ক্রীড়া প্রতিবেদক :
৩০ দেশের আরচ্যার নিয়ে ৮ নভেম্বর শুরু হওয়া তীর এশিয়ান আরচ্যারী চ্যাম্পিয়নশিপের পর্দা নামল শুক্রবার। জাতীয় স্টেডিয়ামের খেলা নিয়ে শুরু হয়েছিল প্রতিযোগিতা, আর্মি স্টেডিয়ামে হলো শেষ।
এবার ব্যক্তিগত ও দলীয় মিলিয়ে সেরা হয়েছে ভারত। ৬টি স্বর্ণ, ৩টি রৌপ্য ও ১টি ব্রোঞ্জ মিলিয়ে ১০টি পদক জিতেছে তারা। দক্ষিণ কোরিয়া পেয়েছে ২টি স্বর্ণ, ৪টি করে রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ। প্রতিযোগিতার আয়োজক বাংলাদেশ একটি করে রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছে।
১৪ নভেম্বর (শুক্রবার) আর্মি স্টেডিয়ামের প্রতিযোগিতার সমাপ্তি হয় রিকার্ভ নারী দলগত ইভেন্টের ফাইনাল দিয়ে। চাইনিজ তাইপেকে ৬-০ সেট পয়েন্টে (৫৪-৫২, ৫৭-৫৫, ৫৬-৫১) হারিয়ে স্বর্ণপদক জিতে নেয় দক্ষিণ কোরিয়া। কোরিয়ার হয়ে খেলেন জ্যাং মিনহি, কিম সু রিন, নাম সু হিউন (JANG Minhee, KIM Surin, NAM Suhyeon)। উজবেকিস্তানকে ৬-০ সেট পয়েন্টে হারিয়ে আগেই এই ইভেন্টের ব্রোঞ্জ পেয়েছিল মালয়েশিয়া।
রিকার্ভ পুরুষ দলগত ফাইনালে জমজমাট লড়াই হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারতের মধ্যে। টাইব্রেকারে ৫-৪ সেট পয়েন্টের ব্যবধানে (৫৬-৫৬, ৫৬-৫৬, ৫৭-৫১, ৫৭-৫৩) জিতে স্বর্ণপদক নিজেদের করে নেয় ভারত। চার সেটে দুই দলের পয়েন্ট সমান (৪-৪) হলে টাইব্রেকারে গড়ায় খেলা। সেখানেও তিন তীর ছোঁড়ার লড়াইয়ে দুই দল ২৯ স্কোর করে, তবে তীর কেন্দ্রবিন্দুর (inner Ten) কাছাকাছি হওয়ার সুবাদে ২৯+ পয়েন্ট নিয়ে জিতে যায় সঞ্জয় ইয়াশদীপ ভোগে, অতনু দাস ও রাহুলকে (BHOGE Yashdeep Sanjay, DAS Atanu, RAHUL Rahul) নিয়ে গড়া ভারত দল। এই ইভেন্টের ব্রোঞ্জ আগের দিন (বৃহস্পতিবার) জিতেছিল উজবেকিস্তান।
রিকার্ভ দলগত মিশ্র দ্বৈতে একপেশে লড়াইয়ে ৬-২ সেট পয়েন্টে (৩৬-৩৫, ৩৬-৩৭, ৩৪-৩৬, ৩৪-৩৫) উজবেকিস্তানকে হারিয়ে স্বর্ণপদক পেয়েছে চাইনিজ তাইপে। চাইনিজ তাইপের হয়ে খেলেন লি তিসাই-চি ও তাই ইউ-হুসুয়ান (LI Tsai-Chi, TAI Yu-Hsuan) জুটি।
রিকার্ভ দলগত মিশ্র দ্বৈতের ব্রোঞ্জ নির্ধারণী ম্যাচে ভারতকে ৬-০ সেট পয়েন্টে উড়িয়ে দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার জ্যাং মিনহি-সিও মিনগি (JANG Minhee, SEO Mingi) জুটি।
দিনের দ্বিতীয় সেশনে রিকার্ভ নারী এককে স্বর্ণপদক জিতেছেন ভারতের অঙ্কিতা ভাকাত। ফাইনালে তিনি ৭-৩ সেট পয়েন্টে (২৯-২৭, ২৬-২৬, ২৬-২৮, ২৯-২৮, ২৯-২৮) হারিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার (Nam Suhyeon) নাম সুহেউনকে। এই ইভেন্টের ব্রোঞ্জের লড়াইয়ে টাইব্রেকারে ৬-৫ সেট পয়েন্টে জিতেছেন ভারতের দ্বীপিকা কুমারী। তিনি হারিয়েছেন স্বদেশী সঙ্গীতাকে। ৫-৫ সমতার পর টাইব্রেকারে দুজনের ১০ স্কোর করেন, তবে কেন্দ্রবিন্দুর কাছাকাছি নিশানা ভেদ করে জয় পান দ্বীপিকা।
রিকার্ভ পুরুষ এককের ফাইনাল দিয়ে শেষ হয় এবারের তীর এশিয়ান আরচ্যারী চ্যাম্পিয়নশিপস। এই ইভেন্টে হয়েছে ‘অল ইন্ডিয়া’ ফাইনালে। ভারতের (Bommadevara DhiraJ) ধীরাজ বোম্মাদেভারা ৬-২ সেট পয়েন্টে (২৮-২৮, ২৯-২৬, ২৮-২৮, ২৮-২৬) স্বদেশি রাহুলকে হারিয়ে স্বর্ণপদক জিতে নেন। এই ইভেন্টের ব্রোঞ্জের লড়াইয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সিও মিনগি ৭-১ সেট পয়েন্টে স্বদেশি (Jang Chaehwan) জ্যাং চিয়েহাওয়ান হারিয়েছেন।
এশিয়ান আরচ্যারী ফেডারেশনের সভাপতি ও তীর এশিয়ান আরচ্যারী চ্যাম্পিয়নশিপসের লোকাল অর্গানাইজিং কমিটির চেয়ারম্যান কাজী রাজীব উদ্দীন আহমেদ চপল বলেন-
“অবশ্যই আমাদের খেলোয়াড়েরা যদি ভালো পারফরম না করতে পারে, আয়োজক হিসেবে, এশিয়ান আরচ্যারীর সভাপতি হিসেবে আমি যতই ভালো করি না কেন, বাংলাদেশের সুনাম হবে না। এশিয়ান আরচ্যারীর সভাপতি পদে আমার বিজয় এবং আমাদের ছেলে মেয়েদের পদক অর্জন-সব মিলিয়ে আমরা সবাই উচ্ছ্বসিত।
“যদিও ব্রোঞ্জ পদক-এটা কুলসুমের জন্য বিশাল পাওয়া। একটা নতুন মেয়ে, প্রথম আন্তর্জাতিক ইভেন্টে, এত বড় আসরে প্রথম খেলতে নেমেছিল, পদক পেল, আমার মতে সে খুব ভালো ফল করেছে এবং তাকে সাধুবাদ দেওয়া উচিত।”
আর্চারি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তানভীর আহমেদ বলেন-
আমার কাছে খুবই ভালো লাগছে। অনেক দিনের কষ্ট, পরিশ্রম, ত্যাগ ও পরিশ্রমের পর আমাদের আয়োজন শেষ হয়েছে সফলভাবে। সিটি গ্রুপ এবং সরকারের ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আমাদের পাশে ছিল, এজন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা সফলভাবে এই আয়োজন সম্পন্ন করতে পেরেছি।
এ নিয়ে আমরা তৃতীয়বারের মতো আমরা এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপস আয়োজন করছি। তো বললেই আয়োজন করা যায় না, এশিয়ান আরচ্যারী ফেডারেশন অতীত অভিজ্ঞতা থেকেই জানত, তাদের আত্মবিশ্বাস ছিল এই আয়োজন আমরা সুন্দরভাবে করতে পারব। এটাও আমাদের বড় একটা পাওয়া। আপনারা জানেন, নানা বাধা প্রতিকূলতার মধ্যে দুই ভেন্যুতে খেলতে হয়েছে, তারপরও এটা আমরা সফলভাবে আয়োজন করতে পেরেছি, এটা আনন্দের ব্যাপার।
বাংলাদেশ আরচ্যারী ফেডারেশন সভাপতি ড. মোখলেসুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশের অর্জনে (কাজী রাজীব উদ্দীন আহমেদ চপলের এশিয়ান আরচ্যারী ফেডারেশনের সভাপতি হওয়ায়) আমি গর্ব অনুভব করছি। নির্বাচনের মাধ্যমে চার বছরের জন্য এশিয়ান আরচ্যারীতে বাংলাদেশে লিডারশিপে এলো। ফলে এখানে আরচ্যার, জাজ বা আরও অনান্য যারা আছেন, আরচ্যারী সংশ্লিষ্ট, তাদের সবাইকে আমি হাসিমুখে দেখছি। হাসিমুখ দেখা বিরল, কিন্তু আমি এখানে সেটাই দেখছি।”
“যারা এই আয়োজনের পেছনে আছেন, যাদের দেখা যাচ্ছে না, আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। সকলে মিলে এই আয়োজনকে আজ এখানে এনেছে। সরকার সহযোগিতা করেছে। আমরা খেলোয়াড়দেরও একটু মূল্যায়ন করার চেষ্টা করছি, যাতে তারা দেশকে আরও কিছু দিতে পারে। কেননা, তারাই দেশের অ্যাম্বাসেডর।”










Discussion about this post