লাইফস্টাইল ডেস্ক
মাসের বাজারের ফর্দ থেকে রান্নাঘরে যার সরব উপস্থিতি দেখা যায় সেটি হলো তেল। রোজকার রান্না, ভাজাভুজি সবকিছুর জন্য তেল প্রয়োজন। এদিকে চিকিৎসকরা বলছেন, এটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ভোজনরসিক বাঙালিরা তাই পড়েছেন বেকায়দায়। কোন তেলে রান্না করবেন? কোনটি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি, কোনটিই বা ক্ষতির কারণ?
বেশিরভাগ বাড়িতেই রান্নার জন্য সয়াবিন তেল ব্যবহার করা হয়। স্বাস্থ্যসচেতন অনেকে আজকাল সরিষার তেলেও রান্নার অভ্যাস করেছেন। আবার অনেকে বলেন, হার্টের জন্য উপকারি অলিভ অয়েল। অনেক জায়গায় নারকেল তেলে রান্নারও চল রয়েছে। তাহলে উপকারি আসলে কোনটি?
তেল নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। তবে উচ্চ রক্তচাপ থেকে শুরু করে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের কারণ যখন তেল তখন তা নিয়ে ভাবতেই হয়। হার্টের রোগ, ডায়াবেটিস, হজমের সমস্যা, চুল পড়া, ব্রণ, স্থূলতা—এসবের জন্যও দায়ী করা হয় তেলকে। আসলেই কি তাই?
চিকিৎসকের মতে, তেলের মান বা ধরনের চেয়েও এর পরিমাণের দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। হার্টের অসুখের জন্য শুধু তেলকে দোষ দেওয়া যায় না। সর্ষের তেলের বদলে অলিভ অয়েল খেলে যে সমস্যা হবে না, এমনটা কোথাও লেখা নেই। মোদ্দা কথা, যে ধরনের তেলই খান, তার পরিমাণ কমাতে হবে।
অলিভ অয়েল কি সেরা?
সরিষার তেলের চেয়ে অলিভ অয়েল যে ভালো এ কথা ভুল নয়। তবে তা রান্নার জন্য কতটা ভালো সেই বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। সাধারণত ইটালীয় খাবারে অলিভ অয়েলের আধিক্য বেশি দেখা যায়। কথা হলো, ইতালিতে ভাজাভুজি খাওয়ার চল নেই। এখন অলিভ অয়েল স্বাস্থ্যকর বলে কেউ যদি তা দিয়ে লুচি ভাজেন তাহলে উপকারিতা আদৌ থাকে কিনা সেটা ভাবার বিষয়।
সরিষার তেল বা সূর্যমুখীর তেলের যে ধূমাঙ্ক, তার চেয়ে অলিভ অয়েলের ধূমাঙ্ক অনেক কম। তাই অলিভ অয়েল খুব গরম করলে বা পুড়ে গেলে উল্টো বিপদ বাড়ে। পোড়া তেলে রান্না করা খাবার শরীরের জন্য যেমন বিপজ্জনক, এটিও তেমন।
এ বিষয়ে ‘ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া’ (এফএসএসএআই)-র পরামর্শ, কোনো তেলই তিনবারের বেশি গরম করা উচিত নয়। এতে ‘ট্রান্স ফ্যাট’ তৈরির আশঙ্কা থাকে। বার বার একই তেল গরম করলে তেলে থাকা ফ্যাটের কণা ভেঙে যায়। তা থেকেই তৈরি হয় বিষাক্ত কিছু পদার্থ, যা ক্যানসারের মতো আরও অনেক মারণরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়িয়ে তোলে।
তেলের সঙ্গে ক্যালোরির সম্পর্ক
অতিরিক্ত তেল মানেই অতিরিক্ত ক্যালোরি। সেই ক্যালোরি ক্ষয় না হলেই শরীরে মেদের পরিমাণ বাড়বে। সেখান থেকেই দেখা দেবে যাবতীয় সমস্যা। প্রতিদিন রান্নার জন্য কেমন তেল ব্যবহার করবেন, তা নির্ভর করবে কী রাঁধছেন তার ওপর। এমনটাই বলছেন পুষ্টিবিদরা। তাহলে সাধারণ রান্না কোন তেল ব্যবহার করবেন? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণ বাঙালি রান্নার ক্ষেত্রে পরিমিত পরিমাণে সরিষার তেল খাওয়াই ভাল। কারণ এই তেলে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, প্রদাহনাশক এবং অ্যান্টি মাইক্রোবায়াল উপাদান রয়েছে।
তেলের সঙ্গে হরমোনের সম্পর্ক
শারীরবৃত্তীয় নানা ধরনের কাজকর্ম সঠিকভাবে পরিচালনা করার দায়িত্ব অনেকটাই নির্ভর করে হরমোনের উপর। মনমেজাজ বিগড়ে যাওয়া কিংবা বেশি খেয়ে ফেলার প্রবণতা— সবই হরমোনের হেরফেরে ঘটে যেতে পারে। হরমোনের মাত্রার ওঠানামায় শরীরের ভিত খানিকটা হলেও নড়ে যেতে পারে। চিকিৎসকের মতে, প্রজনন সংক্রান্ত হরমোনের সঙ্গে তেলের পরোক্ষ যোগাযোগ রয়েছে। হরমোন সংক্রান্ত নানা ধরনের রোগ রয়েছে। এজন্য তেলের ধরনের চেয়ে পরিমাণে নজর দেওয়া জরুরি।
তেলের সঙ্গে স্থূলতার সম্পর্ক
তেলের সঙ্গে যোগ রয়েছে স্থূলত্বের। আর প্রজনন বা সন্তানধারণ সংক্রান্ত সমস্যার সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সংযোগ রয়েছে অতিরিক্ত ওজনের। তবে এর জন্য রোজকার ব্যবহৃত রান্নার তেল বদলে খুব একটা লাভ হবে না। এমনটাই মনে করেন চিকিৎসকরা। তাদের মতে, দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। ফলে পলিস্টিটিক ওভারি বা জরায়ু সংক্রান্ত নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই তেল খাওয়ার পরিমাণ কমাতেই হবে।
চুলের জন্য তেল উপকারি। ত্বকে মাখলেও জেল্লা বাড়ে। তবে খাদ্য হিসেবে তেল মোটেও উপকারি নয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে, অনেকেরই ত্বক তৈলাক্ত। তার ওপর বেশি তেল খেলে ত্বকের গ্রন্থিতে আরও বেশি করে তেল বা সেবাম তৈরি হয়। এতে ব্রণের আধিক্য বাড়ে।
ইদানীং ত্বকের যত্নে কোরিয়ান প্রসাধনীর ব্যবহার বেড়েছে। কিন্তু জানলে অবাক হবেন, কোরিয়ানদের কাচের মত স্বচ্ছ ত্বকের রহস্য লুকিয়ে রয়েছে তাদের ডায়েটে। তারা তেল, মশলা, চিনি আর দুধ খান না। আমাদের ডায়েট থেকে তেল পুরোপুরি বাদ দেওয়া না গেলেও খাওয়ার পরিমাণ কমাতে হবে। অলিভ অয়েল দামী তেল। এর পরিবর্তে সরিষা বা সূর্যমুখীর তেল ব্যবহার করুন। যত কম তেল খাবেন ততই মঙ্গল।
Discussion about this post