আন্তর্জাতিক ডেস্ক
নেপালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধকরণ, দুর্নীতি, সরকারি কর্মকর্তার সন্তানদের অধিক সুযোগ-সুবিধাসহ নানান ইস্যুতে শুরু হয় ছাত্রবিক্ষোভ। ছাত্র-জনতার সেই আন্দোলনে গুলি চালায় সরকারি বাহিনী। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর গুলিতে দেশটিতে নিহত হয়েছেন ১৯ জন এবং আহত তিন শতাধিক।
ছাত্র-জনতার সেই বিক্ষোভে আজ (৯ সেপ্টেম্বর) মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে সরকার। ইতিমধ্যেই পদত্যাগ করেছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। জানা গেছে, আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার ফেলে দেওয়ার নেপথ্যে আছেন একজন ডিস্ক জকি বা ডিজে।
দেশটির সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, নেপালের জেন-জির বিক্ষোভ-প্রতিবাদ-আন্দোলনের সমন্বয়ক ছিলেন সুদান গুরুং নামের ৩৬ বছর বয়সী এক যুবক। তিনি ‘হামি নেপাল’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সভাপতি। নেপালে তার নেতৃত্বে এই শক্তিশালী আন্দোলন রূপ নেয় সরকার পতনের আন্দোলনে।নেপালের এই আন্দোলনে তিনি শিক্ষার্থীদের স্কুল ইউনিফর্ম পরে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। নির্দেশনা দিয়েছিলেন তারা সঙ্গে যেন বই-খাতা রাখে। শুরুতে তাদের প্রতিবাদ ছিল শান্তিপূর্ণ। তার ডাকে নেপালের লাখ লাখ তরুণ-তরুণী রাস্তায় নেমে আসেন। গুরুংয়ের সংস্থা হামি নেপাল প্রতিবাদ-সমাবেশের নির্দেশনা দিচ্ছিলেন সামাজিক মাধ্যমে। তার নেতৃত্ব নেপালের হতাশ তরুণ প্রজন্মের কাছে একটা অবলম্বন হয়ে উঠেছিল। আজ সরকার বিরোধিতা এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে উঠেছেন সুদান গুরুং।
সুদান গুরুং ছিলেন একজন ডিস্ক জকি বা ডিজে। তিনি ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসতেন। অ্যাডভেঞ্চার-প্রিয় এই তরুণের জীবনে বিপর্যয় নেমে আসে ২০১৫ সালের ভূমিকম্পে। ভয়াবহ সেই ভূমিকম্পে তিনি তার সন্তানকে হারান। সেই থেকেই সমাজ-সেবামূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন তিনি।
গতকাল সোমবার রাতে নেপালের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী পৃথ্বী সুব্বা গুরুং জানিয়েছিলেন, ফেসবুক, এক্স, টিকটক, হোয়াটস অ্যাপ, ইউটিউবসহ ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম দেশটিতে নিষিদ্ধ। এই সিদ্ধান্তে ফুঁসে ওঠে নেপালের তরুণ প্রজন্ম। অনেকের দাবি সরকারের দীর্ঘদিনের দুর্নীতির প্রমাণ লুকাতে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তা ছাড়া সামাজিক মাধ্যম নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে মূলত বাক-স্বাধীনতা হরণ করা হলো। ঘটনার প্রেক্ষিতে উত্তাল হয়ে ওঠে নেপাল। যা রূপ নেয় সরকার পতনে।
Discussion about this post