নিজস্ব প্রতিবেদক
সপ্তাহ ব্যবধানে রাজধানীর বাজারে কমতে শুরু করেছে শাক-সবজি ও ডিমের দাম। তবে বাজারে এখনও উত্তাপ ছড়াচ্ছে মাছ ও মুরগির দাম। অপরিবর্তিত রয়েছে আলু ও পেঁয়াজের দাম।
শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে সংশ্লিষ্ট বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বাজারে উঠতে শুরু করেছে শীতকালীন শাক-সবজি। দোকানগুলোতে শীতের সবজির পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। এতে বাজারে কমতে শুরু করেছে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা অস্থিরতা। সপ্তাহ ব্যবধানে হাতেগোনা কয়েটি ছাড়া বেশিরভাগ সবজির দাম কমেছে ১০-৩০ টাকা পর্যন্ত।
বিক্রেতারা জানান, সরবরাহ বাড়ায় গত সপ্তাহের তুলনায় শাক-সবজির দাম কিছুটা কমেছে। সামনে কোনো সংকট না হলে দাম হাতের নাগালে চলে আসবে।
কারওয়ান বাজারের এক সবজি বিক্রেতা বলেন, সরবরাহ বাড়ায় কয়েকটি সবজির দাম সামান্য কমেছে। ঘূর্ণিঝড়ের কোনো প্রভাব না পড়লে, সামনে দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই; বরং আরও কমবে।
বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন ৮০-১২০ টাকা, করলা ৬০-৭০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, মুলা ৫০-৬০ টাকা, লতি ৮০ টাকা, কহি ৬০ টাকা, ধুন্দুল ৫০ টাকা ও পটোল ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি পেঁপে ২০-৩০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, গাজর ১০০ টাকা, কচুরমুখী ৮০ টাকা, টমেটো ১৮০ টাকা, শিম ১৪০-১৬০ টাকা ও শসা বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়।
এ ছাড়া প্রতি কেজি ধনেপাতা ১২০-১৪০ টাকা ও চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়। আর মানভেদে প্রতি পিস ফুলকপি ৪০-৬০ টাকা, বাঁধাকপি ৬০ টাকা এবং লাউয়ের জন্য গুনতে হচ্ছে ৫০-৭০ টাকা।
এদিকে, নিম্নমুখী শাকের বাজারও। লালশাকের আঁটি ২০-২৫ টাকা, পাটশাক ১৫ টাকা, পুঁইশাক ৩০ টাকা, লাউশাক ৪০ টাকা, মুলাশাক ২০ টাকা, ডাঁটাশাক ২৫ টাকা, কলমিশাক ১৫-২০ টাকা ও পালংশাক বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়।
দাম কমেছে কাঁচা মরিচেরও। গত সপ্তাহে বাড়তির দিকে থাকা কাঁচা মরিচের দাম কমে চলতি সপ্তাহে খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকায়, আর পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৫০-১৬০ টাকা দরে।
বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে সরবরাহ বেড়েছে কাঁচা মরিচের। এতে পাইকারি ও খুচরা উভয় পর্যায়েই কমেছে দাম। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মরিচ ব্যবসায়ী মনিরুল বলেন, ঝড় বা বৃষ্টি না হলে মরিচের দাম আরও কমবে।
বর্তমানে প্রতি ডজন লাল ডিম খুচরা পর্যায়ে ১৪৪-১৪৫ টাকা ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪৪ টাকায়। এতে প্রতি পিস ডিমের দাম পড়ছে ১২ টাকা। আর প্রতি ডজন হাঁসের ডিম ২৪০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ২৪০-২৫০ টাকায়।
ক্রেতারা বলছেন, ডিম ও সবজির দাম কমায় স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে বাজারে। মনিটরিং অব্যাহত রাখলে দাম আরও কমে আসবে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আসা মনির মিয়া জানান, অনেকটাই কমে এসেছে শাক-সবজির দাম। ডিমের দামও কমেছে। সরকার মনিটরিং বজায় রাখলে বাজার নাগালে রাখা সম্ভব।
বাজারে একদিকে যেমন স্বস্তি দিচ্ছে সবজি-ডিমের দাম, অন্যদিকে মাছ ও মুরগি কপালে ফেলছে চিন্তার ভাঁজ। উভয় পণ্যের দামই বাজারে ঊর্ধ্বমুখী। ব্যবসায়ীদের মতে, বাজারে সরবরাহ কমায় বাড়ছে এগুলোর দাম।
বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০-২১০ টাকায় এবং সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা। আর সাদা লেয়ার ২৬০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩০০ টাকায়। এ ছাড়া জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৬০০ টাকায়।
মুরগি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্যা ও ফিডের দামের প্রভাবে বাড়ছে মুরগির দাম। কারওয়ান বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী মহিন বলেন, সামনে বিয়ের মৌসুম আসছে। একে কেন্দ্র করে এখন থেকেই পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়াতে শুরু করেছে কিছু পাইকার। এ ছাড়া সাম্প্রতিক বন্যা ও ফিডের দাম বাড়ায় বন্ধ হয়ে গেছে অনেক খামার। সব মিলিয়ে ঊর্ধ্বমুখী মুরগির বাজার।
তবে বাজারে অপরিবর্তিত আছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতি কেজি খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা এবং ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়।
এদিকে বাজারে মাছ বিক্রি হচ্ছে আগের বাড়তি দামেই। প্রতি কেজি রুই ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৪৮০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, চাষের কৈ ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, কোরাল ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, টেংরা ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা ও তেলাপিয়া ১৭০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া প্রতি কেজি বোয়াল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা, দেশি কৈ ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা, শিং ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, শোল ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা এবং নদীর পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়।
সুখবর নেই আলু-পেঁয়াজের বাজারেও। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। আর প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১৩০-১৩৫ টাকা, আর ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০-১২০ টাকায়।
বিক্রেতারা বলছেন, দেশি পেঁয়াজের মৌসুম প্রায় শেষের দিকে। নতুন পেঁয়াজ না আসা পর্যন্ত বাজার একটু চড়া থাকবে।
নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েরই। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পান।
আর বিক্রেতারা বলছেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছেন। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে।
Discussion about this post