নিজস্ব প্রতিবেদক
চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে সোমবার সকালে হাজির করা হয় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাণিজ্য বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ ১২ জনকে।
রাজধানীর বিভিন্ন থানার পৃথক মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুজ্জামান। এরপর রাজধানীর পৃথক থানার মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানোর জন্য আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তারা। শুনানি শেষে বিচারক গ্রেফতার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। এদিকে কারাগার থেকে টিস্যু পেপারে লিখে আইনজীবীর মাধ্যমে ‘গোপন বার্তা’ দেন পলক। এরআগে ২০ জানুয়ারি একই আদালতে টিস্যুতে চিঠি লিখেছিলেন সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
দেখা যায়, দীপু মনির বাঁ হাতে কয়েকটি টিস্যু পেপার। আর ডান হাতে কলম। দীপু মনি টিস্যুর ওপর কিছু লিখতে শুরু করেন।
প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে টিস্যু পেপারের ওপর ‘চিঠি’ লেখেন দীপু মনি। কাঠগড়ার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এক ব্যক্তির (আইনজীবীর পোশাক পরা) হাতে দীপু মনি চিঠিটি তুলে দেন। এরপর ওই ব্যক্তি নিজের মোবাইল ফোনে চিঠির ছবি তোলেন। তিনি টিস্যু পেপার তার বাঁ হাতে ভাঁজ করে রাখেন। চিঠির ছবি তোলার বিষয়টি তিনি আকারে-ইঙ্গিতে দীপু মনিকে জানান।
আদালতে দেখা যায়, দীপু মনি জনৈক ব্যক্তির হাতে চিঠি হস্তান্তরের পর তিনি জুনাইদ আহমদের সঙ্গে কথা বলেন। সালমান এফ রহমানের সঙ্গেও দীপু মনিকে হাসিমুখে কথা বলতে দেখা যায়।
কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে চিঠি লেখার বিষয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পিপি ওমর ফারুক বলেন, এজলাসকক্ষের যেখানে দাঁড়িয়ে তিনি শুনানি করছিলেন, সেখান থেকে কাঠগড়া কিছুটা দূরে। আদালতে অনেক আইনজীবী ছিলেন। জনাকীর্ণ আদালতে দীপু মনির চিঠি লেখার বিষয়টি তার নজরে আসেনি। যদি নজরে আসত, তাহলে অবশ্যই তিনি আদালতের দৃষ্টিতে বিষয়টি আনতেন। কারণ, একজন আসামি আদালতের হেফাজতে থাকেন। আদালতের অনুমতি ছাড়া এখানে তিনি চিঠি লিখতে, হস্তান্তর করতে পারেন না; কিংবা আইনজীবী ব্যতীত অন্য কারও সঙ্গে কথা বলা যায় না।
দীপু মনির আইনজীবী গাজী ফয়সাল ইসলাম বলেন, তার মক্কেল এ ধরনের কোনো চিঠি লিখেছেন কি না, তা তার নজরে আসেনি। কারণ, জনাকীর্ণ আদালতে তিনি সামনের দিকে অবস্থান করছিলেন। শুনানিতে ব্যস্ত ছিলেন।
গত ১৪ আগস্ট রাতে পলককে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. ওবায়দুর রহমান। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের খিলক্ষেত থানাধীন নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকা থেকে আত্মগোপনে থাকাবস্থায় পলককে গ্রেফতার করা হয়।
শুনানি শুরু হওয়ার আগে জুনাইদ আহমেদ পলকের কাছে ছুটে যান তার আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন রাখি ও তরিকুল ইসলাম। এ সময় কুশল বিনিময়ের সময় কৌশলে আইনজীবী তরিকুল ইসলামের হাতে লেখা একটি টিস্যু পেপার গুঁজে দেন। এ সময় বিষয়টি টের পেয়ে পুলিশ সদস্যরা বলেন, টিস্যু পেপার বা কাগজে কোনো বার্তা দেওয়া নিষেধ। তখন এই আইনজীবী টিস্যু পেপারটি লুকিয়ে ফেলেন।
পরে জানতে চাইলে টিস্যু পেপার দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন আইনজীবী তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘টিস্যু পেপার দেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমরা ওকালতনামায় পলকের স্বাক্ষর নিয়েছি শুধু।’
এছাড়া বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পলক তার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে থাকেন। এ সময় তার আইনজীবীরাও দেশের পরিস্থিতি যেমন-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা কলেজের মারামারির ঘটনা তুলে ধরেন। এরপর আইনজীবীদের সঙ্গে পলকের চলে নানা কথোপকথন। তিনি আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন রাখিকে বলেন, কারাগার থেকে তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। অন্যদের কথা বলতে দিলেও নিরাপত্তার অজুহাতে তাকে দেওয়া হচ্ছে না। তাকে যেন যে কোনো শর্তে কথা বলতে দেওয়া হয় এজন্য আইনজীবীকে আদালতে বলতে বলেন তিনি।
Discussion about this post