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিং পদ্ধতিও চালু করা হয়েছে, যার আওতায় দেশের ভেতরে নির্দিষ্ট তিন শ্রেণির ব্যক্তি ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা ডাকযোগে ভোট দিতে পারবেন।
আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশ ও আচরণবিধি জারির মধ্য দিয়ে নির্বাচনি আইনের সব ধরনের সংস্কার কাজ সম্পন্ন হলো। ইতোমধ্যে ভোটার তালিকা আইন, নির্বাচন কর্মকর্তা বিশেষ বিধান আইন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন, ভোটকেন্দ্র নীতিমালা, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষণ নীতিমালা ও সাংবাদিক নীতিমালাসহ সব ধরনের আইন-বিধি সংস্কার করেছে ইসি।










Discussion about this post