নিজস্ব প্রতিবেদক
গাজী টায়ার কারখানার ছয়তলা ভবনে দুর্বৃত্তদের আগুন দেয়ার ঘটনার ২১ ঘণ্টা পরেও তা নেভেনি। ভবনটিতে এখনো আগুন জ্বলছে আবার অন্যদিকে কারখানার বিভিন্ন অংশে লুটপাট করতেও দেখা গেছে৷
রোববার রাত ৯টার দিকে কারখানাটিতে আগুন দেয়া হয়। এর আগে দুপুর থেকে চলে লুটপাট। সোমবার বিকেলেও কারখানার মূল চত্বরের বাইরের অংশে লুটপাট করতে দেখা গেছে।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (ঢাকা) লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউল করিম বলেন, কারখানাটির একটি ছয়তলা ভবনে এখনো আগুন জ্বলছে। আধুনিক সব সরঞ্জাম ব্যবহার করে আগুন নেভানোর চেষ্টা চলছে। আগুন আর ছড়ানোর কোনো শঙ্কা নেই। কারখানায় থাকা টায়ার প্রস্তুতকারক নানা দাহ্য পদার্থের কারণে আগুন নেভাতে সময় লাগছে। আগুন পুরোপুরি নেভানোর পর কারখানার ভেতরে নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধান করা হবে।
সোমবার বিকেলেও কারখানার আশপাশে গাজী টায়ারসহ বিভিন্ন স্থাপনায় দুর্বৃত্তদের লুটপাট করতে দেখা গেছে। প্রায় ৪৫ একর জমির ওপর স্থাপিত কারখানাটির সামনে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে কারখানার মূল অংশে লুটপাট হচ্ছে না। তবে সুবিশাল এই কারখানার চারপাশের বিভিন্ন অরক্ষিত অংশে লুটপাট চলছে। তারা কারখানা থেকে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, স্টিল, প্লাস্টিক ও তামা লুট করে নিয়ে যাচ্ছেন।
লুটপাটকারী কয়েকজন জানিয়েছেন, ৫ আগস্টের পর থেকে এলাকার লোকজন যে যার মতো লুটপাট করেছেন। লোকজনের দেখাদেখি তারাও লুটপাটে অংশ নিয়েছেন। তবে তাদের কেউই নিজেদের নাম–পরিচয় জানাননি।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশের খালে কারখানা থেকে নির্গত জ্বালানি তেল সংগ্রহ করতেও দেখা গেছে৷
এক যুবক বলেন, ‘গাজী আমাগোরতে অনেক খাইছে৷ এইটা আমাগোই৷’
সকালে কারখানার সহকারী মহাব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম জানান, রোববার দুপুরে কয়েকশ লোক কারখানায় ঢুকে পড়ে। তাদের বাধা দেয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না। লুটপাটের সময় রাত ৯টার দিকে কারখানাটির ছয়তলা ভবনটির নিচতলায় আগুন লাগিয়ে দেয় লুটপাটকারীরা। দুপুরে লুটপাট শুরু হলে পুলিশসহ একাধিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিষয়টি জানানো হলেও কেউ এগিয়ে আসেনি বলে অভিযোগ করেন তিনি। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (গ-সার্কেল) হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ কোনো অবহেলা করেনি। আমরা কারখানার নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামানও কারখানার নিরাপত্তা দেয়ার কথা সাংবাদিকদের বলেছেন।
তিনি বলেন, যারা কারখানাটিতে ঢুকেছিলেন তারা কারখানাটিতে লুটপাট করতেই ঢুকেছিলেন। এমনকি তারা টয়লেটের কমোড পর্যন্ত নিয়ে গেছে। খবর পাবার পর থেকে কাজ শুরু করেছি।
তিনি বলেন, আমাদের অনেকগুলো ইউনিট কাজ করছে। আমরা রাত থেকে কন্টিনিউয়াস ডিউটি করছি, কেবল শিফটিং চেঞ্জ হয়েছে। এটা তো একটা ক্রিমিন্যাল অফেন্স। আমরা আমাদের সক্ষমতা অনুযায়ী যথেষ্ট কাজ করেছি।
লুটপাটের বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আহসান মাহমুদ রাসেল বলেন, কারখানার লুটপাট ঠেকাতে পুলিশ, শিল্প পুলিশ, সেনাবাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করছেন। আমি সবাইকে অনুরোধ করেছি তারা যেন আরও শক্ত অবস্থান নেন।
Discussion about this post