নিজস্ব প্রতিবেদক
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই এক ধরনের টানাপড়েন চলছে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে। থমকে আছে ভারতীয় ভিসা কার্যক্রমও। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ায় অতিরঞ্জিত খবর প্রকাশ এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পরিস্থিতি নিয়ে বারবার উদ্বেগ প্রকাশে এই টানাপোড়েনের ব্যাপারটি স্পষ্ট হয় আরও। এর মধ্যেই বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তার ঘিরে নতুন মাত্রা পায় দু’দেশের মধ্যকার তিক্ততা।
সবশেষ জাতীয় পতাকার অবমাননা এবং আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলায় উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডাক পড়ে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার। এরপরই ঢাকা ও দিল্লি দু’পক্ষ থেকেই ‘সম্পর্ক স্বাভাবিক’ করার বার্তা এসেছে।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা করে ‘হিন্দু সংগ্রাম সমিতি’। সেখানে ভাঙচুরের পাশাপাশি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় হামলাকারীরা। এ ছাড়া বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া আরও কয়েকটি স্থানে বিক্ষোভ করে ভারতীয় বিভিন্ন সংগঠন। বাংলাদেশবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেয় তারা। বিক্ষোভ হয়েছে মুম্বাই সহকারী হাইকমিশনের সামনেও।
ভারতের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, সাম্প্রতিক হামলা ও বিক্ষোভের ঘটনা নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছে খোদ দিল্লিও। তাদের অভিমত, আগরতলায় যা হয়েছে, তা মোটেও ভালো হয়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চায় ভারত। এরই মধ্যে বিবৃতি দিয়ে ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশের পাশাপাশি বাংলাদেশি হাইকমিশনগুলোর নিরাপত্তা বাড়িয়েছে ভারত সরকার।
এ ছাড়া, মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তলবে হাজির হয়ে সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক বহুমুখী। আমরা অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করি। একে শুধু একটি বিষয়ে সীমাবদ্ধ করতে পারি না।
তিনি বলেন, ভারত সত্যিকার অর্থে একটি গঠনমূলক ও স্থিতিশীল সম্পর্ক চায়। এখানে কিছু বিষয় আছে। অনেক ক্ষেত্রে একে অপরের ওপর নির্ভরশীলতা রয়েছে। এই নির্ভরশীলতা আমরা উভয়ের স্বার্থে কাজে লাগাতে চাই। আমরা আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখব, যাতে দু’দেশই উপকৃত হয়। এখানে অনেক ইতিবাচক অগ্রগতিও রয়েছে।
একইদিন বিকেলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, সম্পর্কে আন্তরিকতা বাড়াতে যা করা দরকার, বাংলাদেশ তা করবে।
ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে আগরতলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত সাতজনকে আটকের পাশাপাশি নির্লিপ্ততার জন্য চারজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নয়াদিল্লির চাণক্যপুরীতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। হাইকমিশনের বাইরে জমায়েত ঠেকাতে মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ। ত্রিপুরা রাজ্য সরকারও বাংলাদেশবিরোধী বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করেছে।
Discussion about this post