নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী ছয়জন প্রার্থীকে নিয়ে একটি আকর্ষণীয় বিতর্ক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের মিলনায়তনে এই বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়।
বিতর্কে অংশগ্রহণ করা জিএস প্রার্থীরা হচ্ছেন, ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের শেখ তানভীর বারী হামিম, শিবির সমর্থিত প্যানেলের এস এম ফরহাদ, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) সমর্থিত প্যানেলের আবু বাকের মজুমদার, উমামা ফাতেমার প্যানেলের আল সাদী ভূঁইয়া, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন সমর্থিত প্যানেলের খায়রুল আহসান মারজান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশিকুর রহমান।
চারটি ধাপে এই বিতর্ক পরিচালিত হয়। প্রথমে প্রার্থীরা নির্বাচিত হলে কী কী কাজ করবেন তা নিয়ে আলোচনা করেন, এরপর দুটি নির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তর দেন, তৃতীয় পর্বে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন এবং সবশেষে ছিল বিতর্কের উপসংহার।
বিভিন্ন প্রার্থীর ইশতেহার থেকে উঠে আসে গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রতিশ্রুতি-
শেখ তানভীর বারী হামিম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার লিটারেসি বাড়ানো, পাঠদান পদ্ধতি আধুনিকায়ন এবং আবাসন সংকট সমাধানের ওপর জোর দেন।
এস এম ফরহাদ বলেন, অ্যালামনাইদের সঙ্গে নেটওয়ার্কিং বাড়িয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য সহযোগিতার ব্যবস্থা এবং আবাসন ও খাবারের মান উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেন।
আবু বাকের মজুমদার বলেন, নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস, স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গবেষণামুখী পরিবেশ তৈরি, ওয়ান স্টুডেন্ট ওয়ান বেড এবং বাস সংখ্যা বৃদ্ধির মতো প্রতিশ্রুতি দেন।
খায়রুল আহসান মারজান শিক্ষার্থীদের চাওয়া অনুযায়ী কাজ করার অঙ্গীকার করেন এবং মান্ধাতা আমলের পদ্ধতি বাদ দিয়ে সব কাজ অনলাইনে সম্পন্ন করার ব্যবস্থা করার কথা বলেন। এছাড়া, নারীদের হলে অনাবাসিক ছাত্রীদের জন্য কমনরুমের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দেন।
আল সাদী ভূঁইয়া বলেন, কথা নয়, কাজে বড় হবেন। ক্যাম্পাসে দখলদারিত্বের রাজনীতি কায়েম হতে দেবেন না এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে ডিজিটালাইজড করার কথা বলেন।
বিতর্কের শেষ পর্বে বহিরাগত নিয়ন্ত্রণ নিয়েও প্রার্থীরা নিজেদের পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
হামিম বলেন, তিনি ভিন্নমতের সঙ্গে কাজ করার জন্য ‘রিট’ করার কথা ভাবছেন। বহিরাগত নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে রেড, ইয়েলো এবং গ্রিন—এই তিনটি জোনে ভাগ করার প্রস্তাব দেন।
ফরহাদ বলেন, বহিরাগত নিয়ন্ত্রণের জন্য ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হবে। নির্দিষ্ট সময়ে লোক প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করাকে তিনি কার্যকর সমাধান হিসেবে উল্লেখ করেন।
বাকের বলেন, বহিরাগত নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাজে লাগানো হবে।
মারজান বলেন, বহিরাগত নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত পাহারা, মাদকাসক্তদের বহিষ্কার এবং অ্যালামনাইদের অনুমতি সাপেক্ষে প্রবেশাধিকারের কথা বলেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী আশিকের মতে, তিনি ট্যাগিং ও বিভাজনের রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন না। ফৌজদারি মামলা ছাড়া সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাই। তিনি জানান, বহিরাগত সমস্যা ধীরে ধীরে সমাধান করা হবে এবং প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্য বাড়ানো হবে।
এই বিতর্ক ডাকসু নির্বাচনের প্রার্থীদের নিজেদের অবস্থান ও পরিকল্পনা তুলে ধরার একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
Discussion about this post