নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি এবং হতাহতের ঘটনায় অতিষ্ঠ ৬০ জনের মতো বাসিন্দা থানায় গিয়ে নিজেদের নিরাপত্তা চেয়ে পাঁচ দফা দাবি দিয়েছে। এছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে ৭২ ঘণ্টার সময় দিয়েছেন তারা। এতে পরিস্থিতির উন্নতি না হলে থানায় অবস্থানের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
শনিবার (২৬ অক্টোবর) বিকেল পাঁচটার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় এই আল্টিমেটাম দেয়ার ঘটনা ঘটে। এর আগে গত ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর পুলিশের উধাও হয়ে যাওয়ার পর ঢাকা শহরের আনাচে কানাচে দেখা দিয়েছিল ডাকাত আতঙ্ক। মোহাম্মদপুর তার বাইরে ছিল না। সে সময় রাত জেগে বা দিনের বেলায় স্থানীয়রা পাহারা দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। এরপর ধীরে সুস্থে ফিরেছে পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেটি পাওয়া সেনাবাহিনীও নিরাপত্তার দিক দিয়ে অবদান রাখছে।
তবে মোহাম্মদপুরের কোনো উন্নতি নেই, বরং দিনকে দিন পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো বেশ কিছু ভিডিও তুমুল আলোচনা তৈরি করেছে। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া আইনশৃঙ্থলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় মোহাম্মদপুর ছেড়ে নগরীর অন্য এলাকায় বাড়ি ভাড়া করার চেষ্টাও করছেন অনেকে, মোহাম্মদপুরে কাজ শেষ হওয়ার পরেও ফাঁকা বাড়িগুলো ভাড়া হচ্ছে না। এছাড়া শুক্রবার রাতে বসিলায় একটি মিনি সুপারশপে অস্ত্রধারীদের ঢুকে ডাকাতির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। একই রাতে ঢাকা উদ্যান এলাকায় ‘গণ ছিনতাই’ তার দুই দলের মধ্যে সশস্ত্র মহড়ার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
আর গত ২৪ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদপুরে শাহীন ও রিয়াজ নামে ওয়ার্ড বিএনপির দুই নেতাকে কুপিয়ে আহত করা হয়। এর আগে ২০ অক্টোবর মোহাম্মদদীয়া হাউজিং লিমিটেড এলাকার সড়কে ‘নেসলে’ কোম্পানির একটি গাড়ি থামিয়ে ছুরি-চাপাতির মুখে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ও ১৭ হাজার টাকার চেক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। আগের রাতে শিয়া মসজিদ এলাকায় বাজার কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বে আবুল হোসেন ও মাহবুব হোসেন নামের দুইভাইকে গুলি করা হয়। ১৭ অক্টোবর মোহাম্মদপুরের বেড়ীবাঁধ সংলগ্ন গ্রিন ভিউ হাউজিংয়ের সড়কে শাহাদত হোসেন নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
এর দুদিন পরেই একই এলাকায় নাসির বিশ্বাস ও মুন্না নামে দুই যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ১৬ অক্টোবর বসিলায় শাহরিয়ার আশিক নামে এক অটোরিকশার চালককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এছাড়া ফাঁকা সড়কে কখনও সকালে, কখনও সন্ধ্যা বা রাতে এমনকি ভর দুপুরেও ছিনতাইয়ের ভিডিও ছড়িয়েছে। দোকানে বসে থাকা মানুষদেরকে কুপিয়ে একদল মানুষের অবলীলায় চলে যাওয়ার দৃশ্যও দেখা গেছে।
এর প্রেক্ষিতে মোহাম্মদপুরবাসীর পক্ষে পুলিশের কাছে দাবি উত্থাপন পারভেজ হাসান সুমন। তিনি বলেন, ৫ অগাস্টের পর পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কারণে ছিনতাইকারী ও কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত বেড়ে গেছে। আমরা এই অবস্থা থেকে মুক্তি চেয়ে মোহাম্মদপুর থানায় গিয়ে এডিসি ও ওসির কাছে আমাদের দাবির কথা তুলে ধরেছি। এতে মোহাম্মদপুরের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে করণীয় নির্ধারণ করতে ও বাসিন্দাদের সহায়তা চেয়ে রোববার (২৭ অক্টোবর) স্থানীয়দের সঙ্গে পুলিশ বৈঠক করতে চেয়েছে। একটা সময় নির্ধারণ করে পুলিশের সঙ্গে বসব। আর তারা বলেছে তিন দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসবে।
তিনি আরও বলেন, মোহাম্মদপুরবাসীর পক্ষ থেকে থানার কাছে মোট পাঁচটি দাবি তুলে ধরা হয়। এগুলো হল- ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মোহাম্মদপুর সংশ্লিষ্ট এলাকায় ছিনতাই ও ডাকাতি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। মোহাম্মদপুরের সন্ত্রাসপ্রবণ এলাকায় পুলিশের টহল বাড়াতে হবে ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। গ্রেপ্তারকৃত অভিযুক্তদের ব্যাপারে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ ও নিশ্চিত করতে হবে। কিশোর গ্যাং, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ‘অপতৎপরতা’, চাঁদাবাজি ও সহিংসতা বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং জনসাধারণের নিরাপত্তা আইনি সহায়তা নিশ্চিত করা ও তাদের হয়রানি বন্ধ নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশ- ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ জিয়াউল হক বলেন, মোহাম্মদপুরের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আমরা স্থানীয়দেরও সহায়তা চেয়েছি। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় বাড়তি ফোর্স মোতায়েনসহ টহল কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে। তাদের প্রত্যেকটা দাবির সঙ্গেই আমরা একমত। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা স্থানীয়দের সহায়তা চেয়েছি। স্থানীয়দের সঙ্গে কীভাবে কী করা যায় এসব আলোচনার জন্য আমরা বসব।
Discussion about this post