নিজস্ব প্রতিবেদক
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে অবৈধ মাটি কেটে নেওয়ার প্রতিবেদন করায় আওয়ামী লীগ ও যুবদলের নেতার নেতৃত্বে সাংবাদিক মাইনুদ্দিন রুবেলের (৩৩) ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।
শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) রাত পৌনে আটটার দিকে উপজেলা পরিষদের সামনে এ হামলা হয়।
মাইনুদ্দিন বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের ভিটিদাউদপুর গ্রামের সোহরাব উদ্দিনের ছেলে। তিনি জেলা শহরের দক্ষিণ মৌড়াইলে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ও জাতীয় দৈনিক দেশ রূপান্তরের ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা হিসেবে কর্মরত আছেন।
ভুক্তভোগীর অভিযোগ, উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব থেকে বহিষ্কৃত নেতা মোখলেছুর রহমান ওরফে লিটন মুন্সি, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সম্পাদক কাইয়ুম মিয়াসহ তাদের ১৫-২০ জন লোক সন্ত্রাসী কায়দায় এই হামলা চালিয়েছেন।
গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে অংশ নেওয়ায় দল থেকে মোখলেছুরকে বহিষ্কার করা হয়। তিনি উপজেলার পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যানও। ইতঃপূর্বে সাংবাদিক মাইনুদ্দিন রুবেলকে আক্রমণের চেষ্টার ঘটনায় তিনি থানায় সাধারণ ডায়রি করেছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সম্পাদক কাইয়ুম মিয়া গত ৫ আগস্টের পর থেকে উপজেলার সর্বত্রই অবৈধভাবে মাটি কেটে ট্রাক্টরে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে আসছেন। পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন পুকুর অবৈধভাবে ভরাট করে আসছেন। রাতদিন এস্কেভেটরে মাটি কেটে ট্রাক্টরে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করছেন কাইয়ুম। কাইয়ুমের এই কাজ দেখাশোনা করছেন তার ছেলে মো. মুন্না, রাসেল মিয়া ও মোবারক হোসেন, চাচাতো ভাই রুবেল মিয়া ও ইছাপুরা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আনিছ মিয়া। এসব কাজে সহায়তা করছেন বহিষ্কৃত যুবদল নেতা মোখলেছুর।
অবৈধভাবে মাটি কাটার ঘটনা এবং সদ্য বিদায়ী বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রওশন আলীর বিভিন্ন অনিয়ম-দুনীর্তি নিয়ে প্রতিবেদন করায় সাংবাদিক মাইনুদ্দিনের উপর ক্ষুব্ধ হন কাইয়ুম ও মোখলেছুর এবং তাদের লোকজন। সাংবাদিক মাইনুদ্দিনের প্রতিবেদনের পর বিজয়নগর থানার ওসি রওশন আলীকে সম্প্রতি পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
শুক্রবার রাত পৌনে আটটার দিকে একটি অনুষ্ঠানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে মাইনুদ্দিন রুবেল বিজয়নগর উপজেলা পরিষদের সামনে আসেন। সেসময় আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা লিটন মুন্সি ও কাইয়ুম মিয়ার নেতৃত্বে ১৫/২০ জন মাইনুদ্দিনের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করেন। তাদের হামলায় মাইনুদ্দিন মাথার ডানপাশে আঘাত পান। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। মাইনুদ্দিনের মাথার ডানপাশে ছয়টি সেলাই লেগেছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত সাংবাদিক মাইনুদ্দিন রুবেল বলেন, মাটি কাটার নিউজ করায় কাইয়ুম, তার ছেলেরা ও ভাইয়েরা আমার ওপর ক্ষুব্ধ হন। বাড়ির সামনে পেয়ে লিটন মুন্সি ও কাইয়ুমের নেতৃত্বে তারা পরিকল্পিতভাবে হামলা করেছে। তারা আমাকে হত্যা করতে চেয়েছে। আমি এই ঘটনার বিচার চাই। সাংবাদিকতা করা কি অন্যায়?
রুবেলের সঙ্গে থাকা উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক নেতা নিজাম উদ্দিন বলেন, আমরা একটি অনুষ্ঠানে যেতে সেখানে অপেক্ষায় ছিলাম। সেখানে শতাধিক মানুষ ছিল। এরই মাঝে তারা এসে রুবেলের ওপর এলোপাতাড়ি হামলা করে রক্তাক্ত করে।
এই ঘটনার পর একাধিকবার চেষ্টা করেও মুঠোফোন না ধরায় বহিষ্কৃত যুবদল নেতা মোখলেছুর রহমান ওরফে লিটন মুন্সি ও কাইয়ুম মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সহিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি আমরা শুনেছি। জড়িতদের আটকের চেষ্টা চলছে।
Discussion about this post