নিজস্ব প্রতিবেদক
এই রূপালি গিটার ফেলে, একদিন চলে যাবো দূরে বহুদূরে… গানটি শুনলেই আজো চোখ ভিজে আসে লাখো ভক্তের। যে কণ্ঠ এক সময় ছিল প্রাণের স্পন্দন, যে গিটার বাজলেই কেঁপে উঠত কনসার্ট মঞ্চ, সেই কিংবদন্তি শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু আজ আমাদের মাঝে নেই- আজ তার সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী।
২০১৮ সালের এই দিনেই (১৮ অক্টোবর) কোটি ভক্তকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান বাংলা ব্যান্ডসংগীতের অগ্রদূত আইয়ুব বাচ্চু। সময় গড়িয়েছে সাত বছর, কিন্তু বাচ্চুর রেখে যাওয়া গান, সুর, আর আবেগ যেন আজও ঠিক ততটাই জীবন্ত।
বাংলাদেশের ব্যান্ডসংগীতকে যাদের হাত ধরে পরিচিতি ও প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, তাদের শীর্ষ সারির একজন ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। আশির দশকের শুরুতে ব্যান্ড জগতে পা রাখেন এই প্রতিভাবান শিল্পী। চট্টগ্রামে জন্ম নেওয়া বাচ্চু শৈশব থেকেই গানের প্রতি অনুরাগী ছিলেন। কিশোর বয়সেই গড়ে তোলেন ব্যান্ড ‘গোল্ডেন বয়েজ’, যার নাম পরে বদলে হয় ‘আগলি বয়েজ’। সেই ব্যান্ডে গিটার বাজাতেন বাচ্চু, আর গায়ক ছিলেন আরেক কিংবদন্তি কুমার বিশ্বজিৎ।
তার সংগীত যাত্রা এগিয়ে যায় সোলস-এর মাধ্যমে, আর পরবর্তীতে এলআরবি ব্যান্ড গঠন করে ব্যান্ড জগতে এক নতুন ধারা সৃষ্টি করেন।
চার দশকের দীর্ঘ সংগীত ক্যারিয়ারে আইয়ুব বাচ্চু প্রকাশ করেছেন ১৬টি একক অ্যালবাম ও ১২টিরও বেশি ব্যান্ড অ্যালবাম। তাঁর উল্লেখযোগ্য অ্যালবামগুলোর মধ্যে রয়েছে-
ব্যান্ড অ্যালবাম- ‘সুখ’, ‘তবুও’, ‘ঘুমন্ত শহরে’, ‘স্বপ্ন’, ‘আমাদের বিস্ময়’, ‘মন চাইলে মন পাবে’, ‘অচেনা জীবন’, ‘মনে আছে নাকি নাই’, ‘স্পর্শ’, ‘যুদ্ধ’।
একক অ্যালবাম- ‘রক্ত গোলাপ’, ‘ময়না’, ‘কষ্ট’, ‘সময়’, ‘প্রেম তুমি কী’, ‘পথের গান’, ‘জীবন’, ‘সাউন্ড অব সাইলেন্স’, ‘জীবনের গল্প’।
তার গাওয়া বহু গান আজো অগণিত শ্রোতার হৃদয়ে বাজে প্রতিদিন – সেই তুমি, কষ্ট পেতে ভালোবাসি, এখন অনেক রাত, মেয়ে, মেয়ে সুখী নয়, হাসতে দেখো গাইতে দেখো এবং এক আকাশের তারাসহ প্রত্যেকটি গান যেন একটি জীবন্ত আবেগ, একটি স্মৃতির ভাণ্ডার।
আইয়ুব বাচ্চু শুধু কণ্ঠেই নন, গিটারেও ছিলেন অসাধারণ। বাংলাদেশের রক ও ব্লুজ ধারার সংগীতে তিনি এনেছিলেন নতুন মাত্রা। তাঁর বাজানো একেকটি সলো, একেকটি লাইভ পারফর্ম্যান্স আজো ইউটিউব আর মেমোরি ক্লিপে গুমরে কাঁদায় ভক্তদের।
আজও দেশের নানা প্রান্তে, বিশেষ করে চট্টগ্রামে, তার জন্মভিটায় ভক্তরা জড়ো হন তাকে শ্রদ্ধা জানাতে। অনেকে গান গেয়ে, অনেকে মোমবাতি জ্বালিয়ে, কেউ কেউ আবার নীরবে চোখের জলে স্মরণ করেন প্রিয় বাচ্চুকে।
Discussion about this post