নিজস্ব প্রতিবেদক
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় যেসব রাজনৈতিক দল গণহত্যায় যুক্ত ছিল দল হিসেবে তাদের বিচার চেয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
গণহত্যার বিচারের ক্ষেত্রে এনসিপি একপাক্ষিক অবস্থান নিতে না পারার কথাও বলেছেন তিনি।
সোমবার রাতে এনসিপি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নাসীরুদ্দীন এ কথা বলেন।
২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থান দমানোর চেষ্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধের এক মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের উদ্যোগের কথাও সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে। বিচার না হওয়া পর্যন্ত ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ ও তার সব সংগঠনের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
তার আগে একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে এই ট্রাইব্যুনালের রায়ে জামায়াতে ইসলামীর কয়েকজন নেতার ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে বিগত আওয়ামী লীগের আমলে। দল হিসেবেও জামায়াতের বিচার প্রক্রিয়া শুরু আলোচনা চলছিল তখন।
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন বলেন, “প্রশাসনকে হুমকি দিয়ে একটি দলের ‘আন্ডারে’ নেওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা সেখানে প্রশ্ন রাখবো। শেখ হাসিনার ফাঁসির রায় হয়েছে, আমরা দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগের বিচারের জন্য গণমিছিল করেছি।
“একাত্তর সালে কী বাংলাদেশে ‘জেনোসাইড’ হয়নি? ‘জেনোসাইডের’ জন্য তো অনেক পক্ষ দায়ী ছিল, ‘জেনোসাইডের’ অভিশাপকে তো আপনি এড়াতে পারবেন না। আমরা চব্বিশের ‘জেনোসাইডের’ জন্য যেমন দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার চাচ্ছি। একাত্তর সালে যেসব দল ‘জেনোসাইডের’ সাথে সম্পৃক্ত ছিল আমরা তাদেরও বিচার চাচ্ছি। আমরা একপাক্ষিক হতে পারবো না।”
বংশ পরিচয় নিয়ে বিএনপির এক প্রার্থীর বক্তব্যের জবাবে এনসিপির এই নেতা বলেন, “দেবীদ্বারে হাসনাত আব্দুল্লাহর বংশ পরিচয় নিয়ে বিএনপির এক প্রার্থী কথা বলেছেন। যাদের বংশ পরিচয় চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, যাদের বংশের সাথে লেগে রয়েছে দুর্নীতি, তারা আবার আমাদের বংশ পরিচয় জিজ্ঞেস করেন।
“আমাদের বংশ পরিচয় তাদেরকে জানানোর জন্য স্পষ্ট বলছি, আমরা বাংলাদেশে একটি সংস্কারের বংশ চাই। আমাদের বংশ পরিচয় হল যারা বাংলাদেশে চাঁদাবাজি চায় না, দুর্নীতি চায় না।”
দুই দিনব্যাপী এনসিপির মনোনয়নপ্রত্যাশিদের সাক্ষাৎকারের বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য জানাতে শহীদ আবু সাঈদ কনভেনশন সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে দলটি।
এনসিপি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে তুলে ধরতে চেয়েছে দাবি করে নাসীরুদ্দীন বলেন, “আমরা দেখেছি যদি কেউ মগবাজার বা গুলশানে হাজিরা দেয়, তাহলে তার ‘সিট কনফার্ম’ হয়ে যায়। আমাদের এখানে নিম্ন মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত সবাই আবেদন করেছে। আমাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে।”
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা বলেন, “ভোট দিতে গেলে মনে হয় মন্দের ভালো একজনকে দিতে হবে। কিন্তু আমরা অনেক মানুষকে পেয়েছি, যাদেরকে মানুষ আনন্দের সঙ্গে ভোট দিতে পারবে।”
এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, “আশা করি শুধু জাতীয় গণতন্ত্র না, আমাদের দলগুলোর মধ্যেও গণতন্ত্র থাকবে। আমাদের অনেক দল আছে সারাদিন গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে, কিন্তু নিজের দলের মধ্যে কোন কাউন্সিল নাই। দলীয় স্বৈরতন্ত্র রেখে জাতীয়ভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা কখনোই সম্ভব না। দলীয় পরিবারতন্ত্র রেখে জাতীয়ভাবে গণতন্ত্র কায়েম করবে… এগুলো হচ্ছে এক ধরণের ‘হিপোক্রেসি’।”
অতীতের ‘প্রচলিত রাজনীতি’ কঠিন হয়ে যাবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “যারা ভাবছেন পেশী শক্তি, ‘মানি, ম্যান, মিডিয়া’ নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে ভোট নিয়ন্ত্রণ করবেন তারা বোকার স্বর্গে বসবাস করছেন।
“আমরা শুনছি বিভিন্ন জায়গায় বক্তব্য দিচ্ছে প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, ডিসিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তো ডিসি-এসপি এগুলা তো ভাগাভাগি চলছে এখন। মধ্যরাতে ডিসি পুনর্বণ্টন হয়। এগুলো থেকে বের হয়ে আসতে হবে।”










Discussion about this post