নিজস্ব প্রতিবেদক
ডিসেম্বরের মধ্যে নিউমুরিং-পানগাও-লালদিয়াসহ তিনটি কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি অপারেটরদের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন নৌ পরিবহন সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ। এছাড়া, কোনো অবস্থাতেই বন্দরের পণ্য ওঠা-নামায় বাড়তি ৪১ শতাংশ মাশুল কমানো হবে না।
তিনি বলেন, এর মধ্যে লালদিয়ার চর টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হবে ৩০ বছরের জন্য, আর বাকি দুই টার্মিনাল পরিচালনার মেয়াদ হবে ২৫ বছর।
রোববার রাজধানীতে এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় জাহাজ আমদানি ও বিক্রিতে সরকারের নিয়ম সহজ করার তাগিদ দেন উদ্যোক্তারা।
আধুনিক অবকাঠামো, দক্ষ জনবল ও সঠিক নিয়ম নীতির কারণে শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুরসহ আধুনিক বন্দরগুলো একদিনে পণ্য খালাস করলেও, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য খালাস হতে গড়ে তিন থেকে চার দিন সময় লাগে। অনেক সময় দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত সময় ব্যয় হয় পণ্য খালাসে। এমন পরিস্থিতিতে গড়ে ৪১ শতাংশ মাশুল বাড়িয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত সমুদ্রগামী জাহাজ শিল্পের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনায় বক্তারা বলেন, জাহাজের সংখ্যা বাড়লে দেশে আমদানি রপ্তানির পরিমাণ বাড়বে। তবে জাহাজ আমদানি থেকে শুরু করে বিক্রি পর্যন্ত নানা নিয়ম নীতির কারণে এ শিল্প তেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে না। কাঁচামাল আমদানিতে বিভিন্ন নীতি সহায়তার তাগিদ দেন তিনি।
সমুদ্রগামী জাহাজ মালিক সমিতির সভাপতি আজম জে চৌধুরী বলেন, যেকোনো জাহাজ যখন আপনি কিনবেন, আপনি যদি ৫ হাজার টনের জাহাজ যদি কেনেন তাহলে এটা ওশন গোয়িং হবে। এবং এটি আপনি তিন বছরের আগে বিক্রি করতে পারবেন না। এটা কেমন কথা! আপনি একটি গাড়ি কিনেছেন ভালো না লাগলে এক বছর পর বেচে দেবেন। এটা আটকে দেয়ার কি আছে আমি জানি না। এই সমস্ত কারণে বাংলাদেশ সবসময় পেছনে আছে।
প্রতিবেশী ভারত, মিয়ানমারসহ অনেক দেশেই বন্দর পরিচালনায় বিদেশি অপারেটর কাজ করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আলোচনা শুরু হয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি অপারেটরদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে স্ট্র্যাটেজিক ইস্যু আছে, ভৌগোলিক ইস্যু আছে। আমরা মনে করি, সেটা বড় কোনো বিষয় হবে না।
‘শ্রীলঙ্কা, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের বন্দরে বিদেশি অপারেটর কাজ করছে। সেখানে কোনো সমস্যা না হলে- এখানে সমস্যা হবে কেন? এখন একটি জাহাজ একদিনের জন্য ওয়েটিং ফি (বন্দরে অপেক্ষার জন্য মাশুল) দেয় ১৫ হাজার ডলার। আমাদের ৩-৪ দিনের মতো লাগে একটি জাহাজ বন্দরে ভিড়ে পণ্য খালাস করে চলে যেতে। সেই সময় যদি অর্ধেকে নামিয়ে আনা যায়, তাহলে ব্যবসায়ীদের খরচ কমে যাবে। অযথা ওয়েটিং বিল দিতে হবে না।’
বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশি কোম্পানি নিলে সেবা ফি বেড়ে যাবে বলে ব্যবসায়ীরা যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, সেই প্রসঙ্গে নৌসচিব বলেন, ১৯৮০ সাল থেকে একই শুল্ক নিয়ে আসছে বন্দর। এত বছরে বন্দরের সেবা ফি বাড়ানো হয়নি। সরকারকেও তো চলতে হয়, ফি তো একটু বাড়াতে হবে। তবে তা যৌক্তিকভাবে করা হবে। সবচেয়ে ভালো হতো যদি প্রতি ৫ বছর পরপর সরকার মাশুল বাড়াতো, তা তো করা হয়নি।
এ সময় নৌ পরিবহনের সিনিয়র সচিব বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে সিন্ডিকেটসহ নানা জটিলতার কারণে জাহাজগুলো থেকে পণ্য খালাসে দীর্ঘ সময় লাগে। তবে বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘কোনোভাবে আমাদের ট্রেডিং রেট আমরা যেভাবে আছে ওইটার ওপর ভিত্তি করেই কিন্তু আমরা নেগোসিয়েশনগুলো করছি। ২০৩৬ সালে আপনারা জানেন ৫ দশমিক ৩৬ মিলিয়ন টুলস হ্যান্ডেল করতে হবে। সেটা যদি হ্যান্ডেল করতে হয় সেটা কিন্তু বিদেশি অপারেটর ছাড়া সম্ভব না।
বন্দরগুলোর অনিয়ম রোধ ও সক্ষমতা বাড়াতে পারলে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে বলেও আশা করেন আলোচকেরা।
Discussion about this post