নিজস্ব প্রতিবেদক
বাস্তবতা মেনে তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে উল্লেখ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, আগামী রমজানে খেজুর, ছোলা, তেলসহ অন্যান্য পণ্যের দাম স্থিতিশীল থেকে নিম্নগামী থাকবে বলে আশা করছি। আলুর ক্ষেত্রে আমাদের একটু ব্যর্থতা আছে। তবে আগামী বছর যেন এমন পরিস্থিত না হয়, সে জন্য বর্তমান থেকে শিক্ষা নিয়ে কাজ করছি।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টারস ফোরামের (ইআরএফ) কার্যালয়ে আয়োজিত ইআরএফ-প্রাণ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০২৪ প্রদান অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
বিগত সরকারের সময়ে ‘সাগর চুরি’ করতে গিয়ে সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা হয়েছে বলে মন্তব্য করে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, দুর্নীতির হাত থেকে কিছুই বাদ রাখা হয়নি। প্রতিটি জায়গায় গুটিকয় মানুষের একচ্ছত্র আধিপত্য তৈরি করা হয়েছিল। কৃষিতে গর্ব করার মতো আমাদের অনেক অর্জন রয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের ফলে এখন কৃষি বা অন্যান্য খাতের তথ্যে অসামঞ্জস্যতার কারণে সিদ্ধান্ত গ্রহণে জটিলতা হয়।
তিনি আরও বলেন, বিগত সরকারের আমলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে যেভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, তার একটা প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। টিসিবি সারা দেশে যে কার্ডের মাধ্যমে এক কোটি পরিবারের মধ্যে ভর্তুকিমূল্যে খাদ্যপণ্য বিতরণ করে, সেটি তাত্ত্বিকভাবে সুন্দর একটি প্রকল্প। তবে বিগত সরকারের সময়ে এই কার্ড বিতরণ এবং ডিলার নির্ধারণের প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। বর্তমান সরকার এসব অনিয়মকে চিহ্নিত করতে কাজ করছে। বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, টিসিবির জন্য বছরে সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকার একটি বাজেট রয়েছে। টিসিবিকে সরকার সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার বেশি ভর্তুকি দিয়ে থাকে। আপনারা শুনে অবাক হবেন, সারা দেশে টিসিবির ১৬টি অফিস রয়েছে; যাতে ড্রাইভার-দারোয়ানসহ সব মিলিয়ে ১৪২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। এই জনবল ও কার্যক্রমের জন্য ১১ হাজার কোটি টাকার বাজেট থাকার বিষয়টি হাস্যকর।
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ইতিমধ্যে এক কোটি পরিবারের কার্ডের মধ্যে ৫৬ থেকে ৫৭ লাখ কার্ডধারীকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। বাকি কার্ডগুলোকে বাদ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া পুরোনো কার্ডের পরিবর্তে নতুন স্মার্ট কার্ড আনা হয়েছে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দেশের বেশ কয়েকটি গ্রামে ব্যক্তিগতভাবে দেখতে যাব, কারা এসব কার্ড গ্রহণ করছেন এবং কারা বিতরণ করছেন। আশা করছি, চার থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে কার্ড বিতরণে একটা স্থিতি আনতে পারব। রাষ্ট্রীয় অর্থ যেন ইনসাফের সঙ্গে ব্যয় হয়, সেটি নিশ্চিত করা আমাদের লক্ষ্য।
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ইতিমধ্যে অর্থনীতির ওপর শ্বেতপত্র প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা যায়, ২৮ লাখ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। এটি দেড় বছরের জাতীয় আয়কে একত্র করলে তার সমান হয়। গুটিকয় মানুষ অর্থ চুরি করে নিয়ে গেছেন। এটা অবশ্যই নাগরিক হিসেবে আমাদের জন্য অসম্ভব চিন্তার বিষয়।
বাণিজ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, তেল বা চিনির বাজারে মুষ্টিমেয় কয়েকজন স্থানীয় আমদানিকারক রয়েছেন। এর মধ্যে একজন সর্ববৃহৎ লোক দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন, যিনি বাজারের একটা বৃহৎ অংশ এবং আট-দশটা ব্যাংকও নিজে ম্যানেজ করতেন। এই যে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার ফলে একটা সরবরাহ-ঘাটতি তৈরি হয়েছে, ওই তুলনায় কিন্তু আপনারা বাজারে রিঅ্যাকশন টের পাচ্ছেন না।
অনুষ্ঠানে আরও অতিথি ছিলেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী আহসান খান চৌধুরী এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
Discussion about this post