নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে পড়ার পর জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম যে অভিযোগ করেছেন, তা ‘ভিত্তিহীন ও কল্পনাপ্রসূত’ বলে নাকচ করে দিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
উলটো জাতীয় নাগরিক পার্টিতে ‘ধনীদের অর্থায়ন’ এবং ছাত্রশিবিরের ইফতারের টাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সংগঠনটি।
শুক্রবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্ন তোলেন ছাত্রদলের শীর্ষ নেতারা।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘গত ৫ মার্চ সারজিস আলমের সঙ্গে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। দেশের যেকোনো জায়গায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছাত্রদলের নাম জড়ানোর একটি দূরভিসন্ধিমূলক প্রবণতা আমরা লক্ষ্য করছি। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।’
তিনি বলেন, সারজিস আলমের সঙ্গে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিরোধের সূত্রপাত নাগরিক পার্টি এবং গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের মধ্যকার ঢাবি বনাম প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে চলমান অভ্যন্তরীণ কোন্দল থেকে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সারজিস আলম এ ঘটনাকে রাজনৈতিক রূপ দেওয়ার জন্য ছাত্রদলকে দায়ী করে ফেসবুকে পোস্ট করেন। তার দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও কল্পনাপ্রসূত। সারজিস আলম তার পোস্টে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ‘সন্ত্রাসী, দুষ্কৃতকারী এবং টোকাই’ হিসেবে উল্লেখ করে নর্থ বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অপমান করেছেন। আমরা তার ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই। সারজিস আলমের বক্তব্যে জুলাই আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন ত্যাগকে মর্যাদাহানি করা হয়েছে। আমরা তার এ বক্তব্য প্রত্যাহার করার দাবি জানাচ্ছি।
ছাত্রদলের সভাপতি বলেন, গত বুধবার রাত ১০টার পরে সারজিস আলম তার কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে বসুন্ধরা এলাকার ঘাটপাড় থেকে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ নম্বর গেটের দিকে আসেন। এ সময় ৮ নম্বর গেটে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আড্ডারত ছিলেন। গেটের সামনে সারজিস আলমের উপস্থিতি দেখে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা সারজিস আলমকে উদ্দেশ করে ‘ঢাবি’র সিন্ডিকেট ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’ স্লোগান দেয়।
রাকিব বলেন, নবগঠিত গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যথাযথ মূল্যায়ন না করার অভিযোগে উক্ত ছাত্রসংগঠনটির কতিপয় ক্ষমতাশালী নেতা আত্মপ্রকাশের দিনেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মধুর ক্যান্টিনে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি এবং গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাম্প্রতিক উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কের কথা দেশের সব রাজনীতি সচেতন মানুষ অবগত। পূর্বের রেষারেষির জেরেই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সারজিস আলম শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন। এ সময়ে সারজিস আলমের সঙ্গে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে।
ছাত্রদলের সভাপতি বলেন, ওইদিন ঘটনাস্থলে ছাত্রদলের কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম ছিল না। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাও ঘটনাস্থলে ছিল না। সারজিস আলমের সঙ্গে ছাত্রদলের কোনো বিরোধ হয়নি। তবে উল্টো সারজিস আলমের শোডাউনে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসী এবং জুলাই আগস্টের গণহত্যার আসামিদেরকে দেখা গেছে। এভাবেই জাতীয় নাগরিক পার্টি ও তাদের ছাত্রসংগঠনে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন হচ্ছে। আমরা নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাকর্মীদের পুনর্বাসনের নিন্দা জানাই।
তিনি বলেন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সারজিস আলমের বিরোধের মধ্যে কোনো ছাত্রদল নেতাকর্মীর উপস্থিতি ছিল কিনা আমরা পর্যালোচনা করে দেখছি, তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করার কাজ চলছে। যদি ছাত্রদলের কারো কোনো ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতা থেকে থাকে তাহলে আমরা ছাত্রদলের পক্ষ থেকে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। একইসঙ্গে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার দায় ছাত্রদলের ওপর চাপানোর কৌশলের বিরুদ্ধে আমরা নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, ‘ন্যাশনাল সিটিজেন পাটির্ (এনসিপি) মুখ সংগঠনক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমের সঙ্গে ছাত্রদলের প্রত্যেকটি নেতা-কর্মীর সুসম্পর্ক রয়েছে, তাদের নিবিঢ় যোগাযোগ হয়। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ঘটনাটি ঘটেছে রাত ১০টার সময়ে, সেই সময়ে ধর্মপ্রাণ মসুলমানরা নামাজে ছিলেন। ওই সময়ে সারজিস আলম সেখানে কেনো গিয়েছিলেন? আমরা মনে করছি, উনার ভিন্ন মতলব থাকতে পারে। দ্বিতীয়টি হলো- নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সঙ্গে যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটি সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উনার ঝামেলা হয়েছে। এখানে ছাত্রদলের কোনো নেতাকর্মী কোনোভাবে জড়িত না’।
তিনি বলেন, আমরা গণমাধ্যমে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারিকে বলতে শুনেছি, তারা প্রতিদিন গণ-ইফতার কর্মসূচিতে ৩ লাখ টাকা ব্যয় করছেন। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, তারা এত টাকা কীভাবে উপার্জন করছেন। তাদের আয়ের উৎস কী? একটি সাধারণ ছাত্র সংগঠন মাসে ৯০ লাখ টাকা কোথায় পাচ্ছে। আমরা গণমাধ্যমের মাধ্যমে শিবিরের কাছে জানতে চাই।
নাছির আরও বলেন, ‘জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক বলেছেন- কিছু ধনী ব্যক্তি তাদের অর্থায়ন করেছেন। আমরা জানতে চাই, তারা যেসব ধনী ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ নিয়েছেন, বিপরীতে তারা তাদের (ধনী ব্যক্তিদের) কী ধরনের কমিটমেন্ট দিয়ে অর্থ নিয়েছিলেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে ছাত্রদল সভাপতি বলেন, ‘এটি সত্যি দুঃখজনক যে, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পরে বেশি কিছু বিষয়ে আমরা সরাসরি বলছি বিশেষ করে সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন কিংবা মাসুদ খন্দকার বলেন, যারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছোটখাটো ঘটনাতেও আমাদের ছাত্রদলের নাম জড়ায়। আমরা খুব পজেটিভ পলিটিক্স করছি সবগুলো ক্যাম্পাসে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বলেন, ছাত্রদল দ্বারা, ছাত্রদলের কোনো একজন নেতাকর্মী দ্বারা কোনো একটি হলে আজকের দিন পর্যন্ত কোনো একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আমাদের এ ধরনের পজেটিভি মুভমেন্টের কারণে প্রতিটি ক্যাম্পাসে বিপুল সংখ্যাক সাধারণ শিক্ষার্থীকে ছাত্রদলের পতাকাতলে দেখা যাচ্ছে।’
ছাত্রদলের ডাকে মার্চ ফর জাস্টিস, ছাত্রলীগের বিচার এবং তাদের দোসরদের বিচারের দাবিসহ বিভিন্ন সামাজিক এবং ক্রীড়া প্রতিযোগিতার কর্মসূচিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ব্যাপক হচ্ছে জানিয়ে ছাত্রদল সভাপতি বলেন, ‘ছাত্রদলের ইতিবাচক রাজনীতিকে কলুষিত করতেই বিভিন্নভাবে অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে।’
এ সময় ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুমসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন ছিলেন।
Discussion about this post