নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীর মিরপুর মেট্রো-১ সার্কেলের বিআরটিএ তে দীর্ঘদিন ধরে মোহাম্মদ ফয়েজ মোটরযান পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেই সময় অপকর্ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধভাবে অনেক সম্পদের মালিক হয়ে গেছেন । দালালের মাধ্যমে একে পর এক অনিয়ম ও দুর্নীতি করেই চলেছেন মোহাম্মদ ফয়েজ। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনিয়মের বিভিন্ন চিত্র ও গ্রাহকদের একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মন্ত্রী ,এমপি ও নেতাদের সহযোগিতায় মোটরযান পরিদর্শক ফয়েজ অপকর্ম, দুর্নীতি করে অবৈধভাবে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।
বিআরটিএ’র সাধারণ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মাধ্যমে জানা যায়, মোটরযান পরিদর্শক মোহাম্মদ ফয়েজ বিগত সরকারের আমলে অর্থ যোগানদাতা হিসেবে কাজ করে গেছে । সে আওয়ামী লীগের দোসরকে কিভাবে হঠাৎ করে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হলো ! মোটরযান পরিদর্শক থেকে সে এখন সহকারি পরিচালক হিসেবে বিআরটিএতে পারমিট সেকশনে দায়িত্ব পালন করছেন।
বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান সহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা তার বিরুদ্ধে তদন্ত না করে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। এই পদোন্নতিকে হাতিয়ার হিসেবে আরো দুর্নীতি ও অনিয়মের কাজে সুযোগ করে দিলেন।
সাধারণ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অভিযোগে আরো জানা যায়, সংশ্লিষ্ট বিভাগের ভালো কর্মকর্তারা পদোন্নতি পাচ্ছে না। অথচ দুর্নীতি-অনিয়মের জড়িত অফিসার মোহাম্মদ ফয়েজকে পদোন্নতি দিয়ে সহকারী পরিচালক বানাইলেন। তার এই পদোন্নতি সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মেনে নিতে পারছে না। তাদের মুখে ফয়েজের ব্যাপারে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। পদোন্নতির আগে দুর্নীতিবাজ অফিসার মোহাম্মদ ফয়েজকে বট গাছের মত ছায়া দিয়ে রেখেছিলেন সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শামসুল কবির । তার ছত্রছায়ায় একের পর এক বিআরটিএতে অপকর্ম-দুর্নীতি করে আসছিলেন। দীর্ঘদিন মোটরযান পরিদর্শক হিসেবে মিরপুর বিআরটিএতে একই বিভাগের থেকে অসাধু কর্মকর্তা, কর্মচারী ও দালালদের সাথে ফয়েজের একটি সখ্য তৈরি হয়েছিল। সে সখ্যকে হাতিয়ার হিসেবে অনিয়ম ও দুর্নীতি করে তাদের মাধ্যমে অবৈধভাবে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন সেই বিভাগ থেকে।
সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে জানা গেছে , মোটরযান পরিদর্শক মোহাম্মদ ফয়েজ মিরপুর বিআরটিএতে আসার আগে সিরাজগঞ্জ বিআরটিএতে কর্মরত ছিলেন। সেখান অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে তাকে বদলি করে দেয় বগুড়া বিআরটিএতে । সেখানও একই অভিযোগে কারণে তাকে বদলি করে মিরপুর বিআরটিএতে। এই সুযোগে একই জায়গায় দীর্ঘদিন থেকে অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসছিলেন।
অভিযোগে জানা গেছে, মোটা অংকের অর্থের বিনিময় কিছুদিন আগে পদোন্নতি নিয়ে বর্তমানে সহকারী পরিচালক হিসেবে বিআরটিএ’র পারমিট সেকশনে দায়িত্ব পান তিনি । এখন তার জন্য আরো সুবিধা হয়ে গেল এই সেকশনের কর্মকর্তা , কর্মচারী ও দালালদের মাধ্যমে অবৈধভাবে গ্রাহকদের কাছ থেকে সুকৌশলে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে মোটা অঙ্গের অর্থ ।
দালাল সুলতান জানায়, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সহযোগিতা আমরা কাজ করছি আমাদের সঙ্গে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ হয়েছে। আমাদের মাধ্যমে তারা বিআরটিএতে আগত গ্রাহকদের কাছ থেকে অবৈধভাবে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন।
পারমিট সেকশনে যারা কাজে নিয়োজিত আছেন তাদের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
গ্রাহক আব্দুল কাইয়ুম জানান, পারমিট সেকশনটি একটি দুর্নীতি আখড়া তৈরি করেছেন দায়িত্বরত অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী এমনকি দালালরাও। সেখানে টাকা ছাড়া কোন কাজ তাড়াতাড়ি পাওয়া যায় না। গাড়ির কোন কাগজপত্র তল্লাশি করতে দিলে তাও তাদেরকে টাকা দিতে হয়। তিনি আক্ষেপ করে বলেন সরকারি প্রতিষ্ঠানে টাকা দিয়ে কাজ করতে হয় তাহলে সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়। এইসব দুর্নীতিবাজদের দেখার জন্য কেউ নেই ? তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে তারা দিনের পর দিন মাসের পর মাস একইভাবে দুর্নীতি– অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছে। এই দুর্নীতিবাজদের অবৈধ অর্থ উপার্জনের ভাগ নিচ থেকে শুরু করে উপর পর্যন্ত চলে যাচ্ছে । তার কারণে ওই সব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না ।
এ ব্যাপারে পারমিট সেকশনে সহকারি পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজের সঙ্গে মোবাইল ফোনে মাধ্যমে যোগাযোগ করে তার বিরুদ্ধে আনীত দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ গুলোর সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথম অবস্থায় তিনি কথা বলতে রাজি হননি। এই প্রতিবেদক যখন বারবার একের পর এক প্রশ্ন করছিলেন তখন তিনি বলেন আমি এইসব কাজে জড়িত নয় ।
এদিকে বিআরটিএ’র ঢাকা বিভাগীয় সাবেক পরিচালক এবং বর্তমানে পরিচালক ( ইঞ্জিঃ) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ কাছে মোবাইল ফোনে অনিয়মকারী মোহাম্মদ ফয়েজসহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবাইকে সতর্কভাবে কাজ করা উচিত। বিআরটিএ আগত গ্রাহকরা যেন কোন প্রকার হয়রানি শিকার না হন সেইদিকে সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আর যদি কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ অফিসে আসলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে। আশা করি কোন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা দুর্নীতি ও অনিমের জড়িত না হন।
Discussion about this post