জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বিভিন্ন দাবি আদায়ের হিড়িক চলছে ।
প্রতিদিন ডিএসসিসির প্রধান কার্যালয় নগর ভবনে দাবি আদায়ে অনেকেই মিছিল করছেন, কেউ কেউ নেতৃবৃন্দ নিয়ে দিচ্ছেন মহড়া। এদের মধ্যে রয়েছেন দুর্নীতি বা পেশাগত অসদাচরণের জন্য পদোন্নতি পাননি এবং চাকুরী থেকে বরখাস্ত হওয়া। এর ফলে যাঁরা সৎ দুর্নীতি, কিংবা রাজনৈতিক কারণে পদোন্নতি পাননি তাদের আবারও সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত হওয়ার আশংকা রয়েছে। এদিকে দলের নির্দেশনা উপেক্ষা করে নিজেদের প্রভাব জাহির করতে দলবল নিয়ে নগর ভবনে মহড়া দিচ্ছেন বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের কিছু নেতা। এর ফলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চলছে আতঙ্ক ও অস্থিরতা।
খোঁজ জানা গেছে, ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যে ৩ আগস্ট দেশ ছাড়েন ডিএসসিসিরি সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। আর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে দক্ষিণ সিটিতে আওয়ামী লীগ থেকে ৬৭ জন কাউন্সিলর গা ঢাকা দেন। এর পর থেকে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন উন্নয়নকাজের নিয়ন্ত্রণ ও বিভিন্ন দপ্তর থেকে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের কিছু নেতা। তাঁদের সঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন কৌশলে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন।
এদিকে গত ২৭ আগস্ট ডিএসসিসিরি একটি উন্নয়নের দরপত্র জমা দেওয়া নিয়ে একজন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাকে মারধর করা হয়। আর লাঞ্চিত করা হয়েছে সাতজন কর্মকর্তাকে। এছাড়া এক কর্মকর্তাকে সবার সামনে মারধর করা হয়।এর ফলে দাপ্তরিক কাজেও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। আর কিছু কর্মকর্তাকে হুমকি দিয়ে তাদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে মোটা অংকের টাকা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির করপোরেশনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা
নাম প্রকাশ না করে বলেন, বিএনপি সমর্থিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের একাধিক নেতা বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের হুমকি দিচ্ছে। তাদের না জানিয়ে কাউকে বদলি করা যাবে না। পদোন্নতি ও পদায়ন বন্ধ করা যাবেনা।
তিনি বলেন, বিএনপির কিছু নেতা–কর্মী নগর ভবনে করপোরেশনের যে অবস্থার সৃষ্টি করছেন, তাতে স্বাভাবিক কাজের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ঠিকাদারি, ইজারাসহ নানা সুবিধা দিতে চাপ দিচ্ছেন তাঁরা। এভাবে চলতে পারে না। বিএনপির সম্মান নষ্ট করতে তারা মাঠে নেমেছেন। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করে
বলেন, বিগত ১৭ বছর থেকে আমরা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। যাঁরা সৎ দুর্নীতি, কিংবা রাজনৈতিক কারণে পদোন্নতি পাইনি । যাঁরা সৎ দুর্নীতি, কিংবা রাজনৈতিক কারণে পদোন্নতি পাননি তারা আবারও বঞ্চিত হবেন। কারণ বিএনপির অঙ্গসংঠন শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের নেতাসহ বিএনপির স্থানীয় নেতারা যা শুরু করেছেন তাতে আমরা আবারও বঞ্চিত হবো। তারা তাদের স্বার্থ হাসিল নিয়ে ব্যস্ত। আমাদের সাধারণ কর্মচারীদের কথা তারা ভাবছেনা।
তিনি বলেন, মিডিয়ায় দেখলাম বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে একাধিক নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন ও জাতীয়তাবাদী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নসহ বেশ কিছু নেতার হুমকি ও মহড়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আতঙ্কের মধ্যে কাজ করছে। এদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন,
বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ডিএসসিসিতে যেসব নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ শোনা যাচ্ছে তার প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. মহঃ শের আলী বলেন, আমি কয়েকদিন হলো দায়িত্ব নিয়েছি। অল্প কিছু সময় নগর ভবনে থাকি। পুরো বিষয়টি নিয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে রাজি হনননি।
Discussion about this post