তানজিনুল ইসলাম তামিম
কাজী নওশাবা আহমেদ, একাধারে মডেল, অভিনেত্রী, কণ্ঠশিল্পী এবং একজন নিবেদিতপ্রাণ সমাজকর্মী। ঢাকার ফাইন আর্টস অনুষদ থেকে শিল্পের প্রতি যে গভীর অনুরাগ তৈরি হয়েছিল, সেই পথ ধরেই তিনি আজ বাংলাদেশের মিডিয়া জগতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। কেবলমাত্র ক্যামেরার সামনে বা মঞ্চেই নয়, সমাজের প্রতি তার দায়বদ্ধতাও তাকে করে তুলেছে অনন্য।
নওশাবার কর্মজীবনের শুরুটা হয়েছিল মঞ্চের আলো ঝলমলে পরিবেশে। ২০১১ সালে “সোনাটা” নাটকের মাধ্যমে তার অভিনয় জীবনের শুভ সূচনা হয়। মঞ্চের সফল পথচলার পর খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি টেলিভিশন নাটকেও নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। “ছোটবেলা বড়বেলা” নাটকের মধ্য দিয়ে ছোট পর্দার দর্শকদের হৃদয়ে তিনি নিজস্ব স্থান করে নেন।
কাজী নওশাবার নামের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে জনপ্রিয় শিশুতোষ টেলিভিশন অনুষ্ঠান “সিসিমপুর”। দীর্ঘ ছয় বছর ধরে তিনি এই অনুষ্ঠানে “ইকরি মিকরি” চরিত্রে কেবল কণ্ঠই দেননি, বরং এই জনপ্রিয় পাপেটটি পরিচালনাও করেছেন। শিশুদের কাছে “ইকরি মিকরি” যেমন ভালোবাসার এক চরিত্র, তেমনি নওশাবার কণ্ঠও তাদের মনে এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে।
বিজ্ঞাপনের জগতেও নওশাবা বেশ জনপ্রিয় মুখ। বাংলালিংক, গ্রামীণফোন এবং নেসক্যাফের মতো দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপনে তার উপস্থিতি দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছে। তার সাবলীল অভিব্যক্তি এবং আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব তাকে একজন সফল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
কাজী নওশাবা আহমেদ শুধু বিনোদন জগতেই সীমাবদ্ধ নন, সমাজের প্রতি তার সংবেদনশীলতা এবং দায়বদ্ধতা তাকে একজন প্রকৃত জনদরদীতে পরিণত করেছে। তিনি পশু অধিকার এবং পরিবেশগত সচেতনতা নিয়ে নিয়মিত কথা বলেন এবং বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। বিশেষ করে, ‘টুগেদার উই ক্যান’ (Together We Can) নামক একটি সংগঠন তিনি নিজেই প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই সংগঠনটি সবসময় পরিবেশ বাঁচানো, বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বিষয়গুলো নিয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করে আসছে। ‘টুগেদার উই ক্যান’-এর একটি নিজস্ব থিয়েটার গ্রুপও রয়েছে, যা বিভিন্ন সময়ে পরিবেশিত নাটকের মাধ্যমে সচেতনতামূলক বার্তা সমাজের মাঝে ছড়িয়ে দেয়। তার এই বহুমুখী অবদান এবং জনকল্যাণমুখী মনোভাব তাকে সাধারণ মানুষের কাছে আরও বেশি শ্রদ্ধার পাত্রী করে তুলেছে।

কাজী নওশাবা আহমেদ নিঃসন্দেহে বর্তমান তরুণ প্রজন্মের জন্য এক বড় অনুপ্রেরণা। শিল্পকলার প্রতি তার একাগ্রতা, অভিনয়ের মাধ্যমে অগণিত মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেওয়া এবং একইসাথে সমাজের প্রতি তার অঙ্গীকার—এই সবকিছুই তাকে একজন ব্যতিক্রমী এবং অনুকরণীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে। তার কাজ কেবল বাংলাদেশের বিনোদন জগৎকেই সমৃদ্ধ করেনি, বরং একটি সুন্দর, সচেতন ও মানবিক সমাজ গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
বর্তমানেও কাজী নওশাবা আহমেদ বিভিন্ন নাটকে এবং সমাজসেবামূলক কাজে সক্রিয় রয়েছেন। তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ পথচলার জন্য রইলো আন্তরিক শুভকামনা।
Discussion about this post