আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিককে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেয়ার কথা ভাবছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। টিউলিপের পদে দায়িত্ব পালনের জন্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের শর্টলিস্ট করাও শুরু হয়ে গেছে।
শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) বেশ কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে দ্য টাইমস।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, বাংলাদেশের সাবেক স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পর্কের কারণে টিউলিপ সিদ্দিককে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হলে তার স্থলাভিষিক্ত হবেন এমন প্রার্থীদের নাম দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্যার কেয়ার স্টারমারের জ্যেষ্ঠ সহযোগীরা বিবেচনা করছেন। ঊর্ধ্বতন ওই কর্মকর্তারা সপ্তাহান্তে যুক্তরাজ্যের এই ট্রেজারি মন্ত্রীর স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন এমন প্রার্থীদের চিহ্নিত করেছেন বলেও জানা গেছে।
এর আগে গত সোমবার টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর মিনিস্ট্রিয়াল স্ট্যান্ডার্ডসের ইন্ডিপেনডেন্ট অ্যাডভাইজার লাউরি ম্যাগনাসের কাছে নিজের বিরুদ্ধে তদন্তের আহ্বান জানানোর প্রকাশ্য ঘোষণা দেওয়ার আগেই কর্মকর্তারা সম্ভাব্য প্রার্থীদের চিহ্নিত করেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, যদিও প্রদানমন্ত্রী স্টারমার বলেছেন- তিনি টিউলিপ সিদ্দিকের উপর পূর্ণ আস্থা রেখেছেন। দেশটির ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটের একজন মুখপাত্রও টিউলিপকে তার পদ থেকে সরিয়ে ওই পদে দায়িত্ব পালনের জন্য সম্ভাব্য ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরির বিষয়টিকে ‘অসত্য’ বলে দাবি করেছেন। কিন্তু তারপরও টাইমসকে বলা হয়েছে- টিউলিপকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলে কে তার উত্তরসূরি হতে পারেন তা প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের ঘনিষ্ঠদের মধ্যে কেউ কেউ অন্তত অনানুষ্ঠানিকভাবেই বিবেচনা করছেন।
সম্প্রতি টোরি এমপিরাও টিউলিপের পদত্যাগ দাবি করেছেন। ব্রিটেনের বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির এমপিরা টিউলিপের উদ্দেশে বলেছেন, ফ্ল্যাট উপহার পাওয়ার বিষয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দিতে না পারলে তিনি যেন ট্রেজারি মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
এ বিষয়ে টোরি এমপি বব ব্ল্যাকম্যান বলেছেন, টিউলিপ সিদ্দিককে তার সম্পত্তির লেনদেনের বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে এবং ব্যাখ্যা করতে হবে আসলে কী ঘটেছে এবং কেন। যদি তিনি তা না করেন তবে মন্ত্রী হিসেবে তিনি তার কাজ চালিয়ে যেতে পারেন না।
যুক্তরাজ্যের ইলেক্টোরাল রোল ডেটার তথ্য বলছে, ২০০৪ সালে উপহার হিসেবে পাওয়ার পর কিং’স ক্রসের সেই ফ্ল্যাটটিতে কয়েক বছর ছিলেন টিউলিপ। এরপর তার অন্য ভাই-বোনরা ছিলেন আরও বেশ কয়েক বছর। বর্তমানে ফ্ল্যাটটি ভাড়া দিয়েছেন টিউলিপ। সেখান থেকে বাৎসরিক ৯০ হাজার পাউন্ড (১ কোটি ৩৫ লাখ ৬৮ হাজার টাকা) উপার্জন হচ্ছে তার।
নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগ পর্যন্ত লেবার পার্টির পাশাপাশি আওয়ামী লীগের ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং যুক্তরাজ্য শাখার ‘লবিং ইউনিট অ্যান্ড ইলেকশন স্ট্র্যাটেজি টিম’-এ সংশ্লিষ্ট ছিলেন তিনি। তার নির্বাচনে জয়ের ক্ষেত্রেও এ সংশ্লিষ্টতার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তবে কোনও নির্বাচনী হলফনামায় ফ্ল্যাটটির বিষয়ে উল্লেখ করেননি টিউলিপ।
হলফ নামায় তিনি যুক্তরাজ্যের হাইগেট এবং হ্যাম্পস্টেড এলাকার ফ্ল্যাটের ব্যাপারে উল্লেখ করেছেন। ৭০ বছর বয়সী আবদুল মোতালিফ বর্তমানে পূর্ব লন্ডনে মুজিবুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে থাকেন। মুজিবুল ইসলাম আওয়ামী লীগের একজন সাবেক এমপির সন্তান।
এসব অভিযোগ নিয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের ওপর পদত্যাগের চাপ বাড়লেও অতীতে তার পাশেই ছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। তবে এখন তিনি সেই অবস্থান থেকে সরে এলেন।
টিউলিপ সিদ্দিক বর্তমানে যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি)। এ পদে দেশটির আর্থিক খাতে দুর্নীতি বন্ধের দায়িত্বে আছেন তিনি। টিউলিপ গত আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে। কিন্তু তার জন্মভূমি বাংলাদেশেই এখন তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, যেখানে তিনি এবং পরিবারের চার সদস্যের বিরুদ্ধে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রায় ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। গত মাসে এই অনুসন্ধান শুরু করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এ ছাড়া গত শুক্রবার টিউলিপ সিদ্দিককে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল ফিন্যান্সিয়াল টাইমস। তাতে বলা হয়, লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকার কাছে টিউলিপের মালিকানায় একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। ২০০৪ সালে সেটি আবদুল মোতালিফ নামের একজন আবাসন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বিনা মূল্যে পেয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছিল আবদুল মোতালিফের।
Discussion about this post