ক্রীড়া প্রতিবেদক :
আগামি ১৩, ১৪ ও ১৬ নভেম্বর ঢাকার মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের তিন ম্যাচের প্লে অফ হকি সিরিজ।
এ সিরিজকে সামনে রেখে গতকাল হকি স্টেডিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ কোচ সিগফ্রাইড আইকম্যান, অধিনায়ক রেজাউল করিম বাবু। পাকিস্তান অধিনায়ক শাকিল ভাট ও কোচ বক্তব্য রাখেন।
তিনি বলেন, আমরা খেলার জন্য প্রস্তুত, আর যদি আমরা খেলার জন্য প্রস্তুত থাকি, তাহলে জয়ের জন্য চেষ্টা করারও প্রস্তুতি আছে। কিন্তু এর বেশি কিছু করা যায় না। আপনি আপনার সর্বোচ্চটা দেবেন, তারপর আল্লাহ ঠিক করবেন ফলাফল কী হবে। খেলাধুলায় এমনই হয়— সবকিছুই সম্ভব। তবে সত্যি বলতে, যেমনটা আপনি জানেন, তাই প্রশ্ন করেছেন, আমাদের আর তাদের মধ্যে বড় ফারাক আছে। সেই ফারাকটা কমানোই এখন লক্ষ্য।
আমরা যতটা পারা গেছে, প্রস্তুতি নিয়েছি, এবং সেই প্রস্তুতি নিয়েই আমরা মাঠে নামব। আমরা সেই ম্যাচটির জন্য মুখিয়ে আছি এবং লড়াই করব।

দ্বিতীয় প্রশ্নটা একটু রাজনৈতিক। এই ছেলেরা আমার জন্য কিছু করতে পারবে না, তাই আমি এখনো ১০ মাসের বেতনের অপেক্ষায় আছি— আসতে পারে, নাও আসতে পারে, সেটা আল্লাহই জানেন। পাকিস্তানের খেলোয়াড়রাও এখনো তাদের পাওনা টাকার অপেক্ষায় আছে। আমরা সমস্যাটা জানি, আর সমস্যা সবসময় একই। সুতরাং এই প্রসঙ্গে আর কিছু না বলাই ভালো।
পাক কোচ এক প্রশ্নের জবাবে আরো বলেন, খুবই কঠিন। এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ, সহজ নয়। শুধু র্যাংকিং নয়, অভিজ্ঞতার দিক থেকেও বড় পার্থক্য আছে। পাকিস্তান দল সম্প্রতি অনেক ম্যাচ খেলেছে। তারা প্রো লিগে (পরোক্ষভাবে) কোয়ালিফাই করেছে, এবং অন্যান্য টুর্নামেন্টেও ভালো করেছে। তাই তাদের মনোবলও ভালো, খেলোয়াড়রাও দক্ষ এবং চটপটে। আমি তাদের অনেককেই চিনি, জানি তারা কী করতে পারে।
একজন আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করছে— আহমাদ, তুমি যথেষ্ট ভালো খেলোয়াড়। কিন্তু আমি ওদের আগেই বলেছি, আমার শেখানো কৌশল দিয়েই যেন আমাকে হারাতে না আসে! কারণ আমি তাদের কোচ ছিলাম, তারা জানে আমি কী ভাবি, কী করি, কী চাই এবং কী দাবি করি। তাই তারা জানে তারা কাদের মুখোমুখি হবে, আর আমরাও জানি তারা কারা। এতে ম্যাচটা আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।
তবে এটা সত্যিই একটা বড় চ্যালেঞ্জ। অভিজ্ঞতা ও ম্যাচ খেলার ধারাবাহিকতা পাকিস্তানের বেশি, ফলে তারা আমাদের চেয়ে দ্রুতগতিতে খেলতে সক্ষম— এটিই বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।
বাংলাদেশ কোচ বলেন, পাকিস্তানকে হারানো কঠিন। তাদের হারানো কখনোই সহজ নয়। সেরা দলগুলোরও পাকিস্তানকে হারাতে সমস্যা হয়। কারণ তাদের খেলোয়াড়দের নিজেদের ওপর বিশ্বাস অনেক বেশি, এবং তারা সর্বোচ্চটা দেওয়ার মানসিকতা রাখে। সেটাই তাদের শক্তি।
আমাদের সৌভাগ্য যে আমরা তাদের চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ পেয়েছি। এই অবস্থানটা বাংলাদেশের দল অর্জন করেছে নিজেদের যোগ্যতায়। এশিয়া কাপে তারা ভালো খেলেছে, এমনকি পাকিস্তানকেও চ্যালেঞ্জ করেছে। এবার তারা পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাই খেলছে— এটা প্রমাণ করে যে দলটি উন্নতি করছে এবং তারা এই অবস্থানের যোগ্য।
কোচ আরো বলেন, বর্তমানে জাতীয় দলে আন্ডার-২১ দলের আটজন খেলোয়াড় আছে। আমরা একসাথে অনুশীলন করি, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি। এতে উভয় দলেরই উপকার হয়েছে।
জাতীয় দলের জন্য উপকার হয়েছে কারণ তারা এমন তরুণদের বিপক্ষে খেলেছে যারা নিজেদের প্রমাণ করতে চায়, লড়াকু, এবং মানসিকভাবে চাপমুক্ত।
খেলায় সবসময়ই সম্ভাবনা থাকে। সেটাই খেলাকে আকর্ষণীয় করে তোলে। যদি সবকিছু র্যাংকিং নির্ভর হতো, তাহলে খেলা খুবই একঘেয়ে হয়ে যেত। যেকোনো দলই স্ক্রিপ্ট উল্টে দিতে পারে— কখনো সেটা হয় ম্যাচের একটা অর্ধে, কখনো পুরো ম্যাচে। আমরা আশা করি আমরাও তেমন কিছু করতে পারব। এটা শুধু আমাদের আশা নয়, স্বপ্নও— কারণ সিনিয়ররাও বিশ্বকাপে খেলতে চায়, যেমনটা জুনিয়ররা ইতিমধ্যেই করেছে। তাহলে সিনিয়ররা কেন নয়?
খেলার কৌশল কেমন হবে?
কোচ: প্রতিপক্ষ শুনছে, তাই না? (হাসি) তবে তারা জানে আমাকে। আমরা যতটা সম্ভব আক্রমণাত্মকভাবে খেলব, আর প্রয়োজনে রক্ষণও ঠিকমতো করব। কিন্তু আমাদের উদ্দেশ্য রক্ষণাত্মক খেলা নয়, কারণ আপনি যদি আক্রমণ না করেন, তাহলে জিততেও পারবেন না। তাই আক্রমণ করতে হবে, সুযোগ তৈরি করতে হবে। আমরা দুই দিকই ব্যালান্স করার চেষ্টা করব।
পাকিস্তান কোচ বলেন,
প্রথমেই আমি ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশের আতিথেয়তা, সুন্দর পরিবেশ ও ভালো মাঠের জন্য। এই সিরিজ দুটি দলের জন্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও, খেলোয়াড়দের সারা বিশ্বে সমান সুযোগ দেওয়ার জন্য আমি এফআইএইচকে ধন্যবাদ জানাই। আমি মনে করি, এই ম্যাচগুলো এবং পুরো সিরিজটাই খুব গুরুত্বপূর্ণ। ইনশাআল্লাহ, এশিয়ায় আমরা ভালো হকির প্রদর্শনী দেখতে পাব।
না, কেউই সহজে জিততে পারে না। এটা প্রতিযোগিতা। আমি এশিয়া কাপে বাংলাদেশের খেলা দেখেছি— তারা ভালো দল, শারীরিকভাবে প্রস্তুত এবং ফিট। আমি মনে করি প্রতিটি ম্যাচই হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও ভালো হকি। বাংলাদেশ মোটেও সহজ প্রতিপক্ষ নয়।
পাকিস্তান অধিনায়ক আম্মাদ শাকিল ভাট বলেন,
আমি ঢাকায় এসে খুব খুশি তিন ম্যাচের এই সিরিজ খেলতে, বাংলাদেশের জাতীয় দলের বিপক্ষে। এটি দুই দলের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি টুর্নামেন্ট, কারণ এখান থেকেই বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে ওঠার সুযোগ রয়েছে।
বিশেষ করে আমি বাংলাদেশের আতিথেয়তা এবং এখানকার মানুষদের নিয়ে বলতে চাই— আমি এখানে অনেকবার খেলেছি। এবার আশা করছি, মাঠে আরও বেশি দর্শক থাকবে। অবশ্যই বাংলাদেশকে সমর্থন করবে, কিন্তু আমাদের দলকেও যেন সমর্থন করে, সেটাই আশা করি।
না, কোনো প্রভাব পড়বে না। আমাদের ভালো সিস্টেম আছে, ভালো কোচিং স্টাফ আছে। পুরো দল একসঙ্গে কাজ করছে। তাই আমরা প্রথম উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচের অপেক্ষায় আছি।
বাংলাদেশ অধিনায়ক রেজাউল করিম বাবু বলেন, আপনারা জানেন যে ক্রিকেট-ফুটবলের চাপে আমরা হকিটা অনেকটা পিছিয়ে গিয়েছি, সেটা বিভিন্নভাবে হোক। তারপরও আপনারা এসেছেন সবাই, অনেক মিডিয়া এসেছেন, দেখে ভালো লাগলো। আশা করব যে হকিটাকে আপনারা এভাবেই প্রচার করবেন আর হকির প্রসারে আপনারা সহায়তা করবেন।
বাবু বলেন, আমরা যখন একটা নির্দিষ্ট সময় প্র্যাকটিসের মধ্যে থাকি বা একটা টুর্নামেন্ট যখন খেলা হয় তারপরে দেখা গেল যে আমাদের ফিজিক্যাল লেভেলটা বা ট্যাকটিক্যাল যে ব্যাপারটা এটা অনেক আপ করে। এরপরে দেখা যায় আমরা আবার তিন চার মাস একদম আউট অফ হকি তে চলে যাই। সেটা আমাদের ফিটনেসের জন্য হোক বা মেন্টালি সব দিকেই আমরা পিছিয়ে পড়ি। তো ফেডারেশন যদি এই ধারাবাহিকতাটা বজায় রাখে যে প্র্যাকটিস টুর্নামেন্ট হতে পারে বা আপনার ক্যাম্প হতে পারে, লোকাল টুর্নামেন্ট হতে পারে, লিগ হতে পারে যেকোনো খেলার মাধ্যমে যদি আমরা থাকি, মধ্যে থাকি, তাহলে আমার মনে হয় যে হকি গ্র্যাজুয়ালি আপ করবে। যদি প্লেয়াররা যদি খেলার বাহিরে চলে যায় তাহলে সেখানে ইম্প্রুভ করার সুযোগটা অনেকটাই কমে যায়।
অধিনায়ক বলেন, আমরা বাস্তবতাটা সবাই জানি যে পাকিস্তান আমাদের চেয়ে বেটার টিম। তো এর আগেও আমি বলেছি এখানে আমাদের হারানোর কিছু নেই। তবে আমরা যদি নিজেদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারি তাহলে পাওয়ার অনেক কিছু আছে। আর যেহেতু আরেক যেটা বললেন যে সিনিয়র জুনিয়র হ্যাঁ আমাদের টিমে সাতজন অনূর্ধ-২১ দলের প্লেয়ার আছে। তো তাদের সাথে আমাদের আন্ডারস্ট্যান্ডিংটা ভালো। কারণ এর মধ্যে চারজন প্লেয়ার অলরেডি তিন-চার বছর হয়ে গেছে ন্যাশনাল টিমে খেলা। তো ডেফিনেটলি ঐদিক থেকে আমাদের সবার আন্ডারস্ট্যান্ডিংটা আগের মতোই আছে। তো আশা করা যায় একটা ভালো কিছু হবে। তবে আমরা চেষ্টা করব যে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করার জন্য, ভালো কিছু একটা করার জন্য।










Discussion about this post