বিনোদন ডেস্ক
বলিউডের কিংবদন্তি অভিনেতা ধর্মেন্দ্রর মৃত্যু হয়েছে। আজ দ্য হিন্দু, এনডিটিভি, ফিল্মফেয়ারসহ আরও কিছু ভারতীয় গণমাধ্যম নিশ্চিত করেছে, না–ফেরার দেশে চলে গেছেন এই মহান তারকা। মুম্বাইয়ের জুহুতে নিজ বাসায় আজ সকালে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। আগামী ৮ ডিসেম্বর ৯০ বছরে পা দিতেন ধর্মেন্দ্র। কিন্তু ধর্মেন্দ্রর পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর মৃত্যুকে ঘিরে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
ধর্মেন্দ্রর মৃত্যুতে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে ভারতীয় চলচ্চিত্র অঙ্গনে। মুম্বাইয়ের পবন হংসে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হচ্ছে। ভাইরাল হওয়া বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা গেছে, অমিতাভ বচ্চন, অভিষেক বচ্চন, অক্ষয় কুমার, অনিল কাপুর, সঞ্জয় দত্ত, আমির খান, সালমান খানসহ আরও অনেক বলিউড তারকা তাঁকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে পবন হংসে গিয়েছেন। হেমা মালিনী, এষা দেওলসহ দেওল পরিবারের সবাই এখন সেখানে উপস্থিত আছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং মোদি থেকে বলিউড তারকা করণ জোহর, কারিনা কাপুর খান, বোমান ইরানি, অনন্যা পান্ডেসহ আরও অনেকে শোক প্রকাশ করেছেন।
সম্প্রতি ধর্মেন্দ্রর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে। আজ তক, ইন্ডিয়া টুডে, ইকোনমিক টাইমসসহ একাধিক গণমাধ্যমে মৃত্যুর খবর প্রকাশ করে। এমনকি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজনাথ সিং, চিত্রনাট্যকার জাভেদ আখতার, অভিনেতা কে কে মেনন, চিরঞ্জীবীসহ অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে পোস্ট করেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই ধর্মেন্দ্র–হেমা মালিনীর মেয়ে এষা দেওল এক্সে পোস্ট করে জানান, ‘বাবার মৃত্যুর খবরটি গুজব। তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল।’
এই পোস্টের পর অনেকেই তাঁদের আগের টুইট মুছে ফেলেন। হেমা মালিনীও পরবর্তী এক পোস্টে ক্ষোভ প্রকাশ করে লেখেন, ‘যা ঘটছে, তা ক্ষমার অযোগ্য! একজন মানুষ চিকিৎসাধীন, তাঁকে নিয়ে ভুয়া খবর ছড়ানো অত্যন্ত অসম্মানজনক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ।’
তবে সেই গুজবের কিছুদিন পরেই আসে সত্য খবর—ধর্মেন্দ্র আর নেই। ঘনিষ্ঠ সূত্রে নিশ্চিত করা হয়, রাতে তাঁর শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। শেষ পর্যন্ত চিকিৎসকেরা তাঁকে বাঁচাতে পারেননি।
১৯৩৫ সালে পাঞ্জাবের লুধিয়ানায় জন্ম নেওয়া ধর্মেন্দ্রর প্রকৃত নাম ধর্মসিং দেওল। দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান হয়েও ছোটবেলা থেকেই সিনেমার প্রতি ছিল প্রবল টান। ১৯৬০ সালে ফিল্মফেয়ার ট্যালেন্ট প্রতিযোগিতায় জিতে তাঁর মুম্বাই আগমন। সেখান থেকেই শুরু ইতিহাস।
‘ফুল অউর পাথর’ (১৯৬৬) ধর্মেন্দ্রকে একঝটকায় বলিউডের ‘হি-ম্যান’ বানায়। পরের দুই দশকজুড়ে তিনি হয়ে ওঠেন হিন্দি সিনেমার সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়ক। ‘শোলে’, ‘চুপকে চুপকে’, ‘ধর্মবীর’, ‘দোস্ত’, ‘আনপড়’, ‘মেরা গাঁও মেরা দেশ’—প্রতিটি ছবিতেই তিনি নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করেছেন।
হেমা মালিনীর সঙ্গে জীবন
ধর্মেন্দ্রর জীবনের বড় অধ্যায় তাঁর সহ–অভিনেত্রী ও পরবর্তী সময়ে স্ত্রী হেমা মালিনীকে ঘিরে। ১৯৮০ সালে তাঁদের বিয়ে হয়, যা বলিউডের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাগুলোর একটি। একসঙ্গে তাঁরা কাজ করেছেন ৩০টির বেশি ছবিতে। ‘সীতা অউর গীতা’, ‘ড্রিমগার্ল’, ‘শরিফ বদমাশ’, ‘জুগনু’, ‘দোস্ত’—সবই আজও দর্শকের কাছে কালজয়ী।
প্রথম স্ত্রী প্রকাশ কৌরের সংসার থেকেও ধর্মেন্দ্রর দুই ছেলে সানি ও ববি দেওল—দুজনেই এখন বলিউডের পরিচিত মুখ। ধর্মেন্দ্রর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই ভারতজুড়ে অনুরাগীদের মধ্যে শোকের ঢল নেমেছে। বহু প্রজন্মের দর্শক যাঁর হাসি, সংলাপ ও পর্দার ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ ছিলেন, সেই ধর্মেন্দ্র আজ ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নিলেন বলিউডের প্রথম ‘হি-ম্যান’ হয়ে।










Discussion about this post