মাগুরায় নির্যাতনে মারা যাওয়া আট বছরের শিশুটিকে ধর্ষণে অভিযুক্ত হিটু শেখের বাড়িতে ভাঙচুর করছেন বিক্ষুব্ধ জনতা। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা সাধারণ মানুষ হিটু শেখের বাড়ির সামনে এসে নানাভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
শুক্রবার (১৪ মার্চ) সকালে মাগুরা শহরের নিজনান্দুয়ালী এলাকায় হিটু শেখের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় ভাঙচুর ও পোড়া বাড়িতেই কেউ ঢিল ছুড়ছেন, দেয়াল ভাঙছেন আবার কেউবা গালাগালি করছেন। বেলা ১১টার দিকে হিটু শেখের বাড়ির আঙিনায় থাকা আম গাছসহ বিভিন্ন ফলজ প্রায় ১২টি গাছ কেটে ফেলেন স্থানীয়রা। এভাবে স্থানীয়সহ সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে শিশুটির প্রথম জানাজার পর বিক্ষুব্ধরা হিটু শেখের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা খবর পাওয়ার পরও সেটি নেভাতে পারেনি। তারা অগ্নিনির্বাপণ গাড়ি নিয়ে রওনা দিলেও বিক্ষুব্ধরা আটকে দিলে তারা ফিরে যেতে বাধ্য হয়।
এ ছাড়া বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন। অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবিতে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ভায়নার মোড়ে অবরোধ করে রাখেন। এতে ঢাকা-মাগুরা, যশোর-মাগুরা ও ঝিনাইদহ-মাগুরা সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সড়ক ও মহাসড়কজুড়ে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
মাগুরা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আইয়ুব আলী বলেন, শিশু ধর্ষণে অভিযুক্ত হিটু শেখের বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়ার পর পুলিশ কয়েক দফা সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করলেও বিক্ষুব্ধদের প্রতিরোধের মুখে সেটি সম্ভব হয়নি। তবে গ্রামের নিরীহ সাধারণ মানুষের জানমালের যাতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হয় সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, মাগুরায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে গত ৫ মার্চ রাতে ধর্ষণ ও নিপীড়নের শিকার হয় আট বছরের শিশুটি। বোনের শ্বশুর তাকে ধর্ষণ করেছে বলে জানায় সে। ধর্ষণের ঘটনায় শিশুটি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার বোনের অভিযোগ, গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পরও তাকে চিকিৎসার জন্য না নিয়ে উল্টো ঘরের ভেতরে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়।
পরদিন ৬ মার্চ সকালে প্রতিবেশী এক নারী তাদের ঘরে এলে বিষয়টি প্রকাশ হয়ে পড়ে এবং এরপর শিশুটিকে মাগুরা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। ততক্ষণে শিশুটি অচেতন হয়ে পড়ে। হাসপাতালে গিয়ে বোনের শাশুড়ি চিকিৎসকদের জানান শিশুটিকে জ্বিনে ধরেছে। তবে কিছুক্ষণের মধ্যে চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয়েছে। বিষয়টি টের পেয়ে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান বোনের শাশুড়ি।
৬ মার্চ দুপুরে উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ওইদিন রাতেই পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ঢাকা মেডিকেলে দুইদিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর ৮ মার্চ শনিবার তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়।
ধর্ষণের ঘটনায় মাগুরা সদর থানায় মামলা করেছেন শিশুটির মা। এতে শিশুটির বোনের শ্বশুর, শাশুড়ি, ভাশুর ও ভগ্নিপতিকে আসামি করা হয়েছে। তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলাটি এখন হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হবে।
Discussion about this post