নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশে গত আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নেতৃত্বে আসেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অন্তর্বর্তী এই সরকার এরইমধ্যে পার করেছে সাড়ে ৫ মাসেরও বেশি সময়। আগস্ট থেকে গোটা জানুয়ারি— কেমন ছিল সরকারের যাত্রা পথ। এখন আছে কী অবস্থায়, এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন করেছে বেলজিয়ামভিত্তিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি)।
গতকাল প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে আইসিজি বলছে, ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন সরকারের মধুচন্দ্রিমা শেষ। এখন চাপ বাড়ছে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর। শুধু প্রতিশ্রুত সংস্কার নয়, শাসন ব্যবস্থার উন্নতির জন্যও সরকারের ওপর জনগণের চাপ বেড়েছে।
এখন অন্যতম বড় একটা ইস্যু হলো জাতীয় নির্বাচনের তফসিল। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার জন্য বিএনপির দিক থেকে চাপ ছিল। তবে ড. ইউনূস জানিয়েছেন ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে নির্বাচন যতই দূরে থাকুক তা ইতোমধ্যে বিএনপি, অন্যান্য রাজনৈতিক দল (যেমন: জামায়াতে ইসলামী) এবং ছাত্র নেতাদের মধ্যে একটা আলোড়ন তুলেছে।
তারিখ ছাড়াও নির্বাচনী প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন পরবর্তী সময়টা কেমন হতে পারে তা এখনও অনিশ্চিত। এরই মধ্যে ড. ইউনূস বেশ কিছু সংস্কার কমিশন গঠন করেছেন, যার মধ্যে একটি সংবিধান সংস্কারে এবং অন্যটি নির্বাচনী ব্যবস্থা পুনর্গঠনে কাজ করছে। এই কমিশনগুলোর মধ্যে চারটি জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রতিবেদন দিয়েছে, তারা ব্যাপক রাজনৈতিক সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে। ড. ইউনূস নিজেই আরেকটি কমিশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যেটি রাজনৈতিক দলগুলোসহ বিশিষ্ট রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির সাথে আলোচনা করবে।
আইসিজি বলছে, আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে বিএনপি এখন দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। দলটিকে অপেক্ষমান সরকার হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এটাকে ব্যাপকভাবে সরকার ইন ওয়েটিং হিসেবে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়টি নিয়ে অনেকে হতাশ। অতীতে ক্ষমতায় থাকাকালীন, বিশেষ করে ২০০০-এর দশকের শুরুতে, বিএনপির মধ্যে প্রায়ই হাসিনার আওয়ামী লীগের অনুরূপ স্বৈরাচারী প্রবণতা দেখা গেছে। এটি অন্তর্বর্তী সরকার এবং তার সমর্থকদের জন্য একটি প্রধান উদ্বেগের বিষয়। কারণ এ সরকারের সংস্কারের লক্ষ্য দেশকে আবারও স্বৈরাচারের কবলে পড়া থেকে বাঁচানো।
রাজনৈতিক বিষয়ের পাশাপাশি অর্থনীতি নিয়েও লেখা হয়েছে আইসিজির প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে— অর্থনীতি আবার সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার চলমান প্রচেষ্টার সুফল পেতে বাংলাদেশের জনগণের আরও অপেক্ষা করতে হবে।
আরও লেখা হয়েছে, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে এখনো টানাপড়েন রয়েছে, আর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অদূর ভবিষ্যতে যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।
Discussion about this post