ধর্ম ডেস্ক:
আজ আমরা পৃথিবীতে যখন একটি ভূমিকম্প অনুভব করি, কয়েক সেকেন্ডের দুলুনিতে আমাদের হৃদয় ভয়ে কেঁপে ওঠে। কিন্তু কেয়ামতের দিন?—সেদিন এই ভূমিকম্প কোনো সাধারণ কম্পন হবে না; বরং এটি হবে পৃথিবীর চূড়ান্ত ধ্বংস, প্রলয়ের শুরু। সে দিন সূর্য আর আলো দেবে না, আকাশ আর শান্ত থাকবে না, পৃথিবী তার ভারসাম্য হারাবে। মানুষ দিশেহারা হয়ে ছুটবে কিন্তু কোথাও আশ্রয় পাবে না।
ইসলাম আমাদের সেই দিনের জন্য সাবধান করে দিয়েছে, কারণ কেয়ামত শুধু ভয়ানক দিনই নয় বরং সেটি আমাদের আমলের হিসাব নেওয়ার দিন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন— ‘কেয়ামত এমন এক মুহূর্তে আসবে যখন মানুষ একেবারেই অপ্রস্তুত থাকবে। পৃথিবী তার শক্তি সহ্য করতে পারবে না, আর মানুষ হারিয়ে যাবে অসহায়তায়।
১. কেয়ামতের চিহ্ন: ভূমিকম্প ও পৃথিবীর ধ্বংস
কুরআন-এ আল্লাহ তাআলা আমাদের স্মরণ করিয়েছেন, কেয়ামতের দিন পৃথিবী ভয়ংকরভাবে কেঁপে উঠবে। আল্লাহ তাআলা বলেন—
إِذَا زُلْزِلَتِ الْأَرْضُ زِلْزَالَهَا – وَ اَخۡرَجَتِ الۡاَرۡضُ اَثۡقَالَهَا
‘যখন পৃথিবী তার পূর্ণ শক্তিতে কেঁপে উঠবে। আর পৃথিবী তার (ভেতরের যাবতীয়) বোঝা বাইরে নিক্ষেপ করবে।’ (সুরা আল-জিলজাল: আয়াত ১-২)
এখানে বোঝা বলতে আমাদের কৃতকর্ম, মঙ্গল ও অসৎ কাজ বোঝানো হয়েছে। পৃথিবীর সমস্ত চরম শক্তি প্রকাশ পাবে, যা মানবজাতিকে আতঙ্কিত করবে। ভাবুন… আজ যে পৃথিবীতে আমরা দাঁড়িয়ে আছি, সেই পৃথিবীই একদিন আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে।
২. কেয়ামতের ভয়ানক দৃশ্য
কেয়ামতের দিনটি শুধু শারীরিক ধ্বংস নয়, বরং সবার জন্য চরম আতঙ্কের দিন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
إِنَّ السَّاعَةَ لَا تَأْتِي حَتَّى تَرَوْا الْأَرْضَ زَلْزَلَتْ وَتَتَفَجَّرَ الْجِبَالُ كَمَا تَتَفَجَّرُ السَّنَابِلُ
‘কেয়ামত আসবে না যতক্ষণ না দেখবে পৃথিবী প্রচণ্ডভাবে কেঁপে উঠছে এবং পাহাড়গুলো শস্যগুচ্ছের মতো ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে।’ (সহীহ বুখারি, হাদিস ৬৪২১)
সেদিন— পাহাড় আর শক্ত থাকবে না, বরং তুলার মতো উড়তে থাকবে। সমুদ্র উত্তাল হবে অগ্নি-জ্বালায়। আকাশ ছিন্নভিন্ন হবে, সূর্য নিভে যাবে। শিশুদের চুল সাদা হয়ে যাবে সেই আতঙ্কে। এ দৃশ্য মানুষের হৃদয়কে এমনভাবে নাড়া দেবে, যা কোনো ভাষায় বর্ণনা সম্ভব নয়।
৩. মানুষ ও জীবজন্তুর অবস্থা
মানুষ আতঙ্কে দৌড়াবে, কিন্তু কোথাও নিরাপত্তা পাবে না। মা তার দুধের বাচ্চাকে ভুলে যাবে। গর্ভবতী নারী ভয়েই গর্ভপাত করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন—
یَوۡمَ تُبَدَّلُ الۡاَرۡضُ غَیۡرَ الۡاَرۡضِ وَ السَّمٰوٰتُ وَ بَرَزُوۡا لِلّٰهِ الۡوَاحِدِالۡقَهَّارِ
‘যেদিন এই পৃথিবী পরিবর্তিত হয়ে অন্য পৃথিবী হবে এবং আকাশমন্ডলীও এবং মানুষ উপস্থিত হবে আল্লাহর সামনে, যিনি এক, পরাক্রমশালী।’ (সুরা ইবরাহিম: আয়াত ৪৮)
সেদিন এই পৃথিবীর আকার, পরিবেশ, অবস্থা—সবই বদলে যাবে। মানুষ ভুলে যাবে সে কে। ভুলে যাবে তার পরিবার, তার সম্পদ, তার সম্মান। শুধু থাকবে একটাই চিন্তা—আমার পরিণতি কোথায়?
৪. আমাদের জন্য শিক্ষা
এই ভয়াবহ বর্ণনা আমাদের ভয় দেখানোর জন্য নয়; বরং আমাদের জাগিয়ে তোলার জন্য। আজই নিজের জীবনটা ঠিক করার সময়—
> নামাজ ঠিক করুন
> সৎ কাজ বাড়ান
> অন্যের প্রতি সদয় হন
> পাপ থেকে দূরে থাকুন
> তওবা করুন
> প্রতিদিন অন্তত একটি নেক কাজ করুন, যেন কেয়ামতের দিন আল্লাহ আপনার প্রতি দয়া করেন।
কেয়ামত ও প্রলয়ঙ্কারী ভূমিকম্পের বর্ণনা আমাদের ভীত করার জন্য নয়, বরং আমাদের প্রস্তুত করার জন্য। কারণ সেদিন কেউ আমাদের রক্ষা করতে পারবে না—না পরিবার, না সম্পদ, না ক্ষমতা। যখন পৃথিবী ভেঙে পড়বে, আকাশ ছিন্ন ভিন্ন হবে, মানুষ দিশেহারা হবে—সেদিন একমাত্র নিরাপত্তা হবে আল্লাহর দয়া। তাই আজই নিজের আমলকে ঠিক করি। আজই ফিরে যাই আল্লাহর দিকে। যেন সেই মহাদিন আমাদের জন্য শাস্তির নয়—মুক্তির দিন হয়ে ওঠে।










Discussion about this post