‘রূপালি গিটার ফেলে, একদিন চলে যাবো দূরে বহুদূরে’, গানের কথার মতই বাংলা ব্যান্ডের কিংবদন্তী শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু রূপালি গিটার ফেলে ছয় আগে আজকের এই দিনে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর ঘুম ভাঙতেই এক দুঃসংবাদ পায় দেশবাসী। আইয়ুব বাচ্চু আর নেই! তার এমন সংবাদ যেনো হতভম্ভ করে দেয় তার ভক্তদের।
সামাজিক মাধ্যমে একের পর এক নেটিজেনদের শোক; ভেসে ওঠে প্রিয় শিল্পীকে হারানোর বেদনা। ফেসবুক ভরে ওঠে আইয়ুব বাচ্চুর সাদাকালো ছবিতে। বেলা বাড়তেই হাসপাতালে লোকারণ্য। চট্টগ্রামের শেষযাত্রার আয়োজনে জনসমুদ্র। ব্যান্ড সংগীতের জগতে এত বিষণ্নতা হয়তো এর আগে কেউ দেখেনি। কিংবদন্তী এই শিল্পী বিদায় নেন মাত্র ৫৬তেই।
যাদের হাত ধরে দেশীয় ব্যান্ড সংগীত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তাদের একজন ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। আশির দশক থেকে গানে, সুরে ও কথায় মন জয় করেছেন বাঙালি হৃদয়। ফেরারি মন, চলো বদলে যাই, এখন অনেক রাত, হকার, আমি বারো মাস তোমায় ভালোবাসি, কষ্ট পেতে ভালোবাসি এবং রূপালী গিটারসহ অসংখ্য জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা আইয়ুব বাচ্চু। তারকা খ্যাতির তুঙ্গে অবস্থান করলেও ছিলেন সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার মধ্যে। তারকা নয়, ‘ভালো মানুষ’ হয়েই বাঁচতে চেয়েছেন জীবনভর।
১৯৮৩ সালে মাত্র ৬০০ টাকা নিয়ে ঢাকায় আসেন আইয়ুব বাচ্চু। এরপর কঠোর পরিশ্রমে নিজেকে গড়তে থাকেন। এক পর্যায়ে বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের অপ্রতিদ্বন্দ্বী এক তারকা হয়ে উঠলেন।
আইয়ুব বাচ্চু যখন গিটার বাজাতেন, সেই সুর ঝলক দিয়ে উঠত শ্রোতাদের মনে। কনসার্টে একসঙ্গে এবির সঙ্গে কণ্ঠ মেলাতেন ভক্তরা। ‘এবি’ ছাড়াও ভক্তরা তাকে আরও এক নামে ডাকতেন ‘বস’।
আইয়ুব বাচ্চু এমন একটি নাম, যেই নামটি অনেক বেশি ইউনিক। তার বাবাও চাইতেন ছেলের এমন একটা নাম হবে, যা অন্য কারও নেই। যেমন আইয়ুব আলী, আইয়ুব হোসেন—এমন তো হয়-ই। দুটি নাম থেকে আলাদা অংশ নিয়ে রাখা হলো, আইয়ুব বাচ্চু। সেই থেকে তিনি হলেন ‘ওয়ান অ্যান্ড অনলি’ আইয়ুব বাচ্চু।
নব্বই দশক থেকে আইয়ুব বাচ্চু জনপ্রিয়তা্র তুঙ্গে অবস্থান করে। কিন্তু এরপরও তেমন স্টারডর্ম কাজ করত না। সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে থেকেছেন এই কিংবদন্তী। বলা বাহুল্য, তারকা হিসেবে নয়, একজন ‘ভালো মানুষ’ হয়ে, সবার হৃদয়ে থেকে বাঁচতে চেয়েছিলেন এই গিটারের জাদুকর।
দেখতে দেখতে ছয় বছর পার হলেও ভক্তদের মনে আজও বেঁচে আছেন আইয়ুব বাচ্চু। তার আত্মার শান্তি কামনায় শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) দোয়া মাহফিল এর আয়োজন করা হয়েছে। মগবাজারের সেলেব্রেশন কমিউনিটি পয়েন্টে অনুষ্ঠিতব্য এই আয়োজনটি হবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। আয়োজন করেছে চট্টগ্রাম মিউজিসিয়ান’স ক্লাব, আইয়ুব বাচ্চু ফাউন্ডেশন এবং বন্ধুমহল।
‘ব্লু ব্রিক কমিউনিকেশন’-এর আয়োজনে শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর পূর্বাচলের বাংলাদেশ-চীন ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে হচ্ছে ‘ঢাকা রেট্রো’ শিরোনামের কনসার্ট। যেখানে একই মঞ্চে গাইবে নগরবাউল জেমস, আর্ক, মাইলস ও দলছুট। পুরো অনুষ্ঠানটি উৎসর্গ করা হচ্ছে রক ব্যান্ডের প্রয়াত কিংবদন্তী আইয়ুব বাচ্চুকে।
Discussion about this post