নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকার পাইকারী বাজার তেজগাঁও ও চট্টগ্রামে আড়তে ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা।
ফার্মের মুরগির ডিমের বাড়তি দামের মধ্যে বাজারে ডিমের সরবরাহে সমস্যা দেখা দিয়েছে। ফলে রোববার রাতে তেজগাঁও আড়তে ডিমের কোনো ট্রাক আসেনি। শনিবার রাতেও খুব কম পরিমাণে ডিম বিক্রি করেছেন আড়তের বিক্রেতারা।
তেজগাঁওয়ের ব্যবসায়ীরা বলেন, সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে তাদের ডিম কিনতে হচ্ছে। কিন্তু কেনা দামের ভিত্তিতে তা বিক্রি করতে পারছেন না। সরকার নির্ধারিত দাম নিশ্চিত করতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। তাই ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান ও জরিমানার ভয়ে তারা মুরগির ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। ফলে গতকাল রাতে তেজগাঁওয়ে ডিমের কোনো গাড়ি না আসায় কোনো ডিমও বিক্রি হয়নি।
রাজধানীর কয়েকটি খুচরা বাজারে সোমবার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব বাজারে ফার্মের মুরগির এক ডজন বাদামি ডিম ১৮০ টাকা ও সাদা ডিম ১৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ডিমের সরবরাহ তুলনামূলক কম বলেও জানান বিক্রেতারা।
তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আমানত উল্লাহ জানান, সরকার খুচরা পর্যায়ে ডিমের যে দাম নির্ধারণ করেছে, তার চেয়ে বেশি দাম দিয়ে খামারিদের কাছ থেকে ডিম কিনছেন তারা। এ কারণে বিক্রিও করতে হচ্ছে বাড়তি দামে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, গতকাল রাতে তারা পাইকারিতে ডিম বিক্রি করেছেন প্রতিটি ১২ টাকা ৫০ পয়সা দরে। এই ডিম তারা কিনেছেন ১২ টাকা থেকে ১২ টাকা ২০ পয়সা দরে।
আমানত উল্লাহ আরও জানান, তেজগাঁওয়ে দৈনিক ১৪-১৫ লাখ ডিম আসে। ঢাকায় ডিমের চাহিদা এক কোটি। তেজগাঁওয়ের বাইরে কিছু জায়গায় অনেকে ঠিকই উচ্চ দামে ডিম বিক্রি করছেন। কিন্তু বাড়তি দামে কেনাবেচার কারণে শুধু তাদের দায়ী করা হচ্ছে, অভিযান চালানো হচ্ছে। এ জন্য ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছেন তারা।
অন্যদিকে, সরকারের বেঁধে দেয়া দামে বিক্রি করতে না পারায় চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী বাজারের ডিমের আড়তে ডিম বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। রোববার থেকেই ব্যবসায়ীরা আড়ত বন্ধ রেখেছেন বলে জানিয়েছেন পাহাড়তলী ডিম আড়তদার সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল শুক্কর লিটন।
আবদুল শুক্কর লিটন বলেন, এ সমস্যার মূলে রয়েছে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা ব্যাংক লেনদেনে সরকার নির্ধারিত টাকা আদায় করলেও নগদে আদায় করছেন বাড়তি দাম। এ অবস্থায় বাড়তি দামে ডিম কিনে তা সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করা সম্ভব নয়। সরকারের উচিত কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকার নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রিতে বাধ্য করা।
এদিকে আড়তে ডিম বিক্রি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভোক্তা পর্যায়ে ডিমের দাম আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নগরের বহদ্দারহাট বাজারে বাদামি ডিম বিক্রি হচ্ছে ডজনপ্রতি ১৭০ টাকা আর সাদা ডিমের ডজন ১৬৫ টাকায়।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, আড়ত বন্ধ রাখলে খুচরা পর্যায়ে দামে প্রভাব পড়বে। এ সময় প্রশাসন, খুচরা-পাইকারি, মধ্যস্বত্বভোগী ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে একসঙ্গে বসতে হবে। আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে সমাধানে আসা জরুরি।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর ফার্মের মুরগির ডিম এবং ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকারি সংস্থা কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। বেঁধে দেওয়া দাম অনুসারে, উৎপাদক পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১১ টাকা ১ পয়সা ও খুচরা পর্যায়ে তা ১১ টাকা ৮৭ পয়সা হওয়ার কথা। সে হিসাবে খুচরা পর্যায়ে এক ডজন ডিমের দাম হয় ১৪২ টাকা। কিন্তু খুচরা বাজারে এখন ১৭০-১৮০ টাকায় ডিম বিক্রি হচ্ছে। ডিমের এমন উচ্চ দাম বেশ কিছুদিন ধরে চলছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর জানিয়েছে, ডিম উৎপাদক ও পাইকারি ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেই তারা ডিমের ‘যৌক্তিক দাম’ নির্ধারণ করেছিল।
Discussion about this post