বিনোদন ডেস্ক
স্মরণকালের ভয়াবহতম বন্যাকবলিত দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল। ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, খাগড়াছড়িসহ আশপাশের জেলাগুলো প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে আছে প্রায় অর্ধকোটি মানুষ। শোবিজের অনেক তারকার বাড়িও এসব অঞ্চলে।
কেবল ঘরে পানি ওঠা বাকি : মাহফুজ আহমেদ (অভিনয়শিল্পী)
আমার বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জের জগতপুর গ্রামে। ঘরে পানি ওঠা বাকি আছে কেবল। ঢলের পানি যদি আসে, তাহলে ঘরেও ঢুকে যাবে।
আমার ছোট ভাই, তাঁর স্ত্রী-সন্তান বাড়িতে। আমি নিজেও নিয়মিত বাড়িতে যাওয়া-আসা করি। সারাক্ষণ খোঁজ নিচ্ছি। পাশাপাশি গ্রামের মানুষের খোঁজ-খবরও নিচ্ছি।
গ্রামের মানুষের পাশে থাকার চেষ্টাও করি, এখন তো নৈতিক দায়িত্ব। আপনার সঙ্গে কথা বলার ১০ মিনিট আগেও গ্রামের খোঁজ নিয়েছি। আমি কত বড় সুপারস্টার তা বড় কথা নয়, মানুষ হিসেবে আমি কেমন, সেটাই মুখ্য। পাশের মানুষটা আমার দ্বারা যদি উপকৃত না হয়, তাহলে মানুষ হিসেবে কেন জন্মালাম? এটাই তো পাশে দাঁড়ানোর সময়। এ সময় মানুষের পাশে না থাকাটা বড় অন্যায়।
আত্মীয়-স্বজনের খোঁজও নিতে পারছি না : গিয়াস উদ্দিন সেলিম (নির্মাতা)
ফেনীতে আমার মা থাকতেন। তিনি তিন দিন আগে ঢাকায় চলে এসেছেন। তবে আমার ছোট বোন আছে, ছোট ভাই ও তাঁর পরিবার আছে। আমাদের বাড়িটা ফেনীর একটু উঁচু জায়গায়। রেললাইনের কাছেই, রেললাইনের সমান উঁচু বাড়ির ভিটা। সর্বশেষ জেনেছি, বাড়ির গ্যারেজ ডুবে গেছে। এর পর আর খবর নিতে পারছি না। সবার ফোন বন্ধ। অন্য আত্মীয়-স্বজনের খোঁজও নিতে পারছি না। নিজে গিয়ে কিংবা কাউকে পাঠিয়ে উদ্ধারের চেষ্টা করব, সেটাও সম্ভব না। প্রশাসন থেকে আনাড়ি কাউকে যেতে নিষেধ করছে। পেশাদার লোক দিয়ে উদ্ধার কার্যক্রম চলছে। আমরা গিয়ে আসলে কী করব! প্রার্থনা করা ছাড়া কিছু করার নেই।
আমাদের বাড়িটা ডুবে গেছে : শিহাব শাহীন (নির্মাতা)
আমাদের ফেনীর বাড়িতে কেউ থাকেন না। তবে বাড়িটা ডুবে গেছে। নোয়াখালীতে আমার খালা আছেন। তাঁদের বাড়ির নিচতলায় পানি উঠে গেছে। সেখানকার রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। তবে এখনো পর্যন্ত তাঁরা নিরাপদ আছেন। সবাই মিলে দ্বিতীয় তলায় থাকছেন। কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন হয়নি। আর ফেনীর খোঁজ-খবর নিচ্ছি প্রতিনিয়ত। ফেনীর মূল শহর ট্রাংক রোডে এখনো বুক অব্দি পানি। এত পানি ফেনীর মানুষ কখনো দেখেনি। এই প্রজন্ম তো দূরে, আমরাও দেখিনি। আমার কিছু বন্ধু-বান্ধবের বাড়িও ডুবে গেছে। নিচতলা ছেড়ে দোতলায় উঠে থাকছে। আবার এক বন্ধু একাই তার বাড়ি পাহারা দিচ্ছে। খাবারের সংকটে আছে অনেকে। বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইলে চার্জও দিতে পারছে না। খুব ভয়াবহ অবস্থা। পরশুরাম, ফুলগাজির মানুষের অবস্থা অবর্ণনীয়। স্রোতের কারণে উদ্ধারকাজও করা যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে নিজেকে অসহায় মনে হয়। ভিটা ছেড়ে নিজ দেশেই উদ্বাস্তুর মতো হয়ে গেছে মানুষ। আমরা ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর সঙ্গে কাজ করছি। একটি দল এরই মধ্যে চলে গেছে। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় ফান্ডেও সাধ্যমতো সহযোগিতা করেছি।
খালার বাড়ি অর্ধেক ডুবে গেছে : মুমতাহিনা চৌধুরী টয়া (অভিনয়শিল্পী)
আমার বেড়ে ওঠা রাঙামাটিতে। সেখানে প্রচুর বৃষ্টির কারণে পাহাড়ধস হয়েছে। আমার বাবা সেখানে, তবে তিনি নিরাপদ আছেন। আর আমার দাদা ও নানাবাড়ি নোয়াখালী। আত্মীয়-স্বজনের প্রায় ৬০ শতাংশ সেখানে থাকেন। আমার দুই খালার বাড়ি অর্ধেক ডুবে গেছে। তাঁরা আপাতত মামার বাড়িতে গিয়ে উঠেছেন। দাদাবাড়িতে উঠান পর্যন্ত পানি, মাছের প্রজেক্টগুলো ভেসে গেছে। একটু আগে খবর পেলাম, আমার ফুফুর বাড়িও প্রায় অর্ধেক ডুবে গেছে। এখান থেকে আমরা কিছু করতে পারছি না। তবে সেখানে কিছু টিম কাজ করছে। এই অঞ্চলে উদ্ধারের পাশাপাশি ত্রাণের প্রয়োজন। আমার দাদাবাড়িতে স্কুল-মাদরাসা আছে, সেখানে অনেক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। তাদের জন্য খাবার পাঠানোর চেষ্টা করছি। একটা বিষয়ে বলতে চাই, বন্যার পানি নামতে শুরু করলে তখন কিন্তু সাহায্য আরো বেশি লাগবে। মানুষের ঘরবাড়ি সব তো নষ্ট হয়ে গেছে। সেগুলো মেরামত করতে হবে, নানা রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে পড়বে। তাই আফটার ইফেক্ট মোকাবেলায় কিছু পরিকল্পনা করছি।
বোন আমার মসজিদে আশ্রয় নিয়েছে : সাজিয়া সুলতানা পুতুল (সংগীতশিল্পী)
ফেনী শহরে আমাদের বাড়ি। সেই বাড়িতে আমার ভাই, ভাবি আর তাদের ছোট দুই ছেলেমেয়ে থাকে; থাকে ভাড়াটিয়া। ফেনীতেই থাকেন আমার সেজো বোন। তাঁরও দুটি ছোট বাচ্চা। গতকাল (বৃহস্পতিবার) দুপুর থেকে আর তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। তাঁদের বাড়িতে পানি ঢুকে গেছে। শুধু মেসেঞ্জারে একটি খুদে বার্তা পেয়েছি, মসজিদে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু কোন মসজিদ, জানতে পারিনি। তাঁদের নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। কিছু স্বেচ্ছাসেবক দলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাঁরা জানালেন, আশপাশে স্থানীয় মানুষকে সেভাবে পাচ্ছে না। বানের পানিতে বাড়ির নেমপ্লেট ডুবে গেছে। তাই বাড়িগুলো খুঁজেও পাচ্ছেন না তাঁরা।
ফটিকছড়ির অবস্থা ভালো নয় : ইরফান সাজ্জাদ (অভিনয়শিল্পী)
আমাদের বাড়ি শহরের মধ্যেই। হালদা নদীর খুব কাছেই। বাড়ির পেছনে হালদা নদী, আরেক পাশে কর্ণফুলী। মা-বাবা, চাচা-চাচি, কাজিন সবাই ওখানে। হালদার যে বাঁধ ভেঙেছে, সেটা ফটিকছড়িতে। আমাদের এলাকা থেকে সেটা দূরে। তবে এরই মধ্যে আমাদের বাড়ির কাছেও পানি চলে এসেছে। বৃষ্টি যদি না থামে, কে জানে কী হয়! রাতে ঘুমাতে পারছি না দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতায়। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। সাধ্যমতো মানুষকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। ফটিকছড়িতে আমার অনেক আত্মীয়। সেখানকার অবস্থা ভালো নয়। তবে এরই মধ্যে তাঁদের নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন আসলে সৃষ্টিকর্তার রহম ছাড়া উপায় নেই। বাঁধভাঙা স্রোতে সাধারণ নৌকা টিকছে না, ইঞ্জিনচালিত নৌকা প্রয়োজন।
পরিবারের সদস্যরা শহরে আত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নিয়েছে : জামিল হোসেন (অভিনয়শিল্পী)
আমার বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার বাবুনগরে। এরই মধ্যে বাড়িতে পানি উঠে গেছে। আমার বোন, ভাবি, ভাইয়ের সন্তানসহ পরিবারের সবাই আশ্রয় নিয়েছে নোয়াখালী শহরে আত্মীয়ের বাসায়। আর আমাদের এলাকার হাসানহাট স্কুলে স্থানীয় মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। যথাসম্ভব খোঁজ রাখার চেষ্টা করছি। রবিবার আমি গ্রামে যাব। সাধ্যমতো মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করব।
দাদার বাড়ির অবস্থা খারাপ : জিয়াউল হক পলাশ (অভিনয়শিল্পী)
নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে আমাদের বাড়ি। এদিকে আজ (গতকাল) পানি কিছুটা কমেছে। গ্রামে আমার আত্মীয়-স্বজন সবাই। দাদার বাড়ির অবস্থা খুব খারাপ। গতকাল (বৃহস্পতিবার) তাঁদের সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া হয়েছে। সবাই খুব ভয়ের মধ্যে ছিল। আর আমার ডাকবাক্সের (ডাকবাক্স ফাউন্ডেশন) একটা টিম নোয়াখালীতে, আরেকটা টিম ফেনীতে গেছে দুটি নৌকা ও খাবার নিয়ে। আমরা ঢাকায় যেমন খাবার রান্না করে মানুষকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করি, ফেনীর আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতেও সে রকম রান্নার ব্যবস্থা করেছি। কারণ আমি মনে করি, শুকনা খাবার আসলে মানুষের খুব বেশি কাজে আসে না।
Discussion about this post