নিজস্ব প্রতিবেদক
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে অবসান ঘটে তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৫ বছরের শাসনের। এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের চাওয়ার প্রেক্ষিতে তিন দিন বাদেই দেশ পরিচালনার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তার নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর থেকেই খুন, গুম ও গণহত্যার একের পর এক অভিযোগ উঠতে থাকে বিগত সরকারের বিরুদ্ধে। রাজধানীসহ সারাদেশে একের পর এক মামলায় জড়াতে থাকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম, যার মধ্যে অধিকাংশই হত্যা মামলা।
সুনির্দিষ্টভাবে শুধু ঢাকার হিসাব করলেই গত দেড় মাসে ১৫০টি মামলায় আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তার নাম। এর মধ্যে ১৪০টিই হত্যা মামলা। বাকি ১০টি মামলায় হত্যাচেষ্টা, হুমকি, লাঞ্ছিত ও মারধরের অভিযোগে অভিযুক্ত শেখ হাসিনা। এ হিসেবে ঢাকার আদালতগুলোতে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে হওয়া মামলার ৯৩ দশমিক ৩৩ শতাংশই হত্যা মামলা।
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে প্রথম মামলাটি হয় গত ১৩ আগস্ট। কোটা আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই রাজধানীর মোহাম্মদপুরে পুলিশের গুলিতে আবু সায়েদ নামে এক মুদি দোকানি নিহত হওয়ার ঘটনায় হত্যার অভিযোগ তুলে মামলাটি দায়ের হয়; আসামি করা হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ওবায়দুল কাদেরসহ ৭ জনকে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঢাকার আমলি আদালতগুলোতে মোট ৩১টি থানায় এরকম ১৫০টি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু যাত্রাবাড়ী থানাতেই দায়ের হয়েছে ৪২টি মামলা। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মামলা হয়েছে মিরপুর থানায়; দেড় মাসে ২৪টি মামলা হয়েছে এ থানায়। এ ছাড়া উত্তরা-পূর্বে ১৪টি, সাভারে ১০টি, বাড্ডায় ৯টি, মোহাম্মদপুর ও কদমতলীতে ৫টি করে, রামপুরায় ৪টি; তেজগাঁও, নিউমার্কেট, আদাবর, সূত্রাপুর, খিলগাঁও ও হাতিরঝিল থানায় ৩টি করে; পল্লবী, বংশাল, শেরেবাংলা নগর, বনানী, পল্টন, মুগদা, ভাটারা থানায় দুটি করে এবং আশুলিয়া, কাফরুল, মতিঝিল, চকবাজার, লালবাগ, গুলশান, বিমানবন্দর, শাহবাগ, ধানমন্ডি ও কোতোয়ালি থানায় একটি করে মামলা করা হয়েছে।
সবশেষ বৃহস্পতিবারও (১৯ সেপ্টেম্বর) সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে নতুন ৬টি হত্যা মামলা হয়েছে। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে মামলাগুলো হয়েছে।
নতুন মামলাগুলোর মধ্যে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দিলরুবা আফরোজ তিথির আদালতে শেখ হাসিনাসহ ১৪৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন শেখ আজিজুর রহমান নামে এক ব্যক্তি। পরে আদালত সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।
আরেকটি হত্যা মামলা হয়েছে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাহীন রেজার আদালতে, যেখানে আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের এবং আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ৪৭ জনের নাম। যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা হয় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আরিফুর রহমানের আদালতে। অভিযোগ শুনে আদালত বাড্ডা থানা পুলিশকে মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।
ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুদ্দিন হোসাইনের আদালতে করা আরেক হত্যা মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ৩৪ জনের নাম। আদালত কদমতলী থানা পুলিশকে মামলাটির অভিযোগ এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে মোট ৫৭ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেলাল হোসেনের আদালতে আরেকটি হত্যা মামলা হয়েছে। রামপুরা থানা পুলিশকে মামলাটির অভিযোগ এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরফাতুল রাকিবের আদালতে আরেকটি হত্যা মামলা হয়েছে, যেখানে শেখ হাসিনাসহ আসামি ৩৩ জন। আদালত হাতিরঝিল থানা পুলিশকে মামলাটির অভিযোগ এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার থেকে শুরু করে সরকার পতনের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে লাগাতার বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে গুলি করে হত্যা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে করা একের পর এক মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও আসামি হিসেবে যুক্ত করা হচ্ছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক হারুন অর রশিদসহ আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য এবং দলটির তৃণমূলের গুরুত্বপূর্ণ সব নেতাকর্মীর নাম।
Discussion about this post