নিজস্ব প্রতিবেদক:
১ জুলাই ২০২৪ সালে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলন ৩ আগস্টে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে রূপ নেয়। ৪ আগস্ট ঘটে নজিরবিহীন সহিংসতা। ৫ আগস্ট আন্দোলনকারীরা ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে আসলে, শেখ হাসিনার সরকার পতনের পথে যায়।
সে দিন দুপুর আড়াইটার দিকে সামরিক বিমানে দেশ ত্যাগ করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা। তাঁদের বিদায়ের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ঘটে বড় পরিবর্তন।
পটভূমি ও আন্দোলনের ধারা ‘৩৬ জুলাই’র জন্ম: আন্দোলনকারীরা ঘোষণা দেন—দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত জুলাই চলবে। এতে ৫ আগস্ট হয়ে ওঠে ‘৩৬ জুলাই’, যেদিন ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক বিজয়গাঁথা রচিত হয়।
কারফিউ ভেঙে লাখো জনতার ঢাকামুখী যাত্রা: উত্তরা, মিরপুর, যাত্রাবাড়ীসহ রাজধানীর প্রবেশপথগুলো দিয়ে জনস্রোত ঢুকে পড়ে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়।
সরকার পতনের আভাস: দুপুর সোয়া ১টায় আইএসপিআর জানায়, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জাতির উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন। এরপরই স্পষ্ট হয়, সরকার পতনের ঘণ্টা বেজে গেছে।
সেনাপ্রধানের ভাষণ ও অন্তর্বর্তী সরকার বিকেলে সেনাপ্রধান জানান, একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সব হত্যা-সহিংসতার বিচার হবে বলেও তিনি আশ্বস্ত করেন।
বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত, হেফাজত, গণসংহতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ বিভিন্ন দলের ও শ্রেণির প্রতিনিধিরা অংশ নেন। রাতেই বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সভাপতিত্বে সর্বদলীয় বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।
নতুন পথচলার ঘোষণা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বক্তব্য: রাত সোয়া ৯টায় নাহিদ ইসলাম বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জাতীয় সরকারের রূপরেখা জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে।
বিএনপির অবস্থান: দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান।
সহিংসতা ও প্রাণহানি ৫ আগস্ট সহিংসতা: ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষ ও পুলিশের গুলিতে নিহত হন অন্তত ১০৯ জন। আগের দিন ৪ আগস্ট প্রাণ হারান আরও ১১৪ জন।
যশোরে অগ্নিকাণ্ড: শাহীন চাকলাদারের হোটেলে আগুনে দগ্ধ হয়ে নিহত হন ১৩ জন।
প্রতীকী স্থাপনাগুলোয় হামলা: ধানমণ্ডির বঙ্গবন্ধু ভবন, প্রধানমন্ত্রীর সুধাসদন, প্রধান বিচারপতির বাসভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর ও লুটপাট হয়।
৪৪ জেলায় সহিংসতা: ৫ আগস্ট রাত পর্যন্ত অন্তত ৪৪ জেলায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ হয়। ৯ মন্ত্রী ও ২৭ সংসদ সদস্যের বাড়িতে হামলার খবর দেয় গণমাধ্যম।
নতুন সূচনার ঘোষণা কারফিউ প্রত্যাহার: আইএসপিআর জানায়, ৬ আগস্ট ভোর ৬টা থেকে কারফিউ তুলে নেওয়া হবে। সব অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কারখানা খোলা থাকবে।
ইন্টারনেট চালু: দিনের বেলা মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পুনরায় চালু হয়।
Discussion about this post