নিজস্ব প্রতিবেদক
একটি জাতীয় পত্রিকার নারী সাংবাদিক মেহনাজ খানকে মারার হুমকি দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন দেশের বহুল আলোচিত-সমালোচিত নায়িকা পরীমনি। পাশাপাশি অকথ্য ভাষায় গালিও দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, গাড়ি নিয়ে নাকি মেহনাজের অফিসের নিচেও যান পরীমনি। এরপর একজন বিনোদন সাংবাদিক পরীমনিকে বুঝিয়ে সেই মূহূর্তে পরিস্থিতি সামাল দেন।
এ নিয়ে বুধবার (৯ অক্টোবর) রাতে অডিও রেকর্ড ফাঁস করেছেন ওই নারী সাংবাদিক। ফাঁস হওয়া সেই অডিওতে শোনা যায়- রেগে আগুন হয়ে উঠেছেন পরীমনি। একের পর এক গালি দেয়ার পাশাপাশি সেই নারী সাংবাদিককে দেখে নেয়ার হুমকি দিচ্ছেন।পরীমনির এ রকম আচরণ নিয়ে মেহনাজ খান বলেন, আরটিভির এক নিউজের থামনেইলে পরীমনি ও তার ছেলের ছবি শেয়ার করে আমি ক্যাপশনে লিখেছিলাম, ‘ইনজেনারেল- আর কি? এমন মানুষকে বিশ্বাস করা যার মাশুল বাচ্চারও দিতে হয়’।
এতেই চটে যান ঢাকাই চলচ্চিত্রের এই নায়িকা। প্রথমে সাংবাদিক মেহনাজ খানের সেই পোস্টে নিজের ব্যক্তিগত আইডি দিয়ে মন্তব্য করে বলেন, তার শেয়ার করা ক্যাপশনটি তিনি বোঝেন নি। উত্তরে মেহনাজ খান নায়িকাকে বলেন, ‘আপনাকে মিন করে কিছুই লিখিনি। আমি আমার বিষয় এবং আমার সন্তানের পরিস্থিতি নিয়ে লিখেছি।’
পরবর্তীতে দুজনের মধ্যে ফোনে কথা হয়। কথা বলার এক পর্যায়ে মেহনাজ বলেন, তিনি বিনোদন সাংবাদিক সবাই তাকে চেনে। তিনি কখনও সন্তান নিয়ে লিখবেন না। বলেন, আপনি (পরীমনি) যেমন আপনার বাচ্চা নিয়ে সচেতন, আমিও আমার বাচ্চা নিয়ে সচেতন।
লম্বা সময় কথার একপর্যায়ে পরীমনিকে বলেন, আপনি রাজ ভাইকে (পরীমনির সাবেক স্বামী) মিন করে লিখেছেন। তখন হাসতে হাসতে পরীমনি তার কথা বলার জন্য দুই মিনিট সময় চান। উত্তরে মেহনাজ সময় দেবেন না জানালে, তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠেন তিনি। শুরু করেন অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি।
অপর পাশ থেকে মেহনাজ অবশ্য শান্ত ছিলেন। বিপরীতে পরীমনি নানা অশালীন শব্দ উচ্চারণ করেই যান। পাশাপাশি তাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন। একপর্যায়ে তিনি কোথায় আছেন, দেখে নিতে এখনই তিনি আসবেন, এমন কথাও উল্লেখ করেন।
সাংবাদিক মেহনাজের দাবি তিনি একজন সিংগেল মাদার। তার ডিভোর্স হয়েছে ৫ বছর আগে। এ কারণে নিজের বাচ্চাকে উদ্দেশ্য করে তিনি এই পোস্ট দিয়েছেন। কিন্তু এরপর এই পোস্ট নিয়েই নাকি বাধে বিপত্তি। পরীমনি ভেবেছেন তার ছেলে রাজ্যকে নিয়ে এই পোস্ট দেয়া হয়েছে। এ কারণে সাংবাদিককে ফোন দিয়ে গালিগালাজ করেন পরীমনি।
এছাড়া মেহনাজ খান এক দীর্ঘ পোস্টে ফেসবুকে লিখেছেন, গতকাল (বুধবার) দেশের প্রথম সারির নায়িকা পরিমনি কোন কারণ ছাড়াই আমাকে অকথ্যভাবে গালাগালি করে এবং আমাকে হুমকি দেয় আমার অফিসে এসে আমাকে মারবে, আমাকে নাকি দেখে নিবে, আমার নাকি চাকরি খেয়ে দিবে। তার ভাষা এবং কথা আপনারা স্ক্রিন রেকর্ডে শুনতেই পারছেন। আমার একটা স্ট্যাটাসকে ঘিরে উনি এই কান্ড ঘটালেন। আমি একজন সিংগেল মাদার। আমার একটা মেয়ে আছে। আমি একটা নিউজ শেয়ার করে আমার নিজ পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে আমার মেয়েকে নিয়ে ক্যাপশনটা লিখি।
শুধু মাত্র আমার ক্যাপশনে পরিমনি ও তার ছেলের ছবি থাকায় সেই চিত্রনায়িকা এ রকম অপ্রত্যাশিত কাহিনি ঘটায়। মা হিসেবে দাবি করছে অথচ অন্য একজন মাকে অপমানিত করলো। আমি জানতে চাই আমার ভুলটা কোথায়? শুধু দাড়ি কমার জন্য একজন নায়িকা এমন আচরন করবে? আমি কোন নিউজও করিনি তার বিরুদ্ধে, শুধু মাত্র আমার পার্সোনাল প্রোফাইলের একটা ক্যাপশনকে ঘিরে তার কেন মনে হলো যে তাকে নিয়ে লিখেছি। আর আমি তো তার সন্তান নিয়ে খারাপ কিছু বলিওনি।
আমি জানি সিংগেল মাদারের লাইফ কত কঠিন হয়। পরীমনির জন্য আমার খুব সহানুভূতি ছিল। কিন্তু তারকারা মনে হয় দূর থেকেই সুন্দর। বিনা কারণে রাত ১২টা পর্যন্ত আমাকে যে হেনেস্তা করলো এবং আমাকে যেভাবে মারার হুমকি দিয়েছে এর জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করতে বাধ্য হলাম এবং আমার ও আমার পরিবারের যদি কিছু হয় এর দায়ী হবে পরিমনি।
এ বিষয়ে পরীমনির কাছে বিস্তারিত জানতে বেশ কয়েকবার ফোনে করলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে অনেক সাংবাদিকই ফেসবুকে ঢাকাই সিনেমার একজন নায়িকার এমন অশালীন আচরণের সমালোচনা করে পোস্ট দিয়েছেন। মেহনাজের পাশে থাকার কথাও জানিয়েছেন।
Discussion about this post