নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশ-বিদেশ থেকে ‘স্বাধীনতাবিরোধী একটি চক্র’ প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান।
সোমবার (২৫ আগস্ট) দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট এনেক্স ভবনে ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে এ অভিযোগ তোলেন তিনি।
ফজলুর রহমান বলেন, আমাকে মব সৃষ্টিকারীরা হত্যার হুমকি দিচ্ছে। আমার সেগুনবাগিচার ভাড়া বাসার সামনে ওরা অবস্থান নিয়েছে। আজ আপনাদের মাধ্যমে আমি সারা জাতিকে জানাতে চাই, বাংলাদেশের মানুষ আপনারা জেনে রাখুন, আমার জীবন বড় শঙ্কায় আছে।
তিনি বলেন, আমার যে এলাকা— ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রামের মানুষের কাল থেকে বোধহয় নাওয়া-খাওয়া বন্ধ। যেটা আমার নির্বাচনী এলাকা (কিশোরগঞ্জ-৪) সেখানের মানুষ নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। আমি দেশের একজন মানুষ; সংবিধানের মৌলিক অধিকার অনুযায়ী, এ দেশে আমার বেঁচে থাকার অধিকার আছে।
কারা মব সৃষ্টি করছেন জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের এ জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বলেন, আমি ওদেরকে চিনি না— শিশু, বাচ্চা তো। ওরা সকাল ৭টা থেকে সেখানে আছে। শুনেছি তারা একটি ছাত্র সংগঠনের। তবে এটা আমাদের দলের ছাত্র সংগঠন নয়। আপনারা একটু খোঁজ নিয়ে দেখেন এরা কারা? মবসৃষ্টিকারীর সংখ্যা সাত থেকে নয় জন। ওরা বলছে, ফজলু পাগলাকে গ্রেপ্তার কর, ফজলু পাগলাকে বাঁচতে দেব না, ফজলু পাগলাকে হত্যা কর, এরকম আরকি।”
তিনি বলেন, আমি নাকি ফজলু পাগলা। এই ফজলু পাগলা নামটি প্রথমে আমাকে দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী জামায়াতে ইসলাম। প্রথমে এই কথাটা বলেছেন মুফতি আমির হামজা নামে একজন লোক।
এরকম পরিস্থিতিতে আপনি দল থেকে সহযোগিতা পাচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দল তো সাপোর্ট করবেই; করবে না কেন? আমি এবং আমার পরিবার যে হত্যার হুমকির মধ্যে পড়েছি, সেটা অবশ্যই আমি আমার দলকে জানাব। জানাব না কেন? আজ সারা জাতিকেও এ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানালাম।
ফজলুর রহমান বলেন, মৃত্যুকে আমি কোনো দিন ভয় করি না। কিন্তু অপমৃত্যু আমার কাছে সবচেয়ে বেশি লজ্জাজনক। আমার কাছে মনে হচ্ছে, দেশ-বিদেশ থেকে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি, যারা ইউটিউবার এবং যারা তাদের (স্বাধীনতাবিরোধীর) পক্ষে সাংবাদিকতা করে, তারাই এসব করছে। বেশ কিছু দিন ধরে তারা বলছে, মবজাস্টিস কর, ফজলুর রহমানের ওপর মব প্রযোজ্য। আর ফ্রান্স থেকে দুজন ইউটিউবার বলেছে, তাকে (ফজলুর রহমান) হত্যা কর? পরশু রাতে দেখলাম যে, জামায়াতের একজন ইউটিউবার বলছে যে, ফজলু পাগলাকে জবাই করে হত্যা করতে হবে।
মবসৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো মামলা করব না; জিডি-টিডি কিছুই করব না।
সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে ফজলুর রহমান বলেন, যারা ৫ অগাস্ট ঘটাইছে, কালো শক্তি, সেই কালো শক্তির নাম হল জামায়াতে ইসলাম, তাদের যে অগ্রগামী শক্তি, তার নাম হইল ইসলামী ছাত্রশিবির। সারজিস আলমরা, যারা এইটার (অভ্যুত্থানের) অভিনয় করছে, ৫ অগাস্টের অভিনেতা যারা, আমি তাদেরকে নেতা বলতে আর চাই না, তাদের আমি অভিনেতা বলব। সেই আলবদর, আল শামস, জামায়াতে ইসলাম আমরা মনে করেছিলাম ৫৪ বছর পর পূর্বপুরুষের পরাজয়ের গ্লানি তারা ভুলে গেছে। কিন্তু না, সেই পরাজয়ের গ্লানি দ্বিগুণ আকারে তাদের মধ্যে এসেছে।
এ বক্তব্য ঘিরে সমালোচনা শুরু হলে দল থেকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয় ফজলুর রহমানকে।
সে নোটিস সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা খুবই একটা স্বাভাবিক ঘটনা। একটা রাজনৈতিক দলে একজন কর্মীর প্রতি তার দল মনে করে যে, কর্মীর বোধহয় কিছু ত্রুটিবিচ্যুতি আছে, দল তাকে শোকজ করতেই পারে, আমাকেও করেছে।
এক সাংবাদিক বলেন, আপনার বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ যে, আপনি ৫ অগাস্টের অভ্যুত্থানকে নিতে পারছেন না। এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন?
জবাবে ফজলুর রহমান বলেন, তারা বলুক, তারা বললে যদি আমার অপরাধ হয়ে থাকে, তাহলে আমার বিরুদ্ধে মামলা করুক, আমার বিরুদ্ধে মিছিল করুক, জুতা মারুক। কিন্তু আমার বাসার সামনে গিয়ে মব সৃষ্টি করে আমাকে হত্যা করার স্লোগান দেবে, এটা হবে কেন?
তথ্য সূত্র: বিডি নিউজ২৪.কম
Discussion about this post