নিজস্ব প্রতিবেদক
নিরাপত্তার কারণে বিদায়ী টেস্ট খেলতে সাকিবকে দেশে ফিরতে মানা করা হয়েছে বিসিবি এবং সরকারের পক্ষ থেকে। তার পরিবর্তে হাসান মুরাদকে দলে নিয়েছে বিসিবি। এরপরই উত্তাল উঠেছে মিরপুরের হোম অব ক্রিকেট। সাকিবকে দল ফেরাতে আন্দোলন শুরু করেছে তার ভক্তরা।
শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে মিরপুর স্টেডিয়ামের সামনে হাজির হন সাকিব ভক্তরা। তারা সাকিবকে দলে ফেরাতে বিসিবিকে চারটি দাবি জানিয়েছেন।
সেই সঙ্গে সাকিব সাকিব স্লোগানে মুখোরিত হয়ে ওঠে স্টেডিয়াম পাড়া। ভক্তদের দাবি, ক্রিকেটে বৈষম্য রাখা যাবে না। সাকিবকে দেশে ফিরতে দিতে হবে এবং মিরপুর থেকে তার বিদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে। সে আমাদের দেশের সেরা ক্রিকেটার।
এক আন্দোলনকারী আক্ষেপ করে বলেন, ভারতে কানপুর টেস্ট দিয়ে সাকিব টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা করেছে। এরপরই আইসিসি টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিং থেকে তার নামটা তুলে নিয়েছে। এতদিন সেই সেখানে বাংলাদেশের পতাকাটা ছিল। কিন্তু এখন আর নেই, ১৭ বছর ধরে দেশের পতাকাটা সেখানে ধরে রেখেছিলেন তিনি।
‘তাই আমরা চাই, তার মতো একজন ক্রিকেটারকে দেশ থেকে ভালোভাবে বিদায় দেওয়া হক। যারা তাকে দেশে আসতে দিচ্ছে না, সেই সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে।’
আন্দোলনে উপস্থিত এক বয়স্ক ব্যক্তি বলেন, দেশে আওয়ামী লীগের আরও ৩০০ সংসদ সদস্য আছে। কই তাদেরকে আটক করা বা তাদের বিরুদ্ধে এইভাবে আন্দোলন হচ্ছে না। সেই দেশের একজন ক্রিকেটার, তাকে দেশে আসতে দেওয়া হোক। তারপর সে যদি অন্যায় করে থাকে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
‘কিন্তু বর্তমানে কিছু মানুষ শুধু সাকিব নিয়েই পড়ে আছে। মাশরাফী তো দেশে আছে, কই তাকে নিয়ে তো কোনো কথা হচ্ছে না। তাকে তো আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হিসেবে কোনোভাবে জায়গায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে না। আমরা এই বৈষম্য চাই না, সবার ক্ষেত্রে নিয়ম এক হতে হবে।,
আরেক আন্দোলনকারী বলেন, আমরা জানি সাকিবকে কারা দেশে আসতে দিচ্ছেন না। এখানে একটা সিন্ডিকেট কাজ করছে। তাদের পরিচয় এখনই বলতে চাই না। আমরা চার দফা দাবি তুলে ধরেছি। না মানলে আমরা এক দফায় যাব এবং কঠোর আন্দোলন করা হবে। তাই সাকিব ছাড়া যেন এই ম্যাচে না নামা হয়।
অন্যদিকে গতকাল সাকিবকে দল থেকে বাদ দিতে বিসিবিকে বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) একটি স্মারকলিপি দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশ।
বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের উদ্দেশে দেওয়া স্মারকলিপিতে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা বলছেন, গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী রাষ্ট্র বিনির্মাণের লক্ষ্যে সব জায়গায় যে পরিবর্তন হয়েছে তার অংশ আপনি নিজে। যদি এই গণ-অভ্যুত্থান না হতো, তাহলে আপনি বিসিবিপ্রধান হতেন না।
‘তাই আপনার প্রথম লক্ষ্য হওয়া উচিত ফ্যাসিবাদ নির্মূল করে নিজের প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করা। আপনি কোনোভাবেই ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসন করতে পারেন না। আপনি পারেন না বাংলাদেশের জার্সি একজন ভোটচোর এমপির গায়ে জড়িয়ে দিতে। এই কাজের মাধ্যমে আপনি কেবলমাত্র পতিত স্বৈরাচারের মন্ত্রী ও সাবেক বিসিবিপ্রধান পাপনের প্রতিজ্ঞা পূরণ করতে যাচ্ছেন।’
এ ছাড়াও স্টেডিয়ামের দেওয়ালে সাকিবের বিপক্ষে বিভিন্ন মন্তব্য এবং গ্রাফিতি অঙ্কন করেছে আন্দোলনকারী সমন্বয়করা। কিন্তু আজ সেই সব গ্রাফিতি মুছে দিয়ে সাকিবের পক্ষে গ্রাফিতি অঙ্কন করেছে তার ভক্তরা।
সুতরাং, সাকিব ইস্যুতে বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এবং দেশের ক্রিকেট। কারণ, দুই পক্ষের আন্দোলনকারীরা যেখানে তাদের দাবি নিয়ে আন্দোলন করছেন, তার পাশে অনুশীলন এবং ম্যাচ খেলবেন দক্ষিণ আফ্রিকা দল। যার ফলে অনাকাঙ্খিত কিছু ঘটলে বিপাকে পড়বে দেশের ক্রিকেট।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নষ্ট হবে দেশের ক্রিকেটের ভাবমূর্তি। সাকিব ইস্যুর প্রভাব কোনোভাবে দক্ষিণ আফ্রিকা দলে উপর পড়লে আইসিসি টুর্নামেন্ট এবং বাইরের দেশের খেলতে আশা নিয়ে হুমকির মুখে পড়বে বাংলাদেশ।
উল্লেখ্য, আর মাত্র দুই দিন পর মাঠে গড়াবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টেস্ট। তাই শেষ পর্যন্ত দেখার অপেক্ষা পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়।
Discussion about this post