নিজস্ব প্রতিবেদক
কুমিল্লায় ভয়াবহ বন্যায় জেলার মৎস্য খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মাছ উৎপাদনে কুমিল্লা জেলা বাংলাদেশে তৃৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।
এখানে নদ-নদী, পুকুর, দিঘী, জলাশয় ও প্লাবণ ভূমিতে জেলার চাহিদার দ্বিগুণের বেশি মাছ উৎপাদন হয়। কিন্তু এবারের চলমান বন্যায় মৎস্য উৎপাদনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে প্রাথমিকভাবে এ খাতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪০০ কোটি টাকা নিরূপণ করা হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ আরও দ্বিগুণ হতে পারে বলে জানিয়েছেন মাছ চাষীরা।
আজ মঙ্গলবার সকালে জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র বলছে, চলমান বন্যায় জেলার মোট ২৩ হাজার ৪২টি খামার বা পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আয়তনে যা ৫ হাজার ৮৩৫ দশমিক ৬১ হেক্টর। ক্ষতিগ্রস্ত এসব খামার থেকে ২৫ হাজার ৫৩৮ দশমিক ৫০ টন ফিন ফিশ, ১০ দশমিক ২৮ টন চিংড়ি, ১০ কোটি ১৭ লাখ সংখ্যক পোনামাছের ক্ষতি হয়েছে। বাজার মূল্যে হিসেবে, মাছে ৩৫৮ কোটি ১২ লাখ টাকা, চিংড়িতে ৫ কোটি টাকা, ১৭ কোটি ৮ লাখ ৯২ হাজার টাকার পোনা জাতীয় মাছের ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও ২২ কোটি ৯৫ লাখ টাকার পুকুর, খামার বা স্লুইস গেটের অবকাঠামোর ক্ষতি এবং ৮০ লাখ টাকার মূল্যের জাল বিনষ্ট হয়েছে।
কার্যালয়টি আরও জানিয়েছে, জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বরুড়া উপজেলায়। এ উপজেলায় মোট ৩ হাজার ৭৪৯টি মাছের খামার বা পুকুর বিনষ্ট হয়েছে। আয়তনে যা ৯০৩ হেক্টর। এছাড়া ব্রাহ্মণপাড়া ১ হাজার ১০টি, বুড়িচংয়ে ১ হাজার ৮০০টি, নাঙ্গলকোটে ৩ হাজার ১৬২টি, লালমাইয়ে ২ হাজার ৭টি, মনোহরগঞ্জে ২ হাজার ৩৫০টি, আদর্শ সদরে ২ হাজার ৪৫২টি, মুরাদনগরে ৮০০টি, চান্দিনায় ২০০টি, লাকসামে ২ হাজার ৫০০টি, তিতাসে ২২ টি, দেবীদ্বারে ৪০০টি, চৌদ্দগ্রামে ১ হাজার ৮৪০টি এবং সদর দক্ষিণে ৬৬০টি মাছের খামার বা পুকুর তলিয়েছে।
এছাড়ায়ও জেলায় মৎস্যবীজ খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৫টি। আয়তনে যা ২ দশমিক ৬৯ হেক্টর। ক্ষতিগ্রস্ত এসবের মধ্যে জাঙ্গালিয়া, দেবিদ্বার, চান্দিনা, বুড়িচং, লাকসাম, হোমনা এবং চৌদ্দগ্রামের মৎস্যবীজ খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব খামারে ৬২ লাখ ৬৫ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
কুমিল্লার বুড়িচং ভরাসার এলাকার এশিয়ান মৎস্য খামের স্বত্বাধিকারী সালাউদ্দিন বাসসকে জানান, তাঁর মাছের প্রজেক্টে ২ থেকে আড়াই’শ মণ মাছ ছিল। বন্যার পানিতে মাছ চলে গেছে, পানি আরো কমলে বোঝা যাবে কি মাছ আছে বা চলে গেছে। তার দাবি প্রায় তিন কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ব্রাক্ষণপাড়া উপজেলার প্রয়াতের মৎস্য চাষী সোহেল মিয়া বাসসকে বলেন, আমার মাছের প্রজেক্টে ১ থেকে ৩শ মণ মাছ ছিল। বন্যার পানিতে মাছ চলে যায়। তার দাবি প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বেলাল আহমেদ জানান, বন্যায় মৎস্য খাতে ক্ষতির একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেছি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। বানের পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সঠিকভাবে নিরূপণ করা যাবে।
Discussion about this post