নিজস্ব প্রতিবেদক
সম্প্রতি সুইডেন আসলাম, কলাবাগান ইমন, কিলার আব্বাস, পিচ্চি হেলাল, ফ্রিডম রাসুর মতো একের পর এক শীর্ষ সন্ত্রাসীর জামিনে মুক্তি পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে বেশ উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে সচেতন মহলে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, জামিনে বের হওয়া এই সন্ত্রাসীরা সক্রিয় হয়ে উঠলে পুরোপুরি ভেঙে পড়তে পারে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা; কায়েম হতে পারে ত্রাসের এক রাজত্ব। এ অবস্থায় বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোঃ ময়নুল ইসলাম।
তিনি বলেছেন, জামিনপ্রাপ্ত জঙ্গি ও অন্যান্য অপরাধীরা যাতে কোন ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য তাদের ওপর সতর্ক ও কড়া নজরদারী করছে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিটগুলো। যদি তারা অপরাধে সম্পৃক্ত হয় তাহলে তাদেরকে সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশের সকল ইউনিটকে নির্দেশও প্রদান করেন আইজিপি।
মোঃ ময়নুল ইসলাম বলেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’। বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষায়িত এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ), কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি), এসবি, সিআইডি, র্যাব এবং জেলা পুলিশ জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি নিয়মিত মনিটর করছে। দেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ যেন আর মাথা তুলতে না পারে, সেজন্য জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর ও সর্তক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ।
আইজিপি বলেন, দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর। কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করলে তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বাংলাদেশ পুলিশ।
প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহের মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাতে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি জেল থেকে জামিনে মুক্তি পান রাজধানীর পূর্ব রাজা বাজার এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী শেখ আসলাম ওরফে সুইডেন আসলাম। তার বিরুদ্ধে ২২ টি মামলা ছিল। এর মধ্যে তেজগাঁও এলাকায় গালিব হত্যাসহ ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। ১৯৯৭ সালে গ্রেপ্তার হন দুর্ধর্ষ এ সন্ত্রাসী।
শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে আরও ৫ জন জামিনে মুক্তি পেয়েছেন গত এক মাসে। এরা হলেন সানজিদুল ইসলাম ইমন ওরফে কলাবাগান ইমন, আব্বাস, টিটন, পিচ্চি হেলাল, ফ্রিডম রাসু। গত ১৪ আগস্ট ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ইমন মুক্তি পান। একই সময়ে ইমনের প্রধান সহযোগী মামুনও জামিনে মুক্তি পান। এর আগে ১২ আগস্ট একই কারাগার থেকে মুক্তি পান ফ্রিডম রাসু ও পিচ্চি হেলাল । রাসুর বিরুদ্ধে পুলিশ কর্মকর্তা হত্যাসহ ১৩ টি মামলা রয়েছে। ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসী তালিকা প্রকাশের আগেই পিচ্চি হেলাল মোহাম্মদপুর থেকে ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। তার বিরুদ্ধে চারটি হত্যা মামলাসহ ৮ টি মামলা রয়েছে।
২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকার ২ নম্বরে আছে টিটনের নাম। ২০০৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকার একটি বাসা থেকে ডিবি পুলিশ একটি পিস্তলসহ তাকে গ্রেপ্তার করে। মামলাগুলোর জামিন হওয়ার পর গত ১২ আগস্ট কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি জেল থেকে জামিনে মুক্তি পান টিটন।
১৩ আগষ্ট কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি জেল থেকে জামিনে মুক্তি পান আব্বাস উদ্দিন ওরফে কিলার আব্বাস। রাজধানীর কাফরুল, কচুক্ষেত ও ইব্রাহিমপুর এলাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডন ছিলেন আব্বাস। তার বিরুদ্ধে ৬ টি হত্যা মামলাসহ ১০ টি মামলা বিচারাধীন। তবে এই ১০ টি মামলায় একে একে জামিন পান তিনি।
এর আগে ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর মধ্যে অন্যতম বিকাশ কুমার বিশ্বাস ওরফে বিকাশ ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি জামিনে মুক্তি পেয়ে লাপাত্তা হন। এরপর থেকে বিকাশ ফেরারী আসামি হয়ে ভারতে আত্মগোপন করেছেন।
শীর্ষ সন্ত্রাসীদের এই তালিকায় চার নম্বর তালিকাভূক্ত আসামি ছিলেন তানভীরুল ইসলাম জয়। ২০০৪ সালে পালিয়ে আমেরিকায় আত্মগোপন করেন তিনি। বছর চারেক আগে তিনি মালয়েশিয়ায় আত্মগোপন করেন। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় চলতি বছরে ১৩ এপ্রিল মালয়েশিয়ার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জয়।
তেইশ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় এখনও কারাবন্দী রয়েছেন মগবাজারে শীর্ষ সন্ত্রাসী আরমান, মোহাম্মদপুরের কামাল পাশা ও খিলগাঁওয়ের ফ্রিডম সোহেল।
Discussion about this post