নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ‘নাশকতা ছিল না’ বলে জানিয়েছে তদন্ত দল। মঙ্গলবার বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার কাছে দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে বৈদ্যুতিক ‘শর্ট সার্কিট’ থেকে আগুনের সূত্রপাতের কথা বলা হয়েছে।
দুর্যোগ ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক ই আজম এ প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন। পরে বিকেলে ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনের বিস্তারিত তুলে ধরেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
তিনি বলেন, এটা কোনো নাশকতা ছিল না। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের কারণে এই আগুনটা লাগে। কুরিয়ার শেডের বর্ধিত অংশের উত্তর-পশ্চিম কোণের পাশাপাশি অবস্থিত কয়েকটি কুরিয়ার এজেন্সির খাঁচাগুলোর মধ্যবর্তী স্থানে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়।
প্রেস সচিব আরো বলেন, বিভিন্ন কুরিয়ার এজেন্সি জন্য নির্ধারিত ৪৮টি ছোট ছোট লোহার খাঁচার অফিস ছিল সেখানে। শেডের ভেতরে অফিস এলাকায় ফায়ার অ্যালার্ম, স্মোক ডিটেক্টর ছিল না। কোনো অগ্নিনির্বাপক হাইড্রেন্ট ছিল না। কোনো ধরনের নিয়মের তোয়াক্কা ও সতর্কতা ছাড়াই পলিথিনে মোড়ানো কাপড়ের রোল, রাসায়নিক পদার্থ পারফিউম এবং বডি স্প্রে, ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র ব্যাটারি ওষুধজাত পণ্যের কাঁচামালের মত অত্যন্ত দাহ্য এবং অন্যান্য দাহ্য পদার্থ এলোপাতাড়িভাবে সেখানে স্তূপ করে রাখা হয়েছিল।
গত ১৮ অক্টোবর বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন লাগে, যা নিয়ন্ত্রণে দুই দিন সময় লেগে যায়।
ঘটনার বর্ণনায় প্রতিবেদনে বলা হয়, আগুন লাগে ২টা ৯ মিনিটে, প্রথম দৃশ্যমান হয় ২টা ১৫ মিনিটে। প্রথম একজন আনসার সদস্যের নজরে আসে। সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের সর্বপ্রথম অগ্নিনির্বাপক গাড়ির আসে ২টা ২২ মিনিটে। সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের দ্বিতীয় অগ্নিনির্বাপক গাড়ির আসে ২টা ২৫ মিনিটে। উত্তরা ফায়ার ব্রিগেডের সর্বপ্রথম অগ্নিনির্বাপক গাড়ি আসে ২টা ৫০ মিনিটে। তখন ঘটনাস্থল থেকে ১৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় আগুন জ্বলচ্ছিল।
প্রেস সচিব বলেন, ঘন ঘন তালা লাগানো লোহার গ্রিলের উপস্থিতি, ফায়ার হাইড্রেন্টের অনুপস্থিতি, অজানা রাসায়নিক পণ্যের উপস্থিতি, অপর্যাপ্ত পানীয়, কাঠামোগত ধস এবং ধ্বংসাবশেষ ধসে পড়া আগুন নেভানের ক্ষেত্রে বাধা হয়েছিল।
অনুসন্ধানে উঠে আসে, ২০১৩ সলের পর সেখানে সাতটি বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। আগুন প্রতিরোধ বা নির্বাপনে সিভিল এভিয়েশন অথরিটির ‘তেমন কোনো প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ছিল না’।
প্রতিবেদনে সুপারিশে বলা হয়, বিদ্যমান ব্যবস্থা থেকে সরে এসে বিমানবন্দর রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনায় একটি স্বতন্ত্র কর্তৃপক্ষ অপারেটর প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। সিভিল এভিয়েশন শুধু নিয়ন্ত্রণকারী রেগুলেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কার্যক্রম শুধুমাত্র ফ্লাইট পরিচালনার মধ্যে সীমাবদ্ধকরণ। একজন দক্ষ অপারেটরকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং অন্যান্য কার্যক্রমের দায়িত্ব অর্পণ, ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে সমন্বয় করতে বেবিচকের দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি বিশেষ শ্রেণির ফায়ার স্টেশন নির্মাণ, এছাড়া বিপজ্জনক পণ্য এবং রাসায়নিক গুদাম অন্যত্র স্থানান্তর করার সুপারিশও করা হয়েছে।










Discussion about this post