নিজস্ব প্রতিবেদক
তিন দিন ধরে ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি ও দুদিন ধরে কর্মবিরতি চালিয়ে আসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা একাদশ গ্রেডে বেতনের আশ্বাসে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন।
সোমবার সন্ধ্যায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অর্থ মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার পর এ ঘোষণা দেন ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (শাহিন-লিপি) সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি।
রাত ৮টার পর ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, “আমাদের একাদশ গ্রেডে বেতন দেওয়া হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় আমাদের আশ্বাস দিয়েছে, এমনটা আগে কখনও দেয়নি। আমরা আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করব। শহীদ মিনারে গিয়ে নেতারা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন। আগামীকাল থেকেই আমরা ক্লাসে ফিরে যাব।”
লিপি আরও বলেন, “দশম গ্রেডে বেতন আমাদের প্রাণের দাবি, এ দাবিটা সহকারী শিক্ষকদের চলমান থাকবে। তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয় বাস্তবতার নিরিখে এগারোতম গ্রেডকে যুক্তিযুক্ত মনে করেছে। আমরা বারোতম গ্রেড নিয়ে উৎকণ্ঠায় ছিলাম, এখন এটিই একটি যুগান্তকারী ফসল।”
তিনি জানান, “অর্থ মন্ত্রণালয় লিখিতভাবে নিশ্চিত করেছে যে এগারোতম গ্রেড দ্রুত সময়ের মধ্যে পে কমিশনে পাঠানো হবে এবং কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে তা কার্যকর করা হবে। এটাই আমাদের আন্দোলনের বড় অর্জন।”
শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থ বিভাগের সচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার। সভায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানাও উপস্থিত ছিলেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার আবদুল্লাহ শিবলী সাদিক সাড়ে ৮টায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, “সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড উন্নীত করার বিষয়ে অর্থ বিভাগ জাতীয় বেতন কমিশন ২০২৫ এ প্রস্তাব পাঠিয়েছে, যা কমিশনের বিবেচনাধীন রয়েছে। সুপারিশ পাওয়ার পরে অর্থ বিভাগ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করবে।”
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, “দশম গ্রেড ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা এবং শতভাগ পদোন্নতির বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। এসব বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রস্তাব দিলে অর্থ বিভাগ তা পর্যালোচনা করবে।”
তবে আন্দোলনরত শিক্ষকদের একাংশ এখনই আন্দোলন প্রত্যাহারে রাজি নন। শহীদ মিনারে অবস্থান করা কিছু শিক্ষক জানান, প্রজ্ঞাপন ছাড়া তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করবেন না।
রাত সোয়া ৯টার দিকে পুলিশ শহীদ মিনার এলাকা থেকে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সরিয়ে দেয়। লক্ষ্মীপুরের সহকারী শিক্ষক রাশেদ শাহরিয়ার আজিম জানান, “আমাদের কেন্দ্রীয় নেতারা আন্দোলন প্রত্যাহার করেছেন। শহীদ মিনার থেকে শিক্ষকদের পুলিশ সরিয়ে দিয়েছে। তবে সাধারণ শিক্ষকরা প্রজ্ঞাপন ছাড়া আন্দোলন থামাতে চান না।”
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা দশম গ্রেডে বেতন, চাকরির ১০ ও ১৬ বছরে উচ্চতর গ্রেড এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির দাবিতে শনিবার সকাল থেকে শহীদ মিনারে অবস্থান শুরু করেছিলেন। শাহবাগে মিছিল নিয়ে গেলে পুলিশ জলকামান, সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদুনে গ্যাস ব্যবহার করলে দেড় শতাধিক শিক্ষক আহত হন এবং ৫ জন গ্রেপ্তার হন।
পরে শিক্ষকরা শহীদ মিনারে ফিরে কর্মবিরতি শুরু করেন এবং সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেন।










Discussion about this post