নিজস্ব প্রতিবেদক
ঐতিহাসিক গণ অভ্যুত্থানের এক মাস পূর্ণ হলো আজ। বহু প্রাণের বিনিময়ে আলোর মুখ দেখেছে ছাত্র-জনতার বিপ্লব। বহু রক্তপাতের মধ্য দিয়ে উন্মোচিত হয়েছে সম্ভাবনাময় নতুন বাংলাদেশ। জুলাইয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনে আগস্টে রূপ নেয়, সরকার পতনের এক দফা দাবিতে। টিকে থাকার সব চেষ্টা ব্যর্থ হলে ৫ আগষ্ট দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা।
তীব্র গণ-আন্দোলনে শেখ হাসিনা দেশ ছাড়েন ৫ আগস্ট। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া জুড়ে তখন মুক্তির বাতাস। সবার চোখে-মুখে শুধুই প্রাপ্তির আনন্দ। পুরো দেশের একক উৎসবে রূপ নিলো ছাত্র-জনতার বিজয়। মুখের কথায় খই ফোটানো প্রভাবশালীরা অন্ধকারে মিলিয়ে গেলেন আলো নিভিয়ে। এক মাস খুবই অল্প সময়। তবুও কী কোন প্রাপ্তি দেখছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী স্পর্শী?
শুরুটা কোটা সংস্কার দাবিতে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে। মারমুখী সরকার, লেলিয়ে দেয়া হয় পেটুয়া বাহিনী। ধীরে ধীরে বাড়ে তীব্রতা; শাহবাগ কেন্দ্রিক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। আন্দোলন দমাতে সর্বোচ্চ বল প্রয়োগ করে সরকার। পুলিশ-বিজিবি-র্যাবের পাশাপাশি, সেনাবাহিনী নামিয়ে করা হয় সান্ধ্য আইন।
শাষকগোষ্ঠী যেন মেতে ওঠে রক্তের নেশায়। মূল্যহীন করে তোলে ছাত্র-জনতার জীবন। পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষণ অথবা পাহাড়-সমতল; মুক্তির নেশায় মেতে ওঠে সবাই। জ্বলতে থাকেন দ্রোহের আগুনে। অনেকের ভাবনার জগতে ছিল না, এমনকি এখনও কেউ কেউ বিশ্বাস করতে পারেন না- পালিয়ে গেছেন নির্মম-পরাক্রমশালী হাসিনা সরকার।
পুলিশের বেহিসেবি গুলির বিপরীতে তারুণ্যের অদম্য সাহস আর সীমাহীন মুক্তির নেশা। বন্দুকের নলের মুখে দাঁড়িয়েছে বুক চিতিয়ে। রংপুরের আবু সাঈদ হয়ে ওঠেন শত শত তরুণ-বিপ্লবী প্রাণের প্রতিচ্ছবি। এখনও কানে বাজে মুগ্ধের আহ্বান ‘পানি লাগবে পানি’।
ছাত্র-জনতার এই আন্দোলনে শিশু-কিশোর-যুবক নারীসহ অন্তত ১ হাজার জনের প্রাণহানি ও কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হামলা-নির্যাতনে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে।
এখনও হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন অনেকে। তাদের বিশ্বাস, একদিন সব ঠিক হবে, মিলবে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের সুফল।
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর রাষ্ট্রপতি সরকার ভেঙে দিলে আওয়ামী লীগের টানা প্রায় ১৬ বছরের শাসনে নেতিবাচক অবসান হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের তিন দিন পর ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ শপথ গ্রহণ করেন।
এদিকে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের দিনটি স্মরণীয় করতে আজ রাজধানীতে ‘শহীদি মার্চ’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে বৈষ্যমবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বেলা ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে শুরু হবে এ ‘শহীদি মার্চ’।
গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘শহীদি মার্চ’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম।
তিনি বলেন, ‘দেশ সংস্কারে যারা বুলেটের সামনে বুক পেতে দিয়েছে, তাদের এখনই স্মরণ করার সময়। এজন্য আমরা বৃহস্পতিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের স্মরণে ও গণ-অভ্যুত্থানের এক মাস পূর্তি উপলক্ষে “শহীদি মার্চ” করব। আমরা চাইব, পুরো বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা নিজ নিজ অবস্থান থেকে এতে অংশগ্রহণ করবে। আগামীকালও (বৃহস্পতিবার) সারা দেশে গণজোয়ার নামবে।’
সারজিস জানান, রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু হয়ে নিউমার্কেট, মানিক মিয়া এভিনিউ, কারওয়ান বাজার ও শাহবাগ ঘুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হবে ‘শহীদি মার্চ’। কর্মসূচিতে ফেস্টুনের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে নানা প্রত্যাশার কথা তুলে ধরা হবে।
Discussion about this post