বিশেষ প্রতিনিধি
রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র কাপ্তান বাজারের মুরগি ব্যবসায়ীরা ফের চাঁদাবাজ ও দখলবাজদের খপ্পরে পর্যুদস্ত। ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির এক নেতার নাম ভাঙিয়ে চলছে চাঁদাবাজি। প্রতি রাতেই চলছে চাঁদাবাজির এই উৎসব। মধ্যরাতে কাপ্তানবাজারে সরেজমিন ঘুরে এবং বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ৫ ই আগস্ট সরকার পতনের পর অনেকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে ও দেশের ভেতরে আত্মগোপনে রয়েছে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী থেকে মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। ছাত্র-জনতার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ফলে দীর্ঘ বছর ধরে চলমান দেশের প্রেক্ষাপট বদলে গেছে। সংস্কারের কাজ চলছে দেশের সর্বত্র। শুধু রাজধানীর যে সকল জায়গাগুলো টাকা কামানোর জন্য প্রসিদ্ধ, সেগুলোর সবকিছুই বহাল রয়েছে। ছাত্র-জনতার বিরোধীতার কারণে কিছুদিন টাকা উঠানো বন্ধ থাকলেও আবার শুরু হয়েছে ফুটপাত ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা উঠানোর কাজ। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে এই এলাকা ছিল স্থানীয় কাউন্সিলর আহমেদ ইমতিয়াজ মন্নাফী গৌরবের দখলে । আর এখন অন্য রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙ্গিয়ে টাকা উঠাচ্ছে নতুন চাঁদাবাজরা ।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৩৮ নং ওয়ার্ডটি ঢাকা – ৬ আসনের নির্বাচনী এলাকার ওয়ারী থানার অন্তর্গত। গত সরকারের সময়ে এলাকাটি সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করতেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় কাউন্সিলর আহমেদ ইমতিয়াজ মন্নাফী গৌরব। কাপ্তান বাজারে রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি মুরগির বাজার। রাজধানীবাসীর মুরগির চাহিদা এই এলাকার ব্যবসায়ীরাই নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তাই সরকার সমর্থিত ব্যক্তিরাই এই এলাকার সকল কিছু নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। গত ৫ আগষ্টের পর কাপ্তানবাজারে রাতের মুরগির বাজার কে চালাচ্ছেন এমন প্রশ্ন সাধারণ ব্যবসায়ীদের?
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে বিএনপির স্থানীয় কয়েকজন নেতার নিয়ন্ত্রনে চলছে কাপ্তান বাজারের মুরগির পাইকারি বাজার । প্রতিরাতে উঠানো হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদা। মূলত দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নামে সিটি কর্পোরেশনের নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় মুরগির বাজার বসিয়ে খাস কালেকশন করার কথা বলা হলেও বৈধ কাগজে সূত্র ধরে অবৈধভাবে মুরগির বিট বসিয়ে দোকান সম্প্রসারণ করে প্রতিরাতেই লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদাবাজি করছে একটি চক্র। কাপ্তানবাজারের এই মুরগির বিট দোকান যেন আলাউদ্দিনের জাদুর চেরাগ হয়ে দেখা দিয়েছে। কাপ্তান বাজার থেকে প্রতিরাতে উঠে প্রায় পাঁচ থেকে সাত লক্ষ টাকার চাঁদা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি বছরের ৪ অক্টোবর স্বাক্ষরিত চিঠির স্মারক নম্বর- ৪৮৬৭ মূলে নির্দেশ দেয়া হয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক হাসপাতালের দক্ষিণ পাশের ব্লকে ২৪৪৮ বর্গফুট ও পার্শ্ববর্তী পশ্চিম ব্লগে ৩৯৭৭ বর্গফুটসহ সর্বমোট ৬৪২৫ বর্গফুট জায়গায় রাত্রিকালীন পাইকারি মুরগি বাজারের টোল আদায়ে এবং কাপ্তানবাজার কমপ্লেক্স-৩ এ মুরগি পট্টির অবশিষ্টাংশে ১০ হাজার ২০০ বর্গফুট চলমান মুরগির দোকান আদায়ের জন্য ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে নুর ইসলামকে দায়িত্ব দেয়া হয়।
কাপ্তান বাজার মুরগি পট্টি এলাকায় ঘুরে জানা যায়, মুরগির পাইকারি বাজারটি ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে হওয়ার কথা হলেও অবৈধভাবে ৩৯ নং ওয়ার্ডের বেশ কিছু জায়গায় বসানো হয়। রাতে এই মুরগির পাইকারি বাজার থেকে উত্তোলন করা হয় বিপুল পরিমাণে অর্থ।শুধু মুরগি ক্রেতা এবং মুরগি বিক্রেতা ছাড়াও আত্মপ্রকাশ করা বিএনপি’র কর্মীরা সমর্থকদের ব্যাপক আনাগোনা বাড়ে কাপ্তানবাজার এলাকায়। সাংবাদিক দেখলেই মাক্স পরছেন অনেকে। ৩৯ নং ওয়ার্ডের হোটেল ওসমানির সামনে মুরগির দোকানগুলি আছে সেগুলি নিয়ন্ত্রণে মূলত আছেন ৩৯ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ছিনতাই মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি এমদাদ পাটোয়ারী। যদিও তিনি দাবি করেন তিনি মুরগির ব্যবসায়ী। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মুরগির ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স করে শুরু করেছেন অবৈধ চাঁদাবাজি প্রায় ৪৯টি দোকান হতে তিনি প্রতিরাতে টাকা উত্তোলন করেন। দোকানগুলি নির্ধারিত জায়গার বাইরে বসানো। ৫ই আগস্টের পর সেনাবাহিনীর অভিযানে এই দোকানগুলি উচ্ছেদ করা হয়েছিল। কিন্তু পুনরায় আবারো এই দোকানগুলি থেকে অবৈধভাবে প্রতিরাতে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদা আদায় চলছে। পুরো কাপ্তান বাজার মুরগির বিট গুলি থেকে বিভিন্ন পন্থায় টাকা উঠানোর হয়। মুরগির প্রতি দোকান থেকে ২ হাজার টাকা করে নেয়া হয়। আর ময়লা পরিষ্কার ও বিদ্যুৎ বিলের নামে নেয়া হয় আলাদা আরো ২০০ টাকা।
মুরগির দোকান গুলোর ভাড়া নির্ধারণ করা হয় দোকানের পরিধির উপর। সিটি কর্পোরেশনের খাস আদায়ের নামে যেন হাতে-কলমে বৈধ চাঁদাবাজি। রাত থেকে ভোর পর্যন্ত চলে এই মুরগির দোকানগুলি।
নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিটি কর্পোরেশনের একজন কর্মকর্তা জানান, কাগজে কলমে নুর ইসলাম হলেও মূলত কাপ্তানবাজারের নিয়ন্ত্রণ করেন হামিদুর রহমান খান হামিদ নামে বিএনপির স্থানীয় এক নেতা। তার প্রতিনিধি হিসেবে দেখভাল করেন নুর ইসলাম। তার আদেশেই কাপ্তান বাজারের মুরগি পট্টি চলছে । থানা থেকে শুরু করে সাংবাদিক পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নিয়েছেন হামিদ ভাই এমন কথাই প্রচার করেছেন নুর ইসলাম। যা ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের এই শাখার সকলেই অবগত। আর নুর ইসলামের সার্বক্ষণিক সঙ্গী হিসেবে কাপ্তানবাজার এলাকার অন্যতম নিয়ন্ত্রক হলেন নিয়াজ মোর্শেদ।
এ বিষয়ে হামিদুর রহমান হামিদের সাথে প্রতিবেদকের মোবাইলে কথা হলে তিনি জানান, তিনি (হামিদ) কাপ্তান বাজারের মুরগির ব্যবসার সাথে কোনভাবেই সম্পৃক্ত নন এবং যে বা যারা এ বিষয়ে তার নাম সম্পৃক্ত করে বাজারে ছড়াচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেবেন।
Discussion about this post